অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম : প্রস্তুতি নেই অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের - দৈনিকশিক্ষা

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম : প্রস্তুতি নেই অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কোভিড-১৯-এর ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অন্য সব খাতের মতো অনিশ্চয়তায় দেশের শিক্ষা খাতও। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাস টিভিতে সম্প্রচার হচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে নিচ্ছে। তবে স্থবির হয়ে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই বলছে, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা এখনো প্রস্তুত নয়। শনিবার (২৩ মে) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে আরও জানা যায় সাইফ সুজন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বব্যাপীই বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় অনলাইননির্ভর কার্যক্রমের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিয়ে খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের আগামী শিক্ষাবর্ষের ক্লাস-পরীক্ষাও অনলাইনেই নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গ্রীষ্ম কিংবা শীতকালীন অবকাশের মতোই বন্ধ দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

সম্প্রতি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি)। চিঠিতে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে কিনা, কতগুলো বিভাগে নেয়া হচ্ছে ও ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চিঠির জবাব দেয় ইউজিসিকে। এর মধ্যে সাতটি অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে বলে মেইলে উল্লেখ করে। সে হিসেবে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অংশই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, পাঠদান প্রদান ও গ্রহণ দুভাগেই কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো ও লজিস্টিকস আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ও সক্ষমতা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব প্রস্তুতি না থাকার কারণেই তারা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যেতে পারছে না।

করোনা পরিস্থিতিতে দুই মাস বন্ধ থাকার পরও এখনো অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেনি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি ডিন অফিসগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে একটি জরিপ চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষায় যুক্ত হতে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানান।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে কিছু আইটি ইনফ্রাস্টাকচার ও লজিস্টিকস আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। আর ডিন অফিসের মাধ্যমে করা জরিপে সিংহভাগ শিক্ষার্থীই তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তাই আমাদের পাঠদান ও পাঠগ্রহণ দুই পক্ষের বিষয়গুলোকেই বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন বিশেষ করে ল্যাবরেটরি বেজড অ্যাক্টিভিটিগুলো নিয়েও আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও সামনে এসছে, সেটি হচ্ছে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা। সেটিও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

সীমিত পরিসরে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ও ডাটা ফ্যাসিলিটির বিষয়টি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, অনলাইনে পাঠদানের ক্ষেত্রে কিন্তু দুটি ভাগ। একটি হচ্ছে ডেলিভারি এন্ডে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খুব বেশি সমস্যা নেই, এজন্য প্রস্তুতির জন্য দুই সপ্তাহের বেশি লাগবে না। তবে মূল সমস্যাটি হলো শিক্ষার্থীদের দিক থেকে। তাদের অনেকেরই ডিভাইস নেই। ইন্টারনেট ডাটা কেনার সামর্থ্য নেই। আবার অনেকের এলাকায় ইন্টারনেটের গতি ভালো না। এক্ষেত্রে যেসব শিক্ষার্থীর আর্থিক সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ডিভাইসের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি টেলকো কোম্পানিগুলো শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার জন্য ফ্রি ইন্টারনেট সেবা দিলে খুব ভালো হয়।

করোনার ছুটি ঘোষণার পর পরই গত ২৩ মার্চ করোনার বন্ধের সময়টাতে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়ে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। কমিশনের দেয়া চিঠিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষকদের অনলাইনে পাঠদান চালাতে উৎসাহ দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) ডাটা সেন্টারের জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিনা খরচে এ অনলাইন কার্যক্রম চালানো সম্ভব। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য শিক্ষকদের বিডিরেনের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়। এ ব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ডেস্কটপ, ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারঅ্যাক্টিভ শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্যই আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে আহ্বান জানিয়েছি অনলাইনে ক্লাস নেয়ার জন্য। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সহায়তা চেয়েছে, আমরা সাপোর্ট করেছি। আসলে সবার তো প্রস্তুতি এক নয়। আবার শিক্ষার্থী সংখ্যাও এক নয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের পরামর্শ থাকবে, যেন সবাই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে।

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039842128753662