অপেক্ষায় ৪০ লাখ চাকরিপ্রার্থী : স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে শঙ্কা - দৈনিকশিক্ষা

অপেক্ষায় ৪০ লাখ চাকরিপ্রার্থী : স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে শঙ্কা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারি চাকরিতে শূন্য পদ বেশ কিছুদিন ধরে বেড়েই চলছিল। করোনাকালে সেটি আরও বেড়েছে। মহামারির কারণে নিয়োগ পরীক্ষা ছয় মাস ধরে বন্ধ ছিল। অল্পসংখ্যক পদের জন্য জারি করা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি-গুলোতে সম্প্রতি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিপুলসংখ্যক পদের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পদগুলোতে নিয়োগ পেতে প্রতীক্ষায় আছেন প্রায় ৪০ লাখ চাকরিপ্রার্থী।

যেমন ৪১তম বিসিএস, রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংক, খাদ্য, সমাজসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধি-দপ্তরসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিটি পরীক্ষায় রয়েছেন লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। ফলে এসব চাকরির পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেনি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। বুধবার (৭ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন দেলওয়ার হোসেন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ফলে প্রতিনিয়তই সরকারি শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না থাকায় তাদের দিন কাটছে হতাশা ও দুশ্চিন্তায়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগের দায়িত্ব সংশ্নিষ্ট সরকারি দপ্তরের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিয়োগের দায়িত্ব ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি)। নিয়োগ বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়া এবং মামলা জটিলতাসহ নানা কারণে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থায় শূন্য পদের ছড়াছড়ি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, স্বাভাবিক কাজকর্মও ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, সরকার অনুমোদিত ১৮ লাখ পদের মধ্যে কয়েক মাস আগেও প্রায় চার লাখ পদই শূন্য ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। এর মধ্যে গত মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি ছিল প্রায় শূন্য পর্যায়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী

ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত সরকারি পদ সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিয়োগ সম্পন্ন হয় না। চাকরির পদ শূন্য হলে সেখানে নিয়োগ দিতে কিছু সময় লাগে। করোনার কারণেও অনেক নিয়োগ আটকে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব শূন্যপদ দ্রুত পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে সময় লাগে তা আরও কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। করোনার সময় ডাক্তার, নার্সসহ মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে হয়েছে। আগামী দিনে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করব আমরা।

পিএসসির সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছোটখাটো নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হলেও তারা এখনও বিসিএসের মতো বৃহৎ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছেন না। কারণ, এ জন্য বিপুলসংখ্যক কেন্দ্রসহ যে প্রস্তুতি দরকার, তা নেই। গত জানুয়ারিতে ৪১তম বিসিএসে চার লাখ ৭৫ হাজার পরীক্ষার্থী আবেদন করলেও এ পরীক্ষা শিগগিরই নেওয়ার সুযোগ নেই। ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এ বছরের এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল আটকে আছে করোনার কারণে।

এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের এক হাজার ১৬৬টি পদের বিপরীতে প্রায় ১৪ লাখ চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষা আটকে আছে। এই নিয়োগ পরীক্ষাটিও লকডাউনের ঠিক আগে গত ২০ মার্চ নেওয়ার কথা ছিল।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৪৬৩টি সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) পদের বিপরীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। এ পদে চাকরিপ্রার্থী ছয় লাখ ৬২ হাজার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ১৪১টি পদে এমসিকিউ পরীক্ষার পর দুই লাখের বেশি প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার অপেক্ষায় বসে আছেন। এভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের অনেক পদে পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এসব পদের পরীক্ষা শিগগির শুরু করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি খুঁজছেন সংশ্নিষ্টরা।

বিসিএসের বাইরে সবচেয়ে বড় নিয়োগ হয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে। বিভিন্ন ব্যাংকের চার হাজার ৭৫০টি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করে পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন ছয় লাখের বেশি প্রার্থী। এভাবে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী নিয়োগ পরীক্ষার অপেক্ষায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয় এবং বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, জনতা ব্যাংকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে দুই-একটি পদের বিপরীতে কিছুসংখ্যক প্রার্থীর নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব আরিফ হোসেন খান বলেন, ধীরে ধীরে অল্পসংখ্যক পদের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যে সব পরীক্ষা শেষ করার পরিকল্পনা আছে। তবে বেশিসংখ্যক পদের পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না, স্বাস্থ্যবিধি মানতে গেলে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।

পিএসসির একাধিক সদস্য বলেন, চার-পাঁচ লাখ ছেলেমেয়ের বিসিএস দেওয়ার জন্য আট বিভাগে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দরকার। এটি বিপুল কর্মযজ্ঞ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তো বন্ধ। তারা না খুললে, যথাযথ প্রস্তুতি না নিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে, অল্প প্রার্থী আছে এমন বিভিন্ন নন-ক্যাডারের কিছু পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুক্তারুল ইসলাম জানান, বিসিএস ও ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু পদে আবেদন করে এখন পরীক্ষার জন্য বসে আছেন। করোনার কারণে সবকিছু আটকে আছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান, দুলাল রাব্বানীসহ কয়েকজন বলেন, তাদের সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স প্রায় শেষ পর্যায়ে, কিন্তু নতুন আবেদন করার মতো বিজ্ঞপ্তি পাচ্ছেন না। এই জটিলতা দ্রুত কাটানোর দাবি জানান তারা। কিছুটা হতাশার সুরে তারা বলেন, একটি চাকরি মানে একজনের বিষয় নয়। এর সঙ্গে গোটা পরিবারের সুখ-শান্তি জড়িয়ে থাকে। কিন্তু লেখাপড়া শেষ করা শিক্ষার্থীদের কষ্ট কেউ বুঝতে চায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এভাবে কতদিন চলবে, তা আমরা কেউ জানি না। তাই চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো কোনোভাবেই আটকে রাখা ঠিক হবে না। কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে চাকরির বিজ্ঞপ্তি স্থগিত না রাখে, এ জন্য সরকারকে নির্দেশ দিতে হবে। সরকার কিছু শিক্ষার্থীর জন্য বয়সে ছাড় দিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি নিয়মিত প্রকাশ না হলে আরও অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে। তিনি বলেন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। তাতে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করবে। পরে যখনই পরীক্ষা হবে তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এতে তাদের মধ্যে যে উদ্বেগ রয়েছে, সেটি কেটে যাবে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, এক মাসের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কয়েক ভাগে খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে। পরীক্ষা কেন্দ্র ঠিক করার জন্য ইডেন মহিলা কলেজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরীক্ষা ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা করছেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের ৬৪ জেলায় এই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডিজিকে বলা হয়েছে।

বেসরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিও ব্যাপক কমেছে :করোনাকালে সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া ব্যাপক কমেছে। চাকরির খবরাখবরের জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিডিজবস সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল ও মে মাসে মার্চের তুলনায় ৮০ শতাংশ চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে। জুন-জুলাই মাসে এ পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলেও জুন-জুলাই মাসে ৫০ শতাংশ এবং আগস্ট মাসে ৩০ শতাংশ চাকরির বিজ্ঞপ্তি কম হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখনও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞাপন আসছে। বিডিজবসের পরিচালক প্রকাশ রায় চৌধুরী বলেন, এখন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক খুঁজছে। নতুন চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরির খবর তেমন একটা নেই।

ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038948059082031