ঢাকার ধামরাইয়ের রোয়াইল গ্রামে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু কলেজ’। কলেজটি ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। ছয় বছরের মাথায় সরকার বদলের পর ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি সরকার বন্ধ করে দেয় কলেজটি। এরপর থেকে অবজ্ঞা-অবহেলায় ১৮ বছর পার করছে জাতির পিতার নামে নামকরণ করা এই কলেজটি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ক্ষমতা পরিবর্তনের পর তিনবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাই এ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীনই বন্ধ থাকা কলেজটির পুনরায় চালু করার দাবি তাদের।
জানা যায়, ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের পরে জমিদাররা চলে যাওয়ার পর রোয়াইলের কিছু স্থানী ব্যক্তি নিজেদের নামে কলেজের জমিটি লিজ নেয়। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই সময়ের সংসদ সদস্য বেনজির আহম্মেদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রোয়াইল গ্রামে একটি কলেজ করবেন। এসময় জমিদাতারা কলেজ করার জন্য তাদের জমিগুলো স্বেচ্ছায় দিয়েছেন। পরে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কলেজটি চালু করা হয়েছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কলেজের ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কলেজের সামনের দেয়ালে বড় করে লেখা রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কলেজ’। এই লেখাটাই একমাত্র বোঝার উপায় যে এখানে একটি কলেজ ছিল বা আছে। কলেজটির কক্ষ ছাদ ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া কক্ষের দেয়াল জড়িয়ে জন্ম নিয়েছে বটগাছ-কচুগাছসহ নানা আগাছা।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রাহমান বলেন, জাতির জনকের নামে স্থাপিত কলেজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের অনেক কষ্ট করে অন্য জায়গায় গিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ছেলেরা দূরে গিয়ে পড়ালেখা করলেও বন্ধ হয়ে গেছে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে কলেজটির কার্যক্রম আবারও শুরু করার দাবি করছি।
কলেজটি হওয়ার পর রোয়াইল এলাকার আব্দুল হালিমের ছেলে-মেয়ে দুজনই এখানে লেখাপড়া করেছে। কিন্তু কলেজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার আরেক মেয়েকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সাভারে গিয়ে পড়তে হচ্ছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দুই ছেলে-মেয়ে এখানে পড়ছে। সেই সময়ে পড়াশুনাও ভালো ছিল। দুই-তিন বছর পর কলেজটি বন্ধ হয়ে গেল। ছোট মেয়েকে সাভার কলেজে পড়াতে হচ্ছে। সাভারে প্রতিদিন যাতায়াতে নানা সমস্যা পোহাতে হয় মেয়েটাকে। কলেজেটা আজ থাকলে এমন সমস্যায় পড়তে হতো না।
কলেজটির জমি দান করেছেন আব্দুল করিম খানের পূর্ব পুরুষগণ। তিনি বলেন, আমার বাবা-দাদারা সেই সময়ই জমিগুলো কিনে নেন। তারপর জমিগুলোর ভেতর থেকে কিছু জমি কলেজের জন্য দান করেন। এই জমিটিতে এখনো কলেজের ভাঙা ভবন দাঁড়িয়ে আছে। আমরা চাই কলেজটি আবারও চালু হোক। কলেজটি চালু করলে আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েদের আর দূরদূরান্তরে পড়াশোনার জন্য যেতে হবে না।
রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, নানা কারণে অনেক দিন আগেই এই কলেজটি বন্ধ হয়েছে। এরপর থেকে রোয়াইলের দক্ষিণ অঞ্চলে কোনো কলেজ নেই। আসলেই দক্ষিণ অঞ্চলে একটি কলেজ প্রয়োজন সেটা এমপিকে বলেছি। এটা আমাদের দাবি আছে। এমপি মহোদয় এটির দ্বায়িত্ব নিলে আমরা এলাকাবাসী তার পাশে আছি।
ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল ইসলাম বলেন, আমি এ উপজেলায় কিছুদিন আগে এসেছি। যতটুকু শুনেছি একসময় ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু কলেজ পরিচালনা করা হলেও এর কোনো নিবন্ধন নেই। তবে স্থানীয় গ্রামবাসী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কলেজটি পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নিলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।