কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়ায় ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় তা বিলুপ্ত হয়ে যায় ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে । কিন্তু কয়েক বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে যাচ্ছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সরকারি বই।
এলাকাবাসী এ বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং অস্তিত্বহীন ওই মাদরাসায় সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক।
যিনি সভাপতির স্ত্রী। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, পৌর সদরের আনোয়ারখালী এলাকায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় আনোয়ারখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা। কিন্তু কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারপর সেখানে প্রতিষ্ঠা হয় আনোয়ারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়।
২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি সরকারের সময় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাএমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দিলে তড়িঘড়ি করে ফের একটি ঘর করে কার্যক্রম শুরু করা হয়।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় মাদরাসা ঘরসহ ফার্নিচার বিক্রি করে চলে যায় আনোয়ারখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাকর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে ওই মাদরাসার নামে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রতিবছর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি বই নিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
২০১৭ ও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেয়া এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, উপজেলার পোড়াবাড়িয়া গ্রামের মো. নেকাব আলী, মাইজ উদ্দিন ও কোষাকান্দা গ্রামের বিল্লাল উদ্দিন ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন।
সেখানে সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে এলাকাবাসীর দেয়া ঘরসহ ফার্নিচার বিক্রি করে দেয়া হয়। পরে দাতাদের কেউ কেউ জমি বিক্রি করে দিয়েছেন আবার কেউ আনোয়ারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আবার কেউ ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত নূরানিয়া হাফিজিয়া ও ফুরকানিয়া মাদরাসায় জমি দান করেছেন।
এদিকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ওই আগের জায়গায় মাদরাসাটি আছে মর্মে স্বাক্ষর জাল করে আবারও শিক্ষা অফিসে কাগজপত্র দাখিল করেন ওই তিন শিক্ষক। তারপর থেকে প্রতিবছর সরকারি বই যাচ্ছে সেই অস্তিত্বহীন মাদরাসাটিতে।
১৩ জানুয়ারি ওই মাদরাসায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন প্রধান শিক্ষকও। যিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ফিরোজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাতা সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, ‘আমি দু’বার অভিযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করে অতি গোপনে আনোয়ারখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কা রয়েছে।’ ওই স্থানে মাদরাসা আছে জানিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম সাইফুল ইসলাম বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আনোয়ারখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাটির অস্তিত্ব কোথায় সেটা জানার জন্য যোগাযোগ করা হয় সহকারী শিক্ষক দাবিদার নেকাবর আলীর সঙ্গে। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে তিনি সব প্রশ্নের সমাধান নিতে বললেন সভাপতি ফিরোজের কাছ থেকে। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ফিরোজ বলেন, এ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১০ জন ও গত বছর ১৬ জন ছাত্র পাশ করেছে। রেজুলেশনের মাধ্যমে সবই হচ্ছে।
তবে এ প্রতিষ্ঠানটি কোথায় আছে সেটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আনোয়ারখালী মৌজার কোনো এক জায়গায় আছে। সেটা আপনি খুঁজে বের করে নিন’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান জানান, অভিযোগের বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জাল দলিল দিয়ে কাগজপত্র ব্যবহার করে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।