আওয়ামীবিরোধী জোটে ছাত্রলীগের ডাকসাটইটে অনেকেই - দৈনিকশিক্ষা

আওয়ামীবিরোধী জোটে ছাত্রলীগের ডাকসাটইটে অনেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ছাত্রলীগ থেকে যেমন বীর সেনানীর জন্ম হয়, তেমনই আবার বিশ্বাসঘাতকেরও জন্ম হয় ছাত্রলীগের ২৭তম সম্মেলনে এ কথাটি বলেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ছাত্রলীগের অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি মোশতাকের সরকারে যোগ দিয়েছিল। কেউ আলাদা দল গড়েছে। ছাত্রলীগের হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই এখন আওয়ামীবিরোধী জোটে।

১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্বে থাকা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন সত্তরের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু তাকে প্রথম সংসদের চিফ হুইপ করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী এবং তার সঙ্গে মিলে ডেমোক্র্যাটিক লীগ গঠন করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। পরবর্তী সময়ে জেনারেল এরশাদের দলে যোগ দিয়ে উপপ্রধানমন্ত্রী হন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব হওয়া শাহ মোয়াজ্জেম এরশাদকে ত্যাগ করে পাল্টা জাতীয় পার্টি গঠন করেন এবং সর্বশেষ বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগের সভাপতি কেএম ওবায়দুর রহমান বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। জেনারেল জিয়ার আমলে মন্ত্রী এবং পরে খালেদা জিয়ার আমলে বিএনপির মহাসচিব পদ থেকে বহিষ্কৃত হন। জনতা দল নামে দল গঠন করলেও ’৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপিতে আবার বিলীন হন। তার স্ত্রী-কন্যা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগের সভাপতি হন ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। ডাকসুর ভিপি ফেরদৌস আহমেদ  কোরেশী আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে দূরে সরে পড়েন স্বাধীনতার আগেই। জিয়ার শাসনামলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হলেও লাইমলাইটে আসতে পারেননি। ওয়ান-ইলেভেনে একটি দল (পিডিপি) গঠনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ৩১ আগস্ট এ রাজনীতিক মারা যান।

’৬৯-এর শেষদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি হন ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আ স ম আব্দুর রব। আ স ম আব্দুর রব সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ডাকসুর ভিপি হন। স্বাধীনতা-উত্তর সিরাজুল আলম খানের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেন এবং ছাত্রলীগের পাল্টা নেতৃত্ব সৃষ্টি করেন। তিনি জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ’৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এরশাদের ভোটারবিহীন নির্বাচনে গিয়ে বিরোধীদলের নেতা হন। ’৯৬ খ্রিষ্টাব্দে শেখ হাসিনার ঐকমত্যের সরকারের মন্ত্রী হন। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত জেএসডি নিয়ে তিনি সরকারবিরোধী জোট ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে রয়েছেন। এই জোটের অন্যতম নেতা তিনি।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। নানা ‘মান-অভিমান’ নিয়ে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। নূরে আলম সিদ্দিকীর সময়ে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাজাহান সিরাজ। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৬ মাসের মাথায় ছাত্রলীগে ভাঙন দেখা দেয়। ‘মুজিববাদী’ হিসেবে পরিচিত অংশ নিয়ে থেকে যান নূরে আলম সিদ্দিকী। আর শাজাহান সিরাজের অংশটি ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী’পন্থি হিসেবে পরিচিত হয়। এই অংশটি পরবর্তী সময়ে জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগ নামে আত্মপ্রকাশ করে।

শাজাহান সিরাজ জাসদের টিকেটে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর যোগ দেন বিএনপিতে। অষ্টম সংসদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই তিনি মারা যান। শাজাহান সিরাজ ওই সময় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ইসমাত কাদির গামা সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবস্থান করে নিতে পারেননি।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগের সভাপতি হন শেখ শহীদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হন এমএ রশীদ। শেখ শহীদুল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। পরে জেনারেল এরশাদের মন্ত্রী হন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপির তিনি মহাসচিব। এমএ রশীদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবস্থান পাননি।

’৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি হন মনিরুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শফিউল আলম প্রধান। মনিরুল হক চৌধুরী এরশাদের জাতীয় পার্টির চিফ হুইপ ছিলেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিএনপির নেতা। মরহুম শফিউল আলম প্রধান ’৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সংঘটিত সেভেন মার্ডারের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন এবং ১৪ বছর সাজা লাভ করেন। জেনারেল জিয়ার আমলে মুক্তি পেয়ে জাগপা গঠন করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তার দল নিয়ে বিএনপি জোটে ছিলেন।

১৯৮৫-৮৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের পর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে তিনিই প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। এর আগে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সামনের সারির প্রতিবাদী মনসুর এখন আওয়ামীবিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সারির নেতা।

১৯৮৮-৯২ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে যোগ দেন বিএনপিতে। তিনি বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা।

১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন এমএ আউয়াল। দুর্নীতির অভিযোগে আদমজী জুট মিলের ব্যবস্থাপকের পদ থেকে বরখাস্ত হন। পরে তিনি জাসদে যোগ দেন এবং ’৭৩-এর নির্বাচনে ঢাকার একটি আসনে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে জামানত হারান।

সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050158500671387