অন্ধত্ব, অঙ্গহানি, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা ও অকাল মৃত্যুও অন্যতম কারণ ডায়াবেটিকস। সব বয়সের মানুষই এখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বে স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ কোটিরও বেশি, যা তিন দশক আগের তুলনায় চার গুণ বেশি।
এই রোগে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে প্রায় এক কোটি, যা বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ রোগী। দেশে প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এমনকি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এমন মানুষদের অর্ধেককেই (৫০ শতাংশ) জানেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে।
বিশ্ব রোগ নিরাময় কেন্দ্রের মতে, এই শতকের মাঝামাঝিতে পৌঁছার আগেই বাংলাদেশে এটি মারাত্মক মহামারীরূপে দেখা দেবে। বাংলাদেশে এসব রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসা ব্যয়ভার মেটাতে অনেকেই দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে বা অস্বচ্ছল হয়ে পড়ছে। এ ছাড়াও পারিবারিক অন্যান্য অসুবিধা যেমন, কর্মঘণ্টা ও উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে জাতীয় বাজেট ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত নগরায়ন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, অধিক ওজন, কায়িক শ্রম কমে যাওয়াসহ নানা কারণে আনুপাতিক হারে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি হলো, এখানে অতি অল্প বয়সে মানুষ (ছেলেমেয়েরা) টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশের আরও একটি বড় ঝুঁকি হলো- বিপুল সংখ্যক গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগী, পৃথিবীতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বাংলাদেশে তুলনামূলক বেশি। ডায়াবেটিসের কারণে সমাজ হারাতে পারে কর্মক্ষম ও সম্ভাবনাময় এক তরুণ যুবক প্রজন্মকে। আরও যোগ হবে অন্ধত্ব, স্নায়ুর রোগ, কিডনি ও হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া, অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্ব ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাইবেটিকস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ খুব বেশি কঠিন নয়। এর চিকিৎসা ব্যয়বহুলও নয়। সামান্য উদ্যোগই এই রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই এ বিষয়ে সবার সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য জরুরিভিত্তিতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি সংগঠন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। দেশব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে রোগটি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারলে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ শওকত আলী বলেন, ডায়াবেটিস যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের এখনই এ রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তারা ডায়াবেটিসকে সুনিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মঠ জীবন নিশ্চিত করতে পারে।
ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল মিলনায়তনে বাডাসের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বাডাস সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, প্রধানত দু’ধরনের ডায়াবেটিসের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস যেহেতু বহুলাংশেই (৭০ শতাংশ পর্যন্ত ) প্রতিরোধযোগ্য।
এরফলে এখনই যদি রোগের প্রতিরোধ না করা যায় তাহলে এ সংখ্যা ২০৪০ খ্রিষ্টাব্দে নাগাদ প্রায় ৬৪ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাডাসের মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, ডারডেম জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ডায়াবেটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফারুক পাঠান, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।