আবরার একা মরেনি, আমাদের বিবেকেরও মৃত্যু ঘটেছে - দৈনিকশিক্ষা

আবরার একা মরেনি, আমাদের বিবেকেরও মৃত্যু ঘটেছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেমি আর তানিম নামের দুজন ছাত্র আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যায়। আবরার ১০১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র। তারপর আবরারকে ২০১১ নম্বর কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রহার করা হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ১১ জন জড়িত থাকার কথা বলে তাদেরকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। আবরারকে শিবির সন্দেহে এমনভাবে পেটানো হয় যে, তার মৃত্যুই ঘটে যায় তাতে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, আরও একটি মৃত্যুর কথা মনে পড়ছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় রড দিয়ে পিটিয়ে, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এবং ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী বিশ্বজিেক হত্যা করেছিল। সেসময় আমার মতো অনেকেই কামনা করেছিল—বিশ্বজিতের হত্যা দিয়েই যেন শেষ হয় রাজনৈতিক বর্বরতা, জাগ্রত হয় যেন বিবেক আর মনুষ্যত্বের রাজনীতি। কিন্তু সেই আশা যে পূরণ হয়নি তারই প্রমাণ আজকের আবরার হত্যাকাণ্ড।

অপরাধী তো যে-কেউ হতে পারে—শিবির হতে পারে, জঙ্গি হতে পারে, ছাত্ররাজনীতির নষ্ট ছেলেরা হতে পারে। তাদের অপরাধ করার প্রবণতা থাকতে পারে। কিন্তু তাদের হাত থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার কি কোনো মেকানিজম নেই আমাদের? তাই যদি হয়, তাহলে কোন ভরসায় বাবা-মা তাদের সন্তানদের তুলে দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে? ছাত্র হবে, কিন্তু পড়াশোনা করে জ্ঞান অর্জন করে তার প্রকাশ করতে পারবে না। স্বাধীন মতপ্রকাশ করলেই মহাবিপদ হতে পারে। সেই মত কার পছন্দ হলো আর কার অপছন্দ হলো, তার ওপর নির্ভর করবে তার বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা? এই সমাজে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে, এই রাষ্ট্রে কীভাবে বাবা-মা তার সন্তানকে নির্ভয়ে ছেড়ে দিতে পারে?

আবরার, তোমার প্রতি একটি শব্দও বলার মতো মনোবল নেই আমাদের। আমরা পরাজিত তোমার কাছে। আমরা পরাজিত আজকের এই সময়ের কাছে। তুমি শুধু একা মরোনি, আমাদের বিবেকও মরেছে। আমরা মনুষ্যত্ব হারিয়েছি। মানুষ বলার মতো অবশিষ্ট কিছু আছে কি না আমাদের মধ্যে, সেই প্রশ্নই জাগছে আজ করুণ সুরে। তুমি তো অন্ধকারে যাওনি, আমাদের সমাজটাকে অন্ধকারে যেতে তুমি প্রত্যক্ষ করেছো। তোমার জীবন ত্যাগের জন্য যতটুকু মায়া হচ্ছে, তার থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমাদের সামাজিক মৃত্যু হওয়ার কারণে। যে দশটি ছেলে তোমাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তারা তোমার মতো এমন একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। তারা বাইরে থেকে আসেনি। তোমার সঙ্গেই তারা পড়াশোনা করে। তোমার মতো একইভাবে শিক্ষা গ্রহণ করছে তারাও। তাদেরও মা আছে, বাবা আছে। তাহলে তাদের এমন দশার জন্য দায়ী কে? তাদের বাবা-মা? তাদের রাজনীতি? তাদের বিশ্ববিদ্যালয়? তাদের ব্যক্তিনষ্টচারিতা? কাকে দায়ী করব? একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী তারাও। কিন্তু তাদের কাজটি অনেক ঘৃণিত অপরাধীদের মতো। শিক্ষা, বিবেক, মনুষ্যত্ব, মমত্ববোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ সবগুলো তাদের মধ্যে থেকে উড়ে গেল কী করে? তারাই কি শুধু দায়ী? আমরা কি কেউ দায়ী নই? সমাজ কি দায়ী নয়? রাষ্ট্র কি দায়ী নয়? রাজনীতি কি দায়ী নয়? আইনশৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থা কি মুখ লুকিয়ে দায় এড়াতে পারবে? আবরার কি ক্ষমা করবে আমাদের? আবরার হয়তো শেষ চিত্কার দিয়েছিল ‘মাগো’ বলে। সেই চিত্কার কি পৌঁছেছিল অন্য মায়ের নষ্ট ছেলেদের কানে? সেই চিত্কার কি পৌঁছেছে আমাদের সমাজের মানুষের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে, রাজনীতির কাছে? কে জবাব দেবে এসব প্রশ্নের? কেউ কখনও জবাব দিচ্ছে না বলে আমরা পিছিয়ে পড়ছি, আমরা ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছি অন্ধকারের অতলে। সেই অন্ধকারে কেউ আর নিরাপদ নেই আজ।

আজ হয়তো আবরার মরেছে, কাল অন্য কেউ। নিরাপত্তাহীনতার চাদরে ঢাকা পড়ে গিয়েছে আমাদের সমাজ ইতিমধ্যে। সেখানে কেউই নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সমাজ, রাষ্ট্র। কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি আমরা। অচেনা হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। শিক্ষালয়ে শিক্ষার পরিবর্তে যেন অন্যকিছুর দর কষাকষি। শুধু শিক্ষালয়েই এমন দুর্দশা তা নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরেই আজ হতাশার হাতছানি। বাঁচতে হবে আমাদের এমন পরিস্থিতি থেকে; বাঁচাতে হবে আমাদের সমাজটাকে এমন সর্বনাশার পথ থেকে। দায় নিতে হবে আমাদের প্রত্যেককে। আবরার যেন আমাদের তেমন একটা ধাক্কাই দিতে পারে। আবরার যেন তার জীবন দিয়ে হাজার জীবনকে রক্ষা করতে পারে এমন একটি কামনা রইল আবরারের অতৃপ্ত জীবনের কাছে। তুমি এই নষ্ট সমাজটাকে এমন সজোরে ধাক্কা দাও—যেন জেগে ওঠে মানবিক সমাজ, জেগে ওঠে মনুষ্যত্ব সবার তরে। আবরারই যেন হয় আমাদের নষ্ট সমাজ আর নষ্ট রাজনীতির শেষ বিসর্জন। আবরার, তুমি দূর থেকে দেখে নিও যদি আমরা বদলাতে পারি, শোধরাতে পারি আমাদেরকে। অন্য কোনো মৃত্যুর সঙ্গে আর যেন বলতে না হয়—এ যেন ছিল আমাদের মানবতার মৃত্যু। তুমিই যেন শেষ মৃত্যু হও আমাদের আগামী দিনের মানবিক সমাজে। আর যদি তা না হয়, ক্ষমা করে দিও অক্ষম, অকৃতজ্ঞ, অমানবিক এ জাতিকে।

সুধীর সাহা : সাবেক সেনাকর্মকর্তা।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036070346832275