আমূল পরিবর্তন এসেছে নবম-দশম শ্রেণির ছয়টি বইয়ে - দৈনিকশিক্ষা

আমূল পরিবর্তন এসেছে নবম-দশম শ্রেণির ছয়টি বইয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

হেফাজতের দাবির আলোকে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই থেকে প্রগতিশীল লেখকদের গদ্য-পদ্য বাদ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এরপর দেশের শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহলের দাবির মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নবম-দশম শ্রেণির ১২টি পাঠ্যবই সংশোধন করে ‘সুখপাঠ্য’ করতে দু’টি পৃথক কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ছয়টি বই সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজায়। এই বইগুলো হলো—‘গণিত’, ‘উচ্চতর গণিত’, ‘জীব বিজ্ঞান’, ‘পদার্থ বিজ্ঞান’, ‘রসায়ন বিজ্ঞান’ ও ‘সাধারণ বিজ্ঞান’। প্রতিটি বইয়ের মলাট ছাপানো হয়েছে রঙিন ও মোটা কাগজে। বইয়ের ভেতরের চিত্রগুলো আগের চেয়ে আরও স্পষ্ট ও রঙিন করা হয়েছে। এছাড়া নবম-দশম শ্রেণীর ‘বাংলা সাহিত্য’, ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’, ‘অর্থনীতি’, ‘হিসাব বিজ্ঞান’ ও ‘ইংলিশ ফর টুডে’র বানান ভুল ও তথ্য বিকৃতিও সংশোধন করা হয়েছে।এই ১২টি পাঠ্যবইগুলো পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

নবম শ্রেণির ‘গণিত’ ও ‘উচ্চতর গণিত’ বই পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বই দু’টির জটিল গাণিতিক অংশে ব্যাখ্যা করে সহজ সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে। সমাধানে গাণিতিক সূত্রগঠন ও প্রয়োগকে ব্যাখ্যা করে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। জ্যামিতি অংশে এর সৃষ্টির ইতিহাস, প্রয়োজন ও প্রয়োগ; বিস্তারিত ব্যাখা করে বলা হয়েছে। এছাড়া বইটির শেষ অংশে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত গণিতবিদের নাম, জন্ম-মৃত্যু সাল ও তাদের অবদানকে তুলে ধরা হয়েছে। ‘গণিত’ বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ৩৫৬ ও ‘উচ্চতর গণিতের পৃষ্ঠাসংখ্যা ৩৩৪। ‘জীব বিজ্ঞান’ বইটিতে জীবের টিস্যু, অনু, পরমাণুসহ সব ছবি রঙিন ও পরিষ্কারভাবে ডিজিটাল ফরমেটে উপস্থাপন করা হয়েছে। জটিল ও কঠিন অংশ সহজভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই বইটি ৩১৪ পৃষ্ঠার।

৩০৫ পৃষ্ঠার ‘রসায়ন’ বইটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর ভেতরে রসায়নের ধারণা, পরিচিতি, পাঠের গুরুত্ব রসায়ন অনুসন্ধানসহ সব বিক্রিয়া রঙিন চিত্রসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। ৪০৮ পৃষ্ঠার ‘পদার্থ বিজ্ঞান’ বইটিতে অনেক সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য মোটা কাগজে রঙিন ছাপা। প্রথম অধ্যায়ে ভূমিকায় যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তা আগের সংস্করণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়া এই ভূমিকায় বিজ্ঞানের উন্নয়নে ইসলামি সভ্যতা ও মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীদের ছবি দিয়ে তাদের আবিষ্কার ও অবদান ব্যাখা করা হয়েছে। কঠিন ও জটিল অনুশীলনীগুলো সহজ করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।

৩১০ পৃষ্ঠার ‘সাধারণ বিজ্ঞান’ বইটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের এই বইটির মলাট মোটা, রঙিন করা হয়েছে। একইসঙ্গে বইয়ের প্রতিটি পাতা রঙিন। সূচিপত্রে কোনও পার্থক্য না থাকলেও বইয়ের ভেতরে উল্ল্যেখযোগ্য পরিবর্তন রয়েছে। প্রতিটি অধ্যায় নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। রঙিন স্পষ্ট ছবি যুক্ত করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের নজর কাড়বে। এছাড়া জটিল বিষয়গুলোকে ব্যাখা করে সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নবম-দশমের এই ছয়টি বই ‘সুখপাঠ্য’ করতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটিতে আরও যুক্ত করা হয় ১২ জন বিশেষজ্ঞকে।

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের বাইরে থাকায় তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এদিকে অধ্যাপক কায়কোবাদের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে ‘সুখপাঠ্য’করণ বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য ডাক্তার সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যেহেতু কারিকুলাম পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং আগে যে টপিক ছিল, তার ওপরই আমরা কাজ করেছি। আমরা ‘জীব বিজ্ঞান’ বইটির অন্তত হাজারের ওপরের স্থানে পরিবর্তন করেছি। অনেক অংশে জটিল ও কঠিনভাবে বলা ছিল, সেখানে যতটুকু সম্ভব, সহজ-সরল ও পরিশীলিত করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘আগের বইগুলোয় অনেক ব্যাকডেটেড তথ্য ছিল, অনেক চিত্র ছিল, যা অস্পষ্ট ও ভুল। সেগুলোর সবই ঠিকঠাক করার চেষ্টা করেছি। তবে, আমার মনে হয়েছে, এখনও অনেক ইম্প্রুভ করার প্রয়োজন রয়েছে। আশা করি, আগামীতে সুযোগ পেলে আরও ইম্প্রুভ করবো।’

বইগুলোতে চিত্র অঙ্কন করেছেন কার্টুনিস্ট নাসরীন সুলতানা মিতু ও মেহেদী হক। জানতে চাইলে মেহেদী হক  বলেন, ‘‘আমরা অনেক যত্ন নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। দেশের স্বার্থেই যত্ন নিয়ে কাজ করেছি। আমরা ‘জীব বিজ্ঞান’ বইগুলোর চিত্রগুলো নিখুঁতভাবে যেন উপস্থাপন করতে পারি, সে জন্য ডাক্তারদের সঙ্গে নিয়ে চিত্র ঠিক আছে কিনা, যাচাই করেই চূড়ান্ত করেছি।’’

এই বইগুলোতে ফন্ট তৈরির দায়িত্বে ছিলেন মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে  তিনি বলেন, ‘এই বইগুলোর জন্য নতুন ফন্ট তৈরি করা হয়েছে। আগের ফন্ট এই বইগুলোতে ব্যবহার করা হয়নি। আর শিশুদের বই যুক্তাক্ষরমুক্ত রাখার নির্দেশনা ছিল এনসিটিবির। সেভাবেই ফন্ট তৈরি করা হয়েছে।’

এদিকে নবম-দশমের ‘বাংলা সাহিত্য’, ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’, ‘অর্থনীতি’, ‘হিসাব বিজ্ঞান’ ও ‘ইংলিশ ফর টুডে’—এই ছয়টি বইয়ের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে বিশেষজ্ঞ টিম। এই কমিটিতে বাংলা সাহিত্য পরিমার্জনের দায়িত্বে ছিলেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ‘ইংলিশ ফর টুডে’র পরিমার্জনের দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম, ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’র পরিমার্জনের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।

নবম-দশমের বাংলা সাহিত্য বইয়ের পরিমার্জনের দায়িত্বে ছিলেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বইটিতে অনেক বানান ভুল ছিল, তথ্য বিকৃতি ছিল সেগুলোই ঠিক করা হয়েছে। তবে বড় ধরনের কোনও অধ্যায় সংযোজন-বিয়োজন করা হয়নি। আমি পরিশীলিত করার চেষ্টা করেছি।’

এদিকে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বইটি পরিমার্জনের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বইটিতে বেশ কিছু ভুল তথ্য ছিল। সেগুলো ঠিকঠাক করা হয়েছে। এছাড়া ভুল বানানগুলো ঠিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোনও অধ্যায় রদবদল করা হয়নি।’

পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধন ও পরিমার্জন বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘পাঠ্যবইয়ের যেখানে যেখানে ভুল ছিল, তার সবই সংশোধন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া সমালোচিত হওয়া জায়গাগুলোতেই সংশোধন আনা হয়েছে। আবার নবম-দশম শ্রেণির ১২টি বই ‘সুখপাঠ্য’ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করে দিয়েছিল। সেই কমিটি যেভাবে কাজ করেছে, পাঠ্যবইগুলো সেভাবেই ছাপানো হয়েছে।’

গত সোমবার (১ জানুয়ারী) বই উৎসবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘আমরা এ বছর নবম-দশমের বিজ্ঞান বিভাগের ছয়টি বই সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছি। সম্পূর্ণ চার রঙা বইগুলোয় সহজ সরলভাবে পাঠ উপস্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই পড়ে বুঝতে পারবে। তাদের কোনও প্রাইভেট বা কোচিংয়ের দরকার হবে না। আমরা একে একে সব বই আমরা সহজ ও সরল করে তোলা হবে।’

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034949779510498