আম্ফানে নয় স্কুলে ক্ষতি দেখিয়ে টাকা লোপাটের চেষ্টা - দৈনিকশিক্ষা

আম্ফানে নয় স্কুলে ক্ষতি দেখিয়ে টাকা লোপাটের চেষ্টা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি |

ঝালকাঠি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঝালকাঠি সদর উপজেলার নয়টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সালেহা খাতুন ও অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম তাদের নিজেদের সিন্ডিকেটের সদস্য এমন প্রধান শিক্ষকদের স্কুলের নাম এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ তালিকায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের নাম বাদ দিয়ে আদৌ ক্ষতি হয়নি বা কম ক্ষতি হয়েছে এমন বিদ্যালয়ের নাম দেয়া হয়েছে। বর্তমানে নয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও টিইও অফিসের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলছে কীভাবে নামেমাত্র কাজ দেখিয়ে ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা যায়।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, গত ২০ মে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ঝালকাঠির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দু’একটি বিদ্যালয়ের দরজা জানালার সামান্য ক্ষতি হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গত ২১ মে ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হলে ঝালকাঠি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশমত উচ্চমান সহকারী মো. শহিদুল ইসলাম তার পছন্দের প্রধান শিক্ষকদের স্কুল তালিকাভুক্ত করেন।  

যে নয়টি স্কুল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, বালিঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, দক্ষিণ-পশ্চিম বালিঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, কাচাঁবালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিকনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, প. দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মুরাসাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, উদ্বোধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও কেফাইতনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এসব বিদ্যালয়ে আম্ফানের কারণে কোনো ক্ষতিই হয়নি। কিন্তু তালিকা প্রেরণের সময় বলা হয়েছে এসব বিদ্যালয়ের দরজা, জানালা, সিঁড়ির ক্ষতি হয়েছে আম্ফানে। 

আবার যে সব বিদ্যালয়ের সামান্য কিছু ক্ষতি হয়েছে সে সব বিদ্যালয়ের নাম এ তালিকায় দেয়া হয়নি। যেমন শ্রীমন্তকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এ বিদ্যালয়ের কয়েকটি থাইগ্লাস ভেঙ্গে গেছে এবং ছাদে পানি জমে সৌর বিদ্যুতের প্যানেলের ক্ষতি হয়েছে। 

প্রধান শিক্ষক কল্পনা ইন্দু বালা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আম্ফানের পরে আমি আমার বিদ্যালয়ের নাম ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে টিইও অফিসে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখি আমার বিদ্যালয়ের নাম নেই। অথচ শুনছি আদৌ যে সব স্কুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি, সে সব স্কুলের নাম রয়েছে।  

বিকনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাসিন্দা আ. জব্বার মৃধা ও ছাত্রলীগ নেতা আশিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও আম্ফানে স্কুলের কোনো ক্ষতি হয়নি। আর ভেঙ্গে পড়ার মতো কোনো গাছও স্কুলের পাশে নেই । 

শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিবেশী তারেক মোল্লা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে আমাদের স্কুলের কোনো ক্ষতি হয়নি । আগে যেমন ছিল তেমনই আছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বছরে বিভিন্ন খাতে স্কুল ওয়ারি বরাদ্দ আসে । এসব বরাদ্দ প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠনের নেতারা যে সব স্কুলের সাথে জড়িত তাদের মধ্যেই প্রতি বছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়। আর এসব অনিয়মের কলকাঠি নারেন উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী শহিদুল ইসলাম। সব বরাদ্দ থেকে তাকে ভাগ দিতে হয়। এমন কি জুন ফাইনালে ৪০ থেকে ৭০ হাজার স্লিপের টাকার জন্য শহিদুল স্কুল প্রতি দুই হাজার টাকা আদায় করেছেন। এ ছাড়াও প্রতি বছর রুটিন মেইন্টেনেসের ৪০ হাজার, উপবৃত্তির ২ হাজার ৫০০ টাকা, প্রাক প্রাথমিকের দশ হাজার, বিদ্যালয় আনুষঙ্গিকের ৮ হাজার এবং ক্রীড়ার দুই হাজার টাকা ছাড় করাতে উচ্চমান সহকারীকে পার্সেন্টেজ দিতে হয়। 

এ ব্যাপারে উচ্চমান সহকারী মো. শহিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাসকালীন সাধারণ ছুটির সময় অন্যরা অফিস না করলেও আমাকে অফিস করতে হয়েছে। অনেক সময় টিইও স্যার আসতে পারেন না তখন স্যারের নির্দেশে আমাকেই সব কিছু করতে হয়। সে কারণে অনেক শিক্ষক আমার ওপর ক্ষিপ্ত। আম্ফানের পরের দিন তালিকা করতে বলা হয়। তাড়াহুড়ার কারণে ভুলত্রুটি হতে পারে। আমার বিরুদ্ধে টাকা পয়সা আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়। 

উপজেলা শিক্ষা অফিসার সালেহা খাতুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সহকারী শিক্ষা অফিসারদের প্রতিবেদন অনুয়াযী তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কাজ না করে টাকা পয়সা ভাগবাটোয়রা করার কোনো সুযোগ নেই। আম্ফানে ক্ষতি না হলেও একটা স্কুলের নামে কিছু টাকা বরাদ্দ হলে আপনাদের সমস্যা কোথায়? 

ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের তালিকা নিয়ে কিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। যাচাই বাছাই করে তালিকা সংশোধন করা হবে।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037491321563721