এইচএসসির প্রশ্নপত্র-কাণ্ডে এবার তদন্ত কমিটি করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের ওই কমিটি প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেশে ফিরলেই কমিটি অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনা তদন্তে গঠিত যশোর বোর্ডের কমিটি বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে। একইসঙ্গে প্রতিবেদনের একটি কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কাছেও দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদনের আলোকে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক উদ্দীপক যুক্ত করা হয়। এই প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেছিল যশোর শিক্ষা বোর্ড। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলা প্রথমপত্রের বিতর্কিত এ প্রশ্নটি তৈরি করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল।
আর এটি পরিশোধনের (মডারেশন) দায়িত্বে ছিলেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দীন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
সূত্র জানিয়েছে, কমিটি এই প্রশ্নপত্রের জন্য উল্লিখিত প্রত্যেককে দায়ী করেছে। তাদের কারোরই প্রশিক্ষণের ঘাটতি ছিল না। এছাড়া তাদেরকে প্রশ্নপত্র তৈরি সংক্রান্ত নির্দেশিকা এবং ওরিয়েন্টেশনও দেওয়া হয়। এরপরও প্রশ্নটি তৈরি করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি মনে করছে, এ ধরনের স্পর্শকাতর উদ্দীপক প্রশ্নপত্রে যুক্ত করার পেছনে প্রশ্নকর্তার ‘উদ্দেশ্য’ থাকতে পারে। আর পরিশোধনকারীদের নজর এড়ানোকেও ‘অপরাধ’ হিসেবে দেখছে তদন্ত কমিটি। এখন প্রশ্নকর্তা আর পরিশোধনকারীদের মধ্যে কোনো যোগসাজশ আছে কিনা-সেটি অবশ্য বের করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। তবে কমিটি কী কী সুপারিশ করেছে সেই তথ্য জানা যায়নি।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, কেবল সাম্প্রদায়িক উসকানিই নয়, একজন লেখককে হেয় করে প্রশ্ন করা হয়েছে আরেক বোর্ডে। আবার একটি বিষয়ে সিলেবাসের বাইরে থেকেও প্রশ্ন করার অভিযোগ এসেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ব্যাকরণ অংশে একটি প্রশ্ন সিলেবাসের বাইরে থেকে এসেছে। এই প্রশ্নপত্রটি ঢাকা বোর্ডকে তৈরি করে দিয়েছে কুমিল্লা বোর্ড।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তাকে ইতোমধ্যে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। প্রশ্নটি সিলেবাসের মধ্যে থেকে করা হয়েছে কিনা, তাকে সেই প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার জবাব পাওয়া যায়নি। জবাব পেলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।