আর্থিক সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় মাসুম | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

আর্থিক সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় মাসুম

ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের হাড়ভাঙা পরিশ্রম দেখে আসছেন মাসুম। সংসারের ভরণপোষণের টানাপোড়েন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। যেখানে ভরণপোষণের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা সেখানে পড়াশোনা চালানো এক দুর্বিষহ ব্যাপার ছিল তার পক্ষে। তবে ছোটবেলা থেকেই দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের অধিকারী মাসুম সংসারের টানাপোড়েনকে

ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের হাড়ভাঙা পরিশ্রম দেখে আসছেন মাসুম। সংসারের ভরণপোষণের টানাপোড়েন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। যেখানে ভরণপোষণের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা সেখানে পড়াশোনা চালানো এক দুর্বিষহ ব্যাপার ছিল তার পক্ষে। তবে ছোটবেলা থেকেই দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের অধিকারী মাসুম সংসারের টানাপোড়েনকে সঙ্গী করে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে আর্থিক সংকটের কারণে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অনিশ্চয়তার মুখ দেখছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের মহাজানপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক মোতাহার হোসেনের ছেলে মাসুম রাব্বী। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছোট। স্থানীয় সরকারটলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শেষ করে ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে মাসুম। অভাব ও নানা সমস্যা নিয়ে এতদূর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে এলেও এবার থমকে গেছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন। তবুও স্বপ্ন বুনছেন সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে দক্ষ প্রকৌশলী হয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করবেন।

মাসুমের মা মর্জিনা বেগম বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়েকে অনেক কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি। আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। যে বাড়িতে আছি সেটিও অন্যের। মাসুমের বাবা যা রোজগার করে তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালিয়ে নিচ্ছি। আমি সেলাই মেশিনের কাজ করি। এখন অসুস্থতার কারণে সে কাজটিও আর করতে পারি না। আমার মাসুম কষ্ট করে এতদূর এসেছে। খেয়ে না খেয়ে তার পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। সেটি আর সাধ্যে কুলাচ্ছে না। সবার সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না।

আর্থিক সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় মাসুম

মাসুমের বাবা ভ্যানচালক মোতাহার হোসেন বলেন, আমার মায়ের সঙ্গে বাবার ডিভোর্স হওয়ার পর বাবা আমাকে এখানে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর অন্যের জায়গায় বাড়ি করে ছিলাম। এখনো অন্যের জমিতেই থাকি। ছোটবেলা থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলতাম। বিয়ের পরও দিনমজুরি আর ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। তারপরও আমার ছেলে কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন তার ভর্তির খরচ, যাতায়াতসহ সেখানে কয়েকমাস থাকার খরচ দেওয়ার মতো আমার সামর্থ্য নেই। যদি আপনারা সহযোগিতা করেন তাহলে আমার ছেলে একদিন বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। আপনাদের সকলকে আমার ছেলের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।

দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে মাসুম রাব্বী বলেন, আমার বাবা-মা অনেক কষ্ট করেন। আমার বাবা ভ্যান চালায়। মা সেলাই মেশিন চালিয়ে যা আয় করেন তা আমার পড়াশোনার জন্য দেন। আমি ভালো কোনো শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে পারিনি। নিজে টিউশনি করিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ কোনোভাবে চালিয়ে নিতাম। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু টাকার কারণে ভর্তি হতে পারছি না। এতো টাকা দিয়ে ভর্তি করানোর সক্ষমতা আমার পরিবারের নেই। এমন কিছুও নেই যা বিক্রি করে ভর্তি হব। এর আগেও আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারিনি। আমার ভর্তিসহ আনুষঙ্গিক খরচ দিয়ে আমাকে কেউ সহযোগিতা করলে আমি ভালো কিছু করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমি চাই না এ পর্যায়ে এসে আমার পড়াশোনা কোনোভাবে থেমে যাক। আপনাদের সহযোগিতা আমাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।

প্রতিবেশী হালিমা খাতুন বলেন, মাসুমের বাবা-মা অনেক কষ্ট করেন। তারা যে বাড়িতে আছেন সেটিও আমাদের জমি। মাসুম নিজে পরিশ্রম করে এতদূর গেছে। আমরা চাই সে আরও বেশি সফলতা অর্জন করুক। আপনারা সকলে তার পাশে থাকবেন।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক রবিউল আলম বলেন, মাসুম অনেক মেধাবী ছাত্র। সে ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে। তাকে আমরা বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছি। এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আমরা চাই তার পড়াশোনা যেন থেমে না যায়। আশা করি সরকার ও বিত্তবানসহ সকলে তার পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করবেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শহীদ হোসেন বলেন, তারা পারিবারিকভাবে অনেক অসহায়। আয়ের উৎস মাত্র একটি ভ্যান। আমরা সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করে আসছি। এখন বাইরে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। যদি তাকে সহযোগিতা করা হয় সে ভালো কিছু করবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, আশা করি আর্থিক সমস্যার কারণে মাসুমের পড়াশোনা থেমে থাকবে না। সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।