আশা নিরাশার দোলাচলে সাবরিনার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন - দৈনিকশিক্ষা

আশা নিরাশার দোলাচলে সাবরিনার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

রাজশাহী প্রতিনিধি |

বাবা সানোয়ার হোসেন। ছোট একটি চায়ের দোকান করেন। তার সামান্য আয়ে চলে তাদের অভাব-অনটনের সংসার। এর মধ্যে দুই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ। তাই ‘আমি ডাক্তার হতে চাই’ কথা শুনলে বাবা ভয় পান। কারণ ডাক্তারি পড়তে তো মেলা খরচ।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এভাবেই দৈনিক শিক্ষা ডটকমের সঙ্গে কথা হয় এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মোসা. সাবরিনা আক্তার মায়ার। তারা রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুরহাট বাজার এলাকার বাসিন্দা। পুঠিয়ার শিবপুরহাট বাজারের ফুটপাতে চা দোকান করেন মায়ার বাবা সানোয়ার হোসেন।

মায়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর ক্যান্টমেন্ট বোর্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাতায়াত করতে তাকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো বাসে, আবার কখনো অটোরিকশায় চড়ে সে কলেজে যাতায়াত করেছে। টানাটানির সংসার, টাকার অভাবে থাকতে পারেনি রাজশাহী নগরীর কোনো মেসে। তাই সাবরিনাকে বাড়ি থেকেই যাতায়ত করতে হতো।

এত কষ্ট করে পড়ালেখা করা সেই সাবরিনাই এবার এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ লাভ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

এদিকে সাবরিনার এই ফলাফলে যেমন উচ্ছ্বাসিত পরিবার, তেমনি আর্থিক অনটনের কারণে এখন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে দেখা দিয়েছে ভাটা।

তবুও হাল ছাড়তে রাজি নন সাবরিনার বাবা সানোয়ার হোসেন। তিনি দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, ‘যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সংসার তো চলে না; কিন্তু মেয়ে এত ভালো ফল করেছে, এ অবস্থায় তার পড়াশোনা বন্ধ করে দেই কী করে? তাই যত কষ্টই হোক, ওকে পড়াশোনা করাবো।’

আর সাবরিনা বলে, ‘আমি জানতাম আমার ফলাফল ভালোই হবে। তাই পরীক্ষার পরপরই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। আশা করছি আল্লাহ চাইলে এ পরীক্ষাতেও টিকে যাবো। কিন্তু বাবার আর্থিক অনটনের সংসারে ডাক্তারি পড়া-শোনার খরচ জোগানো সম্ভব হবে না হয়তো। তার পরেও আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি এগিয়ে যেতে চাই। চিকিৎসক হয়ে দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের সেবা করতে চাই।’

সাবরিনা আরও জানায়, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল সে শিবপুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার জন্য রাজশাহীর ক্যান্টমেন্ট বোর্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন। সেখানে যে টিউশন ফি তার অর্ধেক প্রতিষ্ঠান থেকে মওকুফ করে দেয়া হয়। আর বাকি অর্ধেক টাকা তাঁর এক আত্মীয় দিতো। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার টাকাও দেন ওই আত্মীয়।

তবে টাকার অভাবে রাজশাহীর কোনো মেসে থাকতে পারছে না সে। তাই কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো বাসে আবার কখনো অটোরিকশায় চড়ে তিন ধাপে তাকে রাজশাহীতে যাতায়াত করতে হয়।

এক ভাই এক বোনের মধ্যে বড় সাবরিনা। সাবরিনার ছোট ভাই সাব্বির হোসেন এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ১৭ পেয়েছে মানবিক বিভাগ থেকে। ফলে দুই-ছেলে মেয়ের পড়াশোনা করাতে গিয়ে অভাবের সংসারে আরও সংকটে পড়েছে সাবরিনাদের পরিবার।

সাবরিনার মা শাহনাজ বেগম বলেন, “ওর (সাবরিনা) বাপের তেমন আয় নাই। দিনে ২শ’ থেকে ৩শ’ ট্যাকা আয় হয় চা বিক্রি করে। এই ট্যাকা দিয়ে পেটের খাবার তো কিনা যায় না। তাই মেয়ের পড়ার ট্যাকাও আমরা সেভাবে দিতে পারি না। এখন নাকি ডাক্তার হবি। তাহলে অতো ট্যাকা কুণ্ঠে পাবো আমরা।”

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037479400634766