বন্যার কারণে চার শিশু নিয়ে মাদ্রাসায় আশ্রয় নিতে এসেছিলেন এক মা। কিন্তু মাদ্রাসায় তাদের আশ্রয় জোটেনি। আশ্রয় না পেয়ে তারা চলে আসেন। কিন্তু পতিমধ্যে পানির প্রবল স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় ওই চার শিশুকে।
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ৬নং রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বলরামপুর ঈশ্বরগ্রাম দাখিল উলুম মাদ্রাসার সুপার মো. ফানসুর রহমানের বিরুদ্ধে এক লিখিত অভিযোগে চার শিশু সন্তানহারা মা সোনাভান খাতুন এ কথা বলেন।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট দিনাজপুরে কাহারোল উপজেলায় বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় উপায়ন্তর না পেয়ে বলরামপুর ঈশ্বরগ্রাম দাখিল উলুম মাদ্রাসায় আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসেন ৪ সন্তানসহ গৃহবধূ সোনাভান। শিশুদের মধ্যে ২ কন্যা, ১ পুত্র ও দেবরের ১ পুত্র ছিল। কিন্তু মাদ্রাসার কক্ষ খোলা না থাকায় আশ্রয় নিতে পারেননি।
তাৎক্ষণিক নৈশ প্রহরীকে মাদ্রাসা কক্ষ খোলার জন্য অনুরোধ করেন সোনাভান। মাদ্রাসার নৈশ প্রহরী আব্দুর রশিদ তড়িৎ গতিতে মাদ্রাসা সুপার মো. ফানসুর রহমানকে মোবাইল ফোনে জানান। বানভাসি মানুষদের আশ্রয়ের জন্য কক্ষ খোলার কথা বলেন। মাদ্রাসা সুপার মোবাইলে নৈশ প্রহরীকে কক্ষ না খোলার জন্য নির্দেশ দেন। সোনাভান নিরূপায় হয়ে মাদ্রাসা থেকে ৪ সন্তানকে সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরে যান এক বুক পানি ভেঙ্গে। পথিমধ্যেই পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যায় মাসহ ৪ শিশু। মায়ের আর্তনাদে ছুটে আসে এলাকার লোকজন উদ্ধারের জন্য। মাকে উদ্ধার করা গেলেও ৪ সন্তানকে উদ্ধার করতে পারেনি লোকজন। ৪ শিশু ততক্ষণে পানিতে তলিয়ে যায়। শিশুদের তিনজন ওই মায়ের অন্য শিশুটি তার ভাইয়ের।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর ৪ শিশুর লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। ৪ শিশুর মৃত্যুতে গোটা উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। কিন্তু পাষণ্ড সুপারের মন তখনও গলেনি। সেইদিন ৪ শিশুর লাশ ঘরের মধ্যে রাখতে দেয়নি মাদ্রাসার সেই সুপার। ঘটনার পরের দিন সুপার সকাল বেলায় মাদ্রাসায় এসে লোকজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এতে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ধাওয়া করলে সুপার পালিয়ে যায়। কাহারোল উপজেলা চেয়ারম্যান ৪ শিশুর জানাজায় এসে জনতার দাবির মুখে সুপারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশ্বাস দেন। গত ১৬ আগস্ট সোনাভান ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তবে, অপর একাধিক মাদ্রাসা শিক্ষক জানান, সুপার নির্দোষ।