আহছানিয়া মিশনের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই দ্বন্দ্বে ট্রাস্টিরা | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

আহছানিয়া মিশনের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই দ্বন্দ্বে ট্রাস্টিরা

শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন আহছানিয়া মিশনের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা। দুই বছরেও দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারেননি তারা। এ কারণে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমতিও দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন আহছানিয়া মিশনের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা। দুই বছরেও দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারেননি তারা। এ কারণে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমতিও দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে খুলনায় খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহীতে আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় সরকার। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলম। ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাও তিনি।

অনুমোদন পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় দুটির পক্ষ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি চেয়ে ইউজিসিতে আবেদন করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন ট্রাস্টি সদস্যরা। এর জেরে এক ট্রাস্টিকে বের করে দেয়া হয়। তিনি ‘অন্যায়ভাবে বের করে দেয়ার’ অভিযোগ তুলে বিষয়টি সুরাহা হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি না দিতে ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে দেয়া ওই চিঠি আমলে নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দুটির ট্রাস্টিকে চিঠি দেয় ইউজিসি। কিন্তু তারা আজও তা সুরাহা করতে পারেননি।

এদিকে অনুমতি না মেলায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে না পারলেও প্রতি মাসেই বহুতল ভবনের ভাড়া গুনতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় দুটিকে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় দুটির সাময়িক অনুমোদনের সাত বছর মেয়াদের মধ্যে প্রায় তিন বছর এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ট্রাস্টি সদস্যদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে আরজেএসসি থেকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নিবন্ধন নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলেই বিশ্ববিদ্যালয় দুটিকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেয়া হবে।

বিওটি থেকে বাদ দেয়া সদস্য মাহমুদুল হাসান ইউজিসিতে দেয়া চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ নিয়ে বিওটি চেয়ারম্যান রফিকুল আলমের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। এরপর তার অনুপস্থিতিতে রফিকুল আলম অন্য সদস্যদের নিয়ে বিওটির বিভিন্ন সভাও করেন। এজন্য সমস্যার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় দুটির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি যেন না দেয়া হয়।

তবে বিওটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাহমুদুল হাসান নামের সঙ্গে ‘অধ্যাপক’ ও ‘ডক্টর’ ব্যবহার করেন, যদিও তার এর জন্য প্রয়োজনীয় ডিগ্রি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টে থাকার পাশাপাশি ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রারের মতো বড় পদে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী সেটি সম্ভব নয়। নিজের স্বার্থের কারণেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করছেন।

এদিকে শিক্ষা কার্যক্রম চালু না হলেও ভবন ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির। এর মধ্যে খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুলনার ছোট বয়রা এলাকায় লাচাতা টাওয়ার নামের একটি ছয়তলা ভবন ভাড়া নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভবনে কেয়ারটেকার ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। ভবনের তত্ত্বাবধায়ক জানান, মাঝেমধ্যে দুএকজন কর্মকর্তা অফিস কক্ষে বসেন। তাছাড়া ভবন তালাবদ্ধই থাকে। একইভাবে রাজশাহীর নর্দার্ন মোড় এলাকায় বহুতল ভবনের ভাড়া গুনতে হচ্ছে আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে।

বিশ্ববিদ্যালয় দুটির বিওটি সূত্রে জানা যায়, মাহমুদুল হাসানসহ তিনজন প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যকে বাদ দিয়ে তাদের স্থলে নতুন তিন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশনের জন্য যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) আবেদন করা হয়েছে। আরজেএসসি থেকে অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে ঢাকার তেজগাওয়ের আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালেয়ের দুইজন শিক্ষকের পর্ন ভিডিও এবং ছবি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে। পর্ন ভিডিওর বিষয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। পরে দুই শিক্ষক লাপাত্তা হয়ে যান।  

নানা অনিয়মের কারণে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে যাননি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ অক্টোবর বিকেলে ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এর দুদিন আগে  দৈনিক শিক্ষায় ‘আহছানউল্লাহর ভারপ্রাপ্ত ভিসি স্বাক্ষরিত অকার্যকর সনদের কনভোকেশন রোববার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আসে। প্রতিবেদনে ভারপ্রাপ্ত ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির যাবতীয় দুর্বল তথ্য মন্ত্রীর কাছে গোপন করার কথা প্রকাশ হয়। এরপর সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সমাবর্তন বাতিল করার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী।