আহসানউল্লাহ’র যৌন নিপীড়ক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ - Dainikshiksha

আহসানউল্লাহ’র যৌন নিপীড়ক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

আশিক মাহমুদ |

RASIDবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করায় মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌস নামে এক শিক্ষককে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দিয়েছেন। প্রাথমিক যাচাই বাছাই করে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য এ. এম. এম শফিউল্লাহ। এদিকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের ছাত্রীদের ওপর যৌন হয়রানির নানা কৌশল সম্পর্কে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা একটি ইভেন্ট খুলে শনিবার সকাল ১০ টায় বিক্ষোভ মিছিল করবে বলে প্রচার করেন। মূলত এখানেই সংঘটিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।শনিবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন বিভাগে মিছিল করতে দেখা যায় কয়েক’শ শিক্ষার্থীকে। ফেসবুকে খোলা ইভেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে আসছেন। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে ওপেন সিক্রেট ছিল। আগে কেউ ভয়ে মুখ খোলেননি বলেও ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা লিখেছেন।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যহতি পাওয়া ওই শিক্ষকের কীর্তি সম্পর্কে। কিছু তথ্য প্রমাণও দেখান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার নিয়ে হলি ফ্যামিল রেড ক্রিসেন্ট এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত মাহফুজ। আরেকটি ফ্ল্যাট রাজধানীর পান্থপথ আবাসিক এলাকায়। প্যরাডাইস সুইটসের পাশে শ্বশুরের কাছ থেকে উপহার পাওয়া ওই ফ্ল্যাটে শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করে এনে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি করে আসছিলেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে অভিযোগকারী ছাত্রীর এক সহপাঠী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু মেয়েকে ওই শিক্ষক কৌশলে তার ফাঁদে ফেলেছেন। ফাঁদে ফেলে জিম্মি করে দিনের পর দিন ছাত্রীদেরকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন। অনেক মেয়ের শরীরে ওই শিক্ষকের নির্যাতনের দাগও দেখা গেছে। তবুও ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি।

ব্ল্যাকমেইল করার কিছু ধরন সম্পর্কে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রথমে তিনি ছাত্রীদের টার্গেট করেন। পরে তার পেছনে লেগে পড়েন। তার যত কৌশল জানা আছে- সবই তিনি কাজে লাগান।প্রথমে স্বাভাবিক ও মিষ্টি কথার মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়ে কাজ না হলে পরে, পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়, সেমিস্টার ড্রপ দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তিনি ছাত্রীদেরকে ব্ল্যাকমেইল করেন।

তিনি বলেন, ওই শিক্ষক তার টার্গেট করা কোনও ছাত্রীকে রাজি না করাতে পারলে অন্য আরও একটি কৌশলের আশ্রয় নেন।

এ কৌশলের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মেয়েটির বাবা মায়ের কাছে ফোন করে বিভিন্ন রকমের মিথ্যা কথা বলেন। আপনার মেয়ে তো ক্লাস করে না, পরীক্ষা দেয় না, পারফরমেন্স খুব খারাপ। বাজে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। আপনার মেয়েকে বলেন, ক্লাসের পরে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য, ওকে পড়াটা বুঝিয়ে দেবো। এভাবে ভিক্টিমদের বাবা -মাকেও হাত করে ফেলেন উনি।

ভিক্টিম এক ছাত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এক ছাত্রীকে ডিপার্টমেন্টে ডেকে তার মোবাইল হাতিয়ে নিয়েছিলেন। তার মোবাইল থেকে কিছু আজেবাজে মেসেজ তিনি তার মোবাইলে পাঠিয়ে রাখেন, পরে যা দিয়ে তিনি ওই ছাত্রীকে ব্লাকমেইল করেন। কাউকে না বলতে পেরে দিনের পর দিন ধ্বংস হতে থাকে মেয়েটি। প্রচণ্ড মানুষিক যন্ত্রণায় অনেকে সুইসাইডও করার চেষ্টা করেছেন।

মাহফুজের ব্ল্যাকমেইলের পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা আরো জানান, ফ্ল্যাটে ডেকে কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে তিনি (শিক্ষক) তার অফিসিয়াল নম্বরে আজেবাজে ম্যাসেজ পাঠিয়ে রাখতেন, যা দিয়ে পরবর্তীতে তাদের ফাঁদে ফেলতেন। নানা কৌশল অবলম্বন করে মাহফুজুর রশিদ শিক্ষার্থীদের বাধ্য করতেন পান্থপথের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে। সেখানে নিয়ে যৌন নিপিড়ন এবং শারীরিক নির্যাতন করতেন। এ কৌশলে অসংখ্য ছাত্রীর সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছেন লম্পট ওই শিক্ষক। কথা না শুনলে ভার্সিটিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর চরিত্র নিয়ে কুৎসা রটানোর হুমকিও দিতেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মোবাইলে নিজের ন্যুড পিক পাঠানো ছিল ওই শিক্ষকের কাছে অতি সহজ একটা ব্যাপার। আজেবাজে টেক্সটিং, যা হরহামেশাই পাঠানো হত। অবশেষে সব ভয়, লজ্জা ভেঙে সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন ভুক্তভোগীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ওই শিক্ষক তার টার্গেট মেয়েদের ফোনে সেলফি পাঠান, পরে তিনি ওই মেয়েদেরও তাকে সেলফি পাঠাতে বলেন। আবার তার টার্গেটেড মেয়ের বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। ওই মেয়েকে ফোনে বলেন, তোমাকে নিতে এলাম, চলো ভার্সিটিতে যাবো। এগুলো তো আদৌ শিক্ষকসুলভ আচরণ নয়।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র সেমিস্টার থেকে বাঁচার জন্য, অনেক মেয়েকে দিনের পর দিন এগুলো সহ্য করে যেতে হয়েছে। লজ্জা ভয়ে কাউকে বলতেও পারেনি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের একটি বাসার ঠিকানাও দেন। তারা বলেন,ওই শিক্ষকের দুটি বাসা। এরমধ্যে পান্থপথের প্যারাডাইস সুইটসের পাশের ভবনের ফ্ল্যাটটিতে মেয়েদের নিয়ে গিয়ে যৌন হয়রানি করা হয়।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর এক সহপাঠী বলেন, সম্প্রতি আমাদের এক বন্ধুকে যৌন হয়রানি করায় তিনি বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ করার খবর ওই শিক্ষক জানতে পারায় পরে তাকে হুমকি দিতে থাকেন। ভয় দেখিয়ে তিনি উল্টো ওই ছাত্রীকে দিয়ে ট্রেজারারের কাছে ‘অভিযোগ মিথ্যা’ এই মর্মে একটি স্বীকারোক্তি আদায় করেন। সেটি তিনি আবার চুরি করে অন্য কারও মাধ্যমে ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে নিরাপরাধ সাজতে চেয়েছিলেন। ফেসবুকে এই ভিডিওটি ভাইরালে পরিণত হয়েছে।

এসব অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আছে কি না জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এম. এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু প্রমাণ ইতোমধ্যে হাতে পেয়েছি। সে কারণেই ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দিয়েছি এবং কর্তৃপক্ষের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যতদ্রুত সম্ভব সিন্ডিকেট সভায় তাকে বরখাস্ত করা হবে।’

শিক্ষার্থীদের দাবি, তাকে শুধু বরখাস্তই নয়, যৌন হয়রানি আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘যেহেতু এটা যৌন হয়রানির অভিযোগ, ফলে আলাদা কোনও তদন্ত কমটি গঠন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল আছে। সেখানে অভিযোগটি পাঠানো হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা করবে ওই সেলটি।’

তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040578842163086