আ*ত্মহ*ত্যা প্রবণতা বাড়ছে কেনো - দৈনিকশিক্ষা

আ*ত্মহ*ত্যা প্রবণতা বাড়ছে কেনো

উম্মে হাবিবা |

আত্মহত্যা কোনো শখ নয়। এটি একটি মানসিক পীড়নের সর্বশেষ পর্যায়। অনেকেই মনে করেন যে আজকালকার ছেলেমেয়েরা বেশি ইমোশনাল তাই আত্মহত্যা করেন। আসলে কি তাই? তাহলে চলুন একটু ভেবে দেখি কেনো আত্মহত্যা করছেন ছেলেমেয়েরা। শুধু অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে না মধ্যবয়সী বা বয়স্করাও আসলে কেনো আত্মহত্যা করছেন? কে বা কারা দায়ী এর পেছনে?

একজন ছেলে বা মেয়ে উভয়েরই শুরুটা ছোটবেলা থেকেই হয়। কেউ বয়ঃসন্ধিকালের আগেই হয়তো বুলিংয়ের শিকার, নির্যাতনের শিকার কিংবা যৌন-নিপীড়ন অথবা তার পারিবারিক পরিবেশ অনুকূলে ছিলো না। বয়ঃসন্ধিকাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় সকল ছেলেমেয়ের জন্য। এ সময়টা তাদের শারীরিক, মানসিক পরিবর্তন যেমন ঘটে তেমন পরিবর্তন ঘটে আবেগের।

অনেক কিছুই তার পরিবর্তিত মন মেনে নিতে পারে না কিন্তু সে কাউকে বলতেও পারেন না। পাশাপাশি শরীরের পরিবর্তন তাদেরকে নতুন জগতে প্রবেশ করায়। ফলে ছেলেমেয়েরা একটা অচেনা পরিবেশে হাবুডুবু খান। এ সময় তাদের প্রয়োজন কাউন্সিলিং, প্রয়োজন মানসিক সাপোর্ট। কিন্তু কয়জন পান এই সাপোর্ট? কে তাকে সুন্দরভাবে পরিচিত করায় নতুন জগতের সঙ্গে। ফলে বয়ঃসন্ধিকালের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়েই তিনি বড়ো হতে থাকেন। আর এই যাত্রায় তার মন, তার আবেগ, অনুভূতি সামলানোর ক্ষমতা তার কি আসলেই পর্যাপ্ত থাকে? ফলে নতুন কোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানো, মানসিকভাবে শক্ত থাকা, সকল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা তাদের থাকে না। যার ফলাফল মানসিক অস্থিরতা, খারাপ পথে যাওয়া, আত্মহত্যা করা ইত্যাদি। 

বর্তমানে আমাদের ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে বড়ো শত্রু মোবাইল ফোন। শুধু তারাই যে মোবাইলে আসক্ত তা নয়, তার পরিবারসহ সকলেই মোবাইল ফোনে আসক্ত! আগেকার দিনের দাদি, নানির গল্পও আজ আর নেই। আজকাল দাদি-নানিদের হাতেও ফোন। পাশাপাশি বসেও এখন আর কেউ গল্প করেন না। সবাই যার যার ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। প্রযুক্তি আমাদের দিয়েছে অনেক কিন্তু কেড়ে নিয়েছে সম্পর্কের একান্ত মুহূর্তগুলো। যে মুহূর্ত পরিবারের সবাই একসঙ্গে গল্প করার সে মুহূর্তে সবাই ফেসবুকে বা ফোনে ব্যস্ত। প্রযুক্তি তার কাছে থাকার ব্যস্ততা বাড়িয়ে মানুষকে উপহার দিচ্ছে একাকীত্ব। মানসিক সমস্যা বাড়ছে মানুষের। দিনদিন রোবট হয়ে যাচ্ছে মানুষ, কমে যাচ্ছে আন্তরিকতা। 

কারো পাশে বসে তার কথা শোনার মতো সময়ও কারো নেই। চাকচিক্যময় জগতের আকর্ষণে সব সম্পর্কে বাড়ছে জটিলতা। দূরত্ব তাদেরকে প্রযুক্তির বন্ধু বানিয়ে করছে মানসিকভাবে অসুস্থ। তাহলে কীভাবে কমবে এই আত্মহত্যার প্রবণতা? চলুন, ভেবে দেখি আমাদের সন্তানদের কোথায় সমস্যা, তাদের প্রয়োজন, তাদের পারিবারিক পরিবেশ ও সময় দেয়া, দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা দরকার কি না। সর্বোপরি ছেলেমেয়েদের পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটানোর প্রয়োজন। 

বাসায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে গল্প করা, বেড়াতে যাওয়া, বাগান করা, সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ ইত্যাদি সবকিছুই পারে মন ভালো রাখতে। সকলের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া জরুরি। পরিবার, বিদ্যালয় সব জায়গায় ছেলেমেয়েরা বুলিংয়ের শিকার যাতে না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বয়ঃসন্ধিকাল যেনো ছেলেমেয়েদের তিক্ত কোনো অভিজ্ঞতা না দেয় যা তাকে ভবিষ্যতে মানসিক পীড়া দিতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

ছোটকাল থেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া যে জরুরি এটি সবাইকে জানতে হবে। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া শিখতে হবে। সব বয়সের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আর কোনো প্রাণ আত্মহত্যার শিকার না হোক। আমাদের সকলেই সচেতন হতে হবে। নইলে অচিরেই আত্মহত্যা মহামারি আকার নিতে পারে।

আসুন সচেতন হই। আত্মহত্যা রোধ করতে পদক্ষেপ নিই। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, ঢাকা

 

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050280094146729