দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সম্পন্ন হয়েছে। তাকে বর্তমানে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত হননি। তবে, তার সেরে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরোসার্জন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে অস্ত্রোপচার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ছয় সদস্যের চিকিৎসক দল ইউএনও ওয়াহিদার মাথার জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন।
নিউরো সার্জন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তার (ওয়াহিদা খানম) মাথায় ভাঙা হাড়ের সাত-আটটা টুকরা ছিল। সেগুলো আমরা জোড়া দিয়েছি। জোড়া দিয়ে হাড়গুলোকে জায়গা মতো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে আরো ছোট ছোট কাটা ছিল, সেগুলোও জোড়া দিয়েছি।’
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন আরো বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। তবে এটা মাথায় ইনজুরির ব্যাপার। তার মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং ব্রেনে আঘাত লেগেছে। ব্রেনের ওপর একটা চাপ ছিল, সেটা আমরা রিলিফ করেছি। তবে এখনই ক্লিয়ারলি আমরা বলতে পারব না যে রোগী ভালো হয়ে যাবেন।’
চিকিৎসক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সময় লাগবে। অন্তত ৭২ ঘণ্টা আমরা তার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। আমরা আশাবাদী রোগী ভালো হয়ে যাবেন, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন আরো বলেন, ‘ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ডান পাশটা অবশ ছিল, প্যারালাইজড। আশা করি, সেটাও সচল হয়ে যাবে। তবে কিছুদিন সময় লাগবে।’
গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা খানমকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা তাঁর বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও আঘাতে জখম করে।
পরে কোয়ার্টারের অন্য বাসিন্দারা তাদের চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়। তার বাবা রংপুরে চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে, নওগাঁ থেকে মাঝেমধ্যে মেয়ে ওয়াহিদা খানমের বাসায় বেড়াতে যেতেন তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বাবা ওমর আলী শেখ। ওয়াহিদা খানমের স্বামী রংপুরের পীরগঞ্জে ইউএনও হিসেবে কর্মরত আছেন।