ঠিকাদারের কাছে ইট, বালি সাপ্লাইয়ের টাকা পাওয়ার কথা বলে স্কুল ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।প্রায় দু’মাস পর ইউএনও’র হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার খুলে দেয়া হল বিদ্যালয়টি। এর ফলে নতুন ভবনের ক্লাস রুমে ফিরল ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।
ঘটনাটি ঘটে উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পাড়াগাঁও এলাকার গাংগাটিয়া এডুকো শিক্ষালয়ে।
জানা যায়, স্পেনের অর্থায়নে নির্মিত উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও এলাকার গাংগাটিয়া গ্রামে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এডুকো শিক্ষালয়ের ভবন। গত ১২ আগষ্ট ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ করে এডুকো কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করে আলফা কনক্রিট ইন্ড্রাস্ট্রিজ লি. নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
ভবন হস্তান্তর হলেও স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ওরফে ইসমাইল মেম্বার ভবন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কাছে ইট, বালি সাপ্লাইয়ের টাকা পাবে বলে দাবি করে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে ভবনটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছিলনা।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি’র লোকজনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা তালা খোলে দেয়ার জন্য ইউপি সদস্যকে চাপ দিলেও তিনি তা কর্ণপাত করেননি। বিষয়টি ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল আহসান তালুকদার অবগত হয়ে উক্ত ইউপি সদস্যকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে এনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি না করে তালা খোলে দেয়ার নির্দেশ দেন এবং সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারের নিকট পাওনা টাকার বিপরীতে তথ্য উপাত্ত দাখিলের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনার পর ইউপি সদস্য পাওনা টাকার বিপরীতে কোন তথ্য উপাত্ত দাখিল করেননি এবং ইউএনও’র সাথে এ বিষয়ে কোন যোগাযোগ করেননি। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন ভবনে বিদ্যালয়ের ক্লাসে যেতে পারছিলনা।
এ অবস্থায় প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থী প্রায় আধা কিলোমিটার অদুরে এডুকো’র পুরাতন টিনসেট ঘরে তাদের পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।এডুকো সংশ্লিষ্টগণ জানান, মেম্বারকে তালা খোলার বিষয়ে বলা হলে তিনি এলাকার লোকজনকে বলেন তালা খোলে দিলে তিনি আর টাকা পাবেন না। কারণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে চলে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল আহসান তালুকদার ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন অর রশিদকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে হাজির হন।
এর আগে উক্ত মেম্বার সেখানে উপস্থিত থাকলেও ইউএনও’র আগমনের কথা শুনে কেটে পড়েন। এডুকো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিদ্যালয় ভবনে মেম্বারের ঝুলিয়ে দেয়া তালা খোলে দেন ইউএনও।
এ সময় উচ্ছসিত শিক্ষার্থীরা উল্লসিত হয়ে নিজ নিজ শ্রেণি কক্ষে এসে হাজির হয়।
এডুকোর সংশ্লিষ্ঠরা জানান, বিদ্যালয়ের তালা খুলে দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণ তোলে দেয়া হয়। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা নতুন ভবনে ক্লাশ করার সুযোগ পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, ঠিকাদারের কাছে টাকা পেলেও বিদ্যালয়ে তালা লাগাতে পারেন না ইউপি সদস্য। আমি মেম্বারকে পাওনা টাকার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছিলাম কিন্তু তিনি আসেননি। ঠিকাদারের কাছে টাকা পেলেও তার দায়ভার এডুকো শিক্ষালয় নিবে না। আর বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার অধিকারও মেম্বারের নেই।
তিনি আরও বলেন, পুনরায় বিদ্যালয় কার্যক্রমে বাঁধার সৃষ্টি করলে মেম্বারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে উক্ত ইউপি সদস্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।