ইয়াবা সেবনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে অনেক শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

ইয়াবা সেবনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে অনেক শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে কলেজ-স্কুলে। শুধু শহর নয়, গ্রামের স্কুলেও এখন হাত বাড়ালেই মেলে মরণ নেশা ইয়াবা। গোটা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবার বিস্তৃতি। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান নিজেও স্বীকার করলেন, আশানুরূপভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না ইয়াবা। বয়স্ক মানুষ ছাড়িয়ে এটা ছড়িয়ে পড়েছে শিশু-কিশোরদের হাতেও। চিকিত্সকরা বলছেন, এখন যে রোগী আসছে তার মধ্যে উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই সর্বাধিক। এদের বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। নেশার টাকা জোগাড় করতে এরা ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে উঠছে।

চিকিত্সক ও মনোরোগ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে স্কুল-কলেজের শিশু ও কিশোররাই বেশি আসক্ত হচ্ছে। জঙ্গি সমস্যা যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেভাবেই গুরুত্ব দিতে হবে মাদকের বিরুদ্ধে। সামনে ভয়ঙ্কর সময় আসন্ন। মেধাশূন্য হচ্ছে জাতি। ইয়াবা এখন এত সহজ হয়েছে যে চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। অনেকেই বলছেন, আমাদের খোঁজ করা দরকার কোনো দেশ টার্গেট করে এটা করছে কি না। জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য টার্গেট করে ষড়যন্ত্র হতে পারে? কারণ বারবার বলার পরও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে আসছে, সড়ক পথে আসছে এই ইয়াবা। এই ব্যবসার সঙ্গে বড় লোকেরা জড়িত। তাদের যদি দৃশ্যমান কোনো শাস্তি দেওয়া যায় তাহলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা মিয়ানমারকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম নাফ নদীতে যেসব জেলে মাছ ধরে তাদের পরিচয়পত্র দিতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার এতে রাজি হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে ৫৪টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা আসছে। এটা রোধ করা যাচ্ছে না। কারণ এর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খল বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত। এই ব্যবসার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থের সম্পর্ক থাকায় নানা দিকের থাবা রয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, আমাদের সঙ্গে আগামী মাসে মিয়ানমারের বৈঠক হবে। সেখানে তাদের আমরা এটা বন্ধ করতে বলব, দেখি তাদের আগ্রহ কতখানি। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, এখনো আশানুরূপভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমরা স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রাম করছি, এর ভয়াবহতা নিয়ে। গ্রীনরোডে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে গতকালও একই প্রোগ্রাম করেছি। সবাই কাজ করছে, কিন্তু ফল মিলছে না। আসলে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল বলেছেন, রাজনৈতিক বা অন্য যে কোনো সংকটের চেয়েও এটা ভয়াবহ। যারা সেবন করে তাদের অবস্থা খুব খারাপ থাকে। জাতির জন্য এটা বড় ধরনের হুমকি। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে পরে সব প্রশাসন এক করে কাজ করলেও কোনো ফল মিলবে না। তিনি বলেন, ‘আমি এর মধ্যে এই ইয়াবা নিয়ে একটা গবেষণা করেছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ইয়াবায় সবচেয়ে বেশি আসক্ত হলো শিক্ষার্থীরা। অথচ এই শিক্ষার্থীরাই হলো জাতির ভবিষ্যত্। ইয়াবার কারণে পারিবারিক অশান্তি বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য এই ইয়াবাই দায়ী। আমাদের দেশে যেসব মাদক সেবী তাদের ৬০ ভাগই ইয়াবায় আসক্ত। বাকিরা ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকে আসক্ত।’ তিনি বলেন, ‘গত এক বছরের বেশি সময় আমার কাছে আসা রোগী, বিভিন্ন ক্লিনিকেও গিয়েছি আমি সব কিছু মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে ইবাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষকে একসঙ্গে মাঠে নামতে হবে।’

একজন চিকিত্সক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিভিন্ন দেশে মাদকের ব্যাপারে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেও এমনটা দরকার। ভৌগোলিক অবস্থার কারণে আমাদের দেশটা চোরাচালানের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ফলে চোরাচালানের সঙ্গে মাদকের একটা যোগসাজশ আছে। তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে দেশে যে ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে, মাদকের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ইয়াবা আসে তার অধিকাংশ আসে মিয়ানমার থেকে। ফলে এই রুট বন্ধ করতে না পারলে কোনো কিছুতেই কাজ হবে না। আমরা সরকারকে বলেছি। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা চাই মিয়ানমার তাদের সীমান্তের মধ্যে থাকা ইয়াবার কারখানাগুলো বন্ধ করে দিক। এই কারখানাগুলো বন্ধ করতে পারলে একটা রেজাল্ট পাওয়া যাবে। আমরা এই কারখানাগুলোর তালিকা মিয়ানমার সরকারকে দিয়েছি।’

আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে আবু মিয়া : ‘এমন কোনো মাদক নেই যা গ্রহণ করিনি। সব সময় একটা নেশার ঘোরে থাকতাম। মানুষের সাথে ঝগড়া বিবাদ করতাম। মাদক পাচার করে সংসার চালাতাম। তাই স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন সবাই আমাকে ঘৃণা করত। এখন নেশা করি না, সকলেই আমাকে ভালোবাসে। সারাদিন পরিশ্রম করে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালাই। মনেও শান্তি পাই। ইচ্ছা করলে সব মাদকাসক্ত আমার মত সুস্থ জীবন-যাপন করতে পারে।’ গত বুধবার এভাবে বলছিলেন অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে আসা এক মাদকাসক্ত যুবক আবু মিয়া। তিনি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী শশীদল গ্রামে বসবাস করেন।

কুমিল্লা সীমান্তের ৫ উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক অবৈধ স্পট দিয়ে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী দেশে আসছে। রাতে দু’ দেশের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। সীমান্তে মাদক পাচার, বহন, সংরক্ষণ ও বিপণন কাজে জড়িত রয়েছে জেলার কমপক্ষে ৫ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন। এছাড়াও সীমান্ত এলাকার যে শিশুদের হাতে বই-খাতা থাকার কথা সেই শিশুরাও এখন অর্থ লালসায় ও প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ছে মাদক চোরাচালানে। এ ব্যাপারে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ স্কুল-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রশাসনসহ সকল শ্রেণি-পেশার অংশগ্রহণে জনসচেতনতামূলক মাদক বিরোধী সভা-সমাবেশ ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন বিশিষ্টজনেরা।

আমাদের গলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, গলাচিপায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। উপজেলার পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের ছোট ছোট হাট-বাজারসহ কমপক্ষে ৩০টি স্পটে বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য। শহরের কোর্ট সংলগ্ন নার্সারির মধ্যে রাত হলেই জমে উঠে মাদকসেবীর আনাগোনা।

আমাদের ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের গ্রেফতার, সচেতনতা তৈরি, মাদকসেবীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলেও কোনোভাবেই মাদক সেবন ও ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। এখন মাদকসেবীরাই মাদক ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ছে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উঠতি বয়সের তরুণদের অভিভাবকরা।

আমাদের বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানান, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে মাদক ব্যবসা। মাঝে মাঝে প্রশাসনিক তত্পরতা থাকলেও গোপনে প্রকাশ্যে মাদকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে নতুন নতুন সিন্ডিকেট। উপজেলার প্রায় শতাধিক স্পটে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে পুরাতনের পাশাপাশি নতুন নতুন সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা পুলিশ ও র্যাবের হাতে বার বার আটক হলেও হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আমাদের গোপালদী বাজার (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, শিক্ষা, সাহিত্য ও তাঁত শিল্পের চারণক্ষেত্র আড়াইহাজার উপজেলা তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। পৌর এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভয়াল মাদকের আগ্রাসী থাবায় ‘প্রায় বিপন্ন’ জনপদে পরিণত হয়ে পড়েছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে সর্বনাশা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে এখানে মাদক বিক্রেতার পাশাপাশি মাদকসেবীর সংখ্যাও বাড়ছে।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043778419494629