কক্সবাজারের বালুখালী রোহিঙ্গা শিবির থেকে আরও অনেকের সঙ্গে সাত মাস আগে ভাসানচরে পৌঁছেছিলেন নুর জাহান। কিন্তু কক্সবাজারে থাকার সময় কাপড় সেলাই করে তাঁর যে আয় ছিল, তা ভাসানচরে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে একধরনের হতাশা কাজ করত তাঁর মধ্যে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সেলাই মেশিন পেয়ে তিনি সন্তুষ্ট। সামনে কোরবানির ঈদ। এবার ভিন্ন আমেজে নুর জাহানদের কোরবানির ঈদ কাটবে। কীভাবে ঈদ হবে, প্রশ্ন করতেই নুর জাহান জানালেন, সরকার তাঁদের জন্য অনেক গরু দিয়ে কোরবানির ঈদের আয়োজন করছে। তাই ভাসানচরে তাঁদের প্রথম ঈদুল আজহা আনন্দেই কাটবে।
নুর জাহানের সঙ্গে কথা শেষ করে গত শুক্রবার ভাসানচরের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ট্রলারবোঝাই গরু নামানো হচ্ছে। বগুড়া থেকে হাতিয়া হয়ে আসা এসব গরু যুক্ত হবে রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির ঈদের আয়োজনে। রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির ঈদের আয়োজনে দুই শতাধিক গরু থাকছে বলে জানা যায়।
ভাসানচরের আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের পরিচালক কমডোর এম রাশেদ সাত্তার বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো কয়েকটি দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে রোহিঙ্গাদের জন্য দুই শতাধিক গরু দিয়ে কোরবানির ঈদের আয়োজন করা হচ্ছে। শুক্রবার এসেছে ইসলামিক রিলিফের দেওয়া ১৩৫টি গরু। ভাসানচরে থাকা প্রতিটি পরিবারের মধ্যে কোরবানির ঈদের দিন মাংস বিতরণ করা হবে।
গরুবোঝাই ট্রলারের সামনে দাঁড়িয়ে কাজ তদারক করছিলেন বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাফর আলম। তিনি জানান, ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য ইসলামিক রিলিফ ১৩৫টি গরু বগুড়া থেকে এনেছে। কোরবানির দিন প্রতিটি গরু দিয়ে ৩৫টি পরিবারের মধ্যে গড়ে দুই কেজি মাংস দেওয়া হবে। এ ছাড়া ইসলামিক রিলিফ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য ৩৭৫টি গরু ও রোহিঙ্গা শিবিরের কাছাকাছি বসবাসরত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য দেড় শ গরু দিয়ে কোরবানির ঈদের মাংস বিতরণ করবে।
শুক্রবার থেকে কোরবানির গরুগুলো ভাসানচরে পৌঁছানোর পর, তা সেখানকার ভিআইপি ভবনের পাশের খোলা চত্বরে জড়ো করে রাখা হয়।
ভাসানচরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা আজ রোববার সকালে এই প্রতিবেদককে জানান, কোরবানির জন্য বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার দেওয়া গরু রোহিঙ্গাদের কাস্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিআইপি ভবনের খোলা জায়গা থেকে গরুগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় রোহিঙ্গারা আনন্দ মিছিল করেন। মূলত জীবিকা নির্বাহের নানা সামগ্রী ও সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে কোরবানির গরু দেওয়ার জন্য তাঁরা আনন্দ মিছিল করেন। মিছিলকারীরা গরুগুলোর গায়ে মালা ও বেলুন ঝুলিয়ে তাঁদের আবাসের কাছে নিয়ে যান।
মিছিলকারী রোহিঙ্গারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নিয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বলেও উল্লেখ করেন ভাসানচরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের চাপ কমাতে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত আট দফায় কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে।
এই মুহূর্তে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত এই দ্বীপে ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও পুরুষের সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৩১৯, ৮ হাজার ৭৯০ ও ৪ হাজার ৪০৯ জন। ভাসানচরে এখন পর্যন্ত জন্ম নিয়েছে ২৪৪ রোহিঙ্গা শিশু। সরকার বাকি ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।