উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি নিয়ে এবারও ভোগান্তি - দৈনিকশিক্ষা

উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি নিয়ে এবারও ভোগান্তি

নিজামুল হক |

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর যারা উচ্ছ্বাসে মেতেছিল তাদের মনেই এখন ভর করছে অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। এ উদ্বেগ যেমন কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে, তেমনি পরীক্ষার জন্য ছুটতে হবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে এটা ভেবেও।

 এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মোট উত্তীর্ণ হয় ৮ লাখ ৫৮ হাজার শিক্ষার্থী। এর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়।
 
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক এই কয়েকলাখ শিক্ষার্থীকে এবারও ভর্তি পরীক্ষা নামক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছুটে বেড়াতে হবে। অভিভাবকদেরও ভোগান্তি পোহাতে হবে, করতে হবে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ও।
 
একজন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চট্টগ্রাম, একই শিক্ষার্থীকে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য ছুটতে হবে দিনাজপুর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জন্য ছুটতে হবে সিলেটে। এভাবে ছুটতে হবে রাজশাহী এবং বরিশালেও। সন্তানের পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহাতে হবে অভিভাবকদের। কাটাতে হবে নির্ঘুম রাতও। কিন্তু কষ্টের পরও কতজনের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন-পূরণ হবে?


 
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও এই ভোগান্তির কথা চিন্তা করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি। পরে রাষ্ট্রপতিও গুচ্ছ পদ্ধতি পরীক্ষা নেয়ার আহ্বান  জানান। এরপরে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হতে পারে ।
 
আমিনা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে সারাদেশ ঘুরতে হবে। যাতায়াতের কষ্ট, নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে। বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে। অথচ মন্ত্রণালয় চাইলেই শিক্ষার্থীরা যে যার এলাকায় বসেই এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেত।
 
এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০ হাজারেরও কম। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। সে হিসাবে ভর্তির আশা দেখছে জিপিএ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে থাকা শিক্ষার্থীরাও। ২০১৬ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এবার এ সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার কমেছে। তবে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলে সুযোগও মিলে যেতে পারে, এমন আশাই দেখছে শিক্ষার্থীরা। এবার জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে রয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার শিক্ষার্থী। কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পাবে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী।
 
তবে কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে সুযোগ না হলেও উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবার সুযোগ নেই কারো। দেশের ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৩ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার। এর বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সারাদেশের ৫১৬টি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পড়ানো হয়। অনার্সে (স্নাতক) ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৪ লাখের বেশি। সরকারি  মেডিক্যাল কলেজগুলোতেও আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। শিক্ষাবিভাগ বলছে, দেশে সব মিলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে আসন রয়েছে ১৩ লাখেরও বেশি।
 
পছন্দের তালিকায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

এইচএসসি উত্তীর্ণ অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পছন্দ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪০টি । আর এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এই ৫০ হাজার আসনের জন্যই লড়তে চায় কয়েকলাখ শিক্ষার্থী। কেন পছন্দের তালিকায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ভর্তুকি দেয়। এ কারণে বলতে গেলে একপ্রকার বিনা টিউশন ফিতে পড়াশোনা করা যায়। আবাসিক হলে থেকে পড়াশোনার সুযোগ আছে। লেখাপড়ার মানও ভালো। চাকরির বাজারে সনদের গুরুত্বও বেশি।
 
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৩টি। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ৯১টির। আয়শা ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, দেশে শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও হাতে গোনা কয়েকটি ভালো মানের। অথচ ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি অতি বেশি। ফলে এত টাকা দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অনেকেরই জন্য সম্ভব নয়। বাকি যে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার টিউশন ফি কম হলেও তাদের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোনো লেখাপড়া হয় না বলেই চলে। আর চাকরির বাজারে সনদের গুরুত্ব নেই বললেই চলে। এ কারণে কষ্ট হলেও প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অংশ নিতে চায় শিক্ষার্থীরা।

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054969787597656