উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদে কর আরোপের প্রস্তাব সিপিডির

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদে কর আরোপের প্রস্তাব করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি (সিপিডি) ডায়ালগ। সংস্থাটির হিসাবে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ সম্পদ কর সরকার আহরণ করছে, তার পরিমাণ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। দেশে জিডিপির হার যেভাবে বাড়ছে তার তুলনায় রাজস্ব আহরণ বাড়ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে দেশের মানুষের আয় দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু আয়ের বৈষম্যও দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। আবার আয় বৈষম্যের চেয়ে সম্পদের বৈষম্য দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। তাই সেখানে সম্পদের বৈষম্য হ্রাস করে ন্যায্যতা নিয়ে আসতে হবে। ঐ বৈষম্য হ্রাস ও রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশে উত্তরাধিকার কর প্রচলন প্রয়োজন। এজন্য একটি কৌশলগত পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

বুধবার গুলশানের একটি হোটেলে ‘স্টেট অ্যান্ড স্কোপ অব প্রোপার্টি ট্যাক্সেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে সিপিডি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। মূল উপস্থাপনায় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে যে সম্পদ পাওয়া যায় তার থেকে বিশ্বে অনেক দেশে বড় কর আদায় হচ্ছে। জিডিপির হিসাবে উন্নত বিশ্বে সম্পদ কর প্রায় ১০ শতাংশ আদায় হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ আদায় হচ্ছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে আদায় হচ্ছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। যে দেশে যত আয় বাড়ে সে দেশে তত সম্পদ কর ধার্য করা হয়। আনুপাতিক হারে এটি বাড়ানো হয়। সম্পদ করের সঙ্গে উন্নয়নের একটি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন জিডিপি যদি ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায় সেক্ষেত্রে সম্পদ কর শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ার কথা। অথচ বাংলাদেশে যেটি আদায় হচ্ছে তার পরিমাণ আফ্রিকার দেশের সঙ্গে তুলনীয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাঁচ ধরনের সম্পদ কর রয়েছে, ভূমি উন্নয়ন কর, ওয়েলথ সারচার্জ, হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ও গিফট ট্যাক্স। এর মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি যখন নিজেদের মধ্যে দান বা হেবা হয়, সেখানে কোনো ট্যাক্স নেই। আমরা এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি। শুধু উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই ট্যাক্স অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া কৃষি খাত থেকে এই কর আহরণ করা হবে কি না সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, সরকার যখন নিজে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে, যেমন ইকোনমিক জোন কিংবা বড় কোনো প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ করে তখন তার ট্যাক্স দেয় না। এখানে সরকার-ব্যক্তি খাতের সঙ্গে এক ধরনের বৈষম্য হচ্ছে। আগে সরকারি প্রকল্পে আমদানির ক্ষেত্রে কর দেওয়া হতো না, এখন দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ অ্যাকাউন্টিং হিসাবে এটি যোগ হচ্ছে। ভূমির ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে। তিনি বলেন, এখন সম্পদে সারচার্জ ৩৫ শতাংশ রয়েছে। এটাকেও আমরা উচ্চ মনে করছি। ট্যাক্স সিস্টেমের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যেও বৈষম্য রয়েছে। এটাও দূর করতে হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সম্পদ করের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। জমি ও বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কর আরোপ হচ্ছে না। এখানে বৈষম্য রয়েছে। জমির ওপর বিনিয়োগ বাড়ছে, কারণ জমির দাম অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। এটার বড় কারণ এই বিনিয়োগে বড় ধরনের কর দিতে হয় না। ভূমিমন্ত্রী বলেন, সনাতনী পদ্ধতির তুলনায় অনলাইনে ভূমিকর আদায়ে একধরনের বিপ্লব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সুবিধাবাদীরা সব সময় গ্রে এরিয়াতে হাঁটতে চায়। সরকার ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমিতে খাজনা বা কর ছাড়ের সুযোগ রেখেছে। তবে অনেকে এ সুবিধা নিতে অকৃষি জমিকে কৃষিজমি হিসেবে দেখাচ্ছে। কিংবা বিভিন্ন স্থানে থাকা কৃষিজমিকে আলাদাভাবে দেখাচ্ছে। এ জন্য আমরা নতুন একটি ব্যবস্থা চালু করেছি, যার নাম সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ বা সিএলও। সিএলওর অধীনে একটি তথ্যভাণ্ডার করে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। এর ফলে একজন ব্যক্তির নামে সারা দেশে যত জমি রয়েছে, তা ঐ তথ্যভাণ্ডারে চলে আসবে। যে কেউ এটা দেখতে পারবে। ফলে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে।

সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সরকার অনেক সহজ নীতি নিচ্ছে, কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারণ, এখানে দুর্নীতিবাজদের একটা ত্রয়ী কাজ করছে। এটা রাষ্ট্রের একটা বড় সমস্যা। যে দেশে ব্যাংক লুট হয়, অর্থ পাচার হয় এবং এর মাধ্যমে বিদেশে বিপুল সম্পত্তি কেনা হয়, সে দেশে মানুষ কর দিতে নিরুত্সাহিত হবে এটাই স্বাভাবিক। খতিয়ান ও জমি নিবন্ধনে ঘুষের লেনদেন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো বন্ধ করলে কর প্রদানের হার এমনিতে বেড়ে যাবে।

সাবেক গণশিক্ষা মন্ত্রী আফছারুল আমীন আর নেই - dainik shiksha সাবেক গণশিক্ষা মন্ত্রী আফছারুল আমীন আর নেই ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করের বিধান বাতিল চায় সিপিডি - dainik shiksha ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করের বিধান বাতিল চায় সিপিডি স্কুল ফাঁকি দিয়ে পার্কে আড্ডা দেয়া ৬০ শিক্ষার্থী আটক - dainik shiksha স্কুল ফাঁকি দিয়ে পার্কে আড্ডা দেয়া ৬০ শিক্ষার্থী আটক স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের মে মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের মে মাসের এমপিওর চেক ছাড় এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার বদলে ছয় ছাত্রী বিয়ের পিঁড়িতে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার বদলে ছয় ছাত্রী বিয়ের পিঁড়িতে লিফট কিনতে পাবিপ্রবির প্রতিনিধি দলের তুরস্কে যাওয়া স্থগিত - dainik shiksha লিফট কিনতে পাবিপ্রবির প্রতিনিধি দলের তুরস্কে যাওয়া স্থগিত সর্বজনীন পেনশন চালু হলে টাকা রাখার জায়গা পাব না : অর্থমন্ত্রী - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশন চালু হলে টাকা রাখার জায়গা পাব না : অর্থমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003856897354126