শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলার প্রতিবাদে আজ বুধবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন তারা। একই সঙ্গে তাদের অন্য দাবিগুলোও মেনে নেয়ার দাবি জানান।
গতকাল শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদযাপনের অভিযোগ ওঠে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ভিসি। এর প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। পাশাপাশি আজ থেকে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বললেন ববি উপাচার্য
অন্যদিকে ভিসি ড. ইমামুল হক দাবি করেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। বিকেলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের নিয়ে চা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে, গতকাল ভিসির একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজিত বৈকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (বিইউডিএস) আয়োজিত আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ভিসি ওই অনুষ্ঠানে বলেন, আজকের এই স্বাধীনতা দিবসে যারা এমন কাজ (আন্দোলন) করে, তারা রাজাকারের বাচ্চা ছাড়া কিছুই না। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এরা রাজাকারের বাচ্চা, স্বাধীনতা বিরোধী ছাড়া এই কাজ কেউ করতে পারে না। এ সময় তিনি ব্যথিত হৃদয়ে বলেন, তোমরা বুঝতেই পারছ, আমার এখানে (বিইউডিএস’র অনুষ্ঠানে) আসার ইচ্ছা ছিল না; তবুও এলাম। তোমরা যা করছ তা একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে কাম্য নয়। তোমরা নিজেদের শিক্ষকের সমান মনে কর।
আন্দোলনরত আইন বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউর রহমান রাজু বলেন, ভিসি বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের বৈকালীন অনুষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষেধ জানিয়ে দেয়। ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এবং ২১ ফেব্রুয়ারিসহ সকল জাতীয় দিবসগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক সবার উন্মুক্ত অংশগ্রহণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ও বিকালের অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানাই।
ভিসি ড. ইমামুল হক বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফ্লাগস্টান্ডে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। দিনব্যাপী শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকদের স্ত্রীসহ চা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বরিশালের গণ্যমান্যদের নিয়ে এ চা-চক্রের আয়োজন করা হলেও শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য দুপুরের প্যাকেটজাত খাবার আবাসিক হলগুলোতে পৌঁছানো হয়। শিক্ষার্থীরা হলের দেয়া খাবার ফিরিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বানচালের চেষ্টা চালায়।
ভিসি বলেন, যারা আন্দোলনের নামে স্বাধীনতা দিবসের মতো জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান বানচাল করার ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের রাজাকার বলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় একটি কুচক্রী মহল তাদের স্বার্থের জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় তারা সুবিধা করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।