ভোলার চরফ্যাশনে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) এইচএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় ‘উন্মুক্তভাবে’ নকল ও অর্থ বাণিজ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার ফাতেমা মতিন মহিলা ডিগ্রি কলেজ বাউবি স্টাডি সেন্টারসহ ৫৪০ পরীক্ষা কেন্দ্রে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান এইচএসসি পর্যায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় গতকাল শুক্রবার সকালে ও বিকেলে অনুষ্ঠিত ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় বাধাহীনভাবে শিক্ষার্থীদের বই ও উত্তরপত্র দেখে লিখতে দেখা গেছে। যা ঠেকাতে কারো কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। কেন্দ্রটি পরিদর্শনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অনুপস্থিত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।
এইচএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রিন্সিপালের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র নেয়ার জন্য শিক্ষক ও অফিস সহকারীকে জন প্রতি ২ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর শিট নেয়ার জন্য ২০০ করে দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। ‘ওপর মহলকে ম্যানেজ’ করে বাধাহীনভাবে পরীক্ষা দেয়ার জন্যেও টাকা দিয়ে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী কান্নাভরা কণ্ঠে দৈনিক শিক্ষাডটকমে বলেন, কলেজটির অফিস সহকারী হৃদয় ও শিক্ষক খোরশেদ টাকা দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য বলে। কিন্তু দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে সামনের বেঞ্চে একা বসিয়ে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়।
এছাড়া আরও একাধিক শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অফিস সহকারী হৃদয় জনপ্রতি ২ হাজার টাকা ঘুষের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকিয়ে রাখেন। তারা আরও জানান, শিক্ষক খোরশেদসহ সংশ্লিষ্টরা আমাদের দুই হাজার করে টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। যারা টাকা দেবেন তাদের এক পাশে ও টাকা না দিলে তাদের আরেক পাশে দাঁড়াতে বলেন শিক্ষক খোরশেদ।
জানা গেছে, চরফ্যাশন মহিলা কলেজের বাউবির এ কেন্দ্রকে ঘিরে আগেও কলেজ অধ্যক্ষ মো. হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। বাউবি স্টাডি সেন্টার ভাঙচুর, কাগজপত্র তছরুপের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে শোকজ করেছিলেন।
এর আগেও বাউবি কর্তৃপক্ষ এইচএসসি এবং বিএ-বিএসএস প্রোগ্রামের আইডি কার্ড বাবদ ৩ হাজার ৫০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ তদন্ত ও প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দেন। বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে বাউবি এইচএসসি পর্যায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে মোট ১১২জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস ক্লার্ক মো. হৃদয় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাদের প্রবেশপত্র দেয়া হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অসত্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান রাহুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরীক্ষায় নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা যদি দায়িত্বে অবহেলা করে থাকেন এবং বাউবি স্টাডি সেন্টারের সংশ্লিষ্টরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যদি অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে।