উপজেলাভিত্তিক সমতা রেখে এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি হচ্ছে - দৈনিকশিক্ষা

উপজেলাভিত্তিক সমতা রেখে এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের সব উপজেলা ও সংসদীয় আসনে সমতা বজায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সুবিধাবঞ্চিত দুর্গম চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা ও নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। তৈরি করা তালিকায় অনেক উপজেলা ও সংসদীয় এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানেরও নাম না থাকায় তা সংশোধন করা হচ্ছে। তাই, তালিকা প্রণয়নে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে বলে দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এমপিওভুক্তির যে তালিকা করা হয়েছে। সেটি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে তা আরও যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এই তালিকায় অনেক উপজেলা ও সংসদীয় এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানেরও নাম নেই। আবার অনেক এলাকার দু’তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আর এই তালিকা অনুযায়ী এমপিওভুক্তি হলে জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন। বিভিন্ন মহলে নানা সমালোচনাও তৈরি হতে পারে। এ জন্য সমতার ভিত্তিতে সব উপজেলা ও সংসদীয় আসনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংসদ সদস্যরা (এমপি) এমপিওভুক্তির জন্য নিজ নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছেন। আবার অনেকে এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকাও দিয়েছেন যেগুলো আদৌ এমপিও সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়। কেউ কেউ যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দ ও অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করেছেন। এ জন্য তালিকা তৈরিতে এমপিদের অনেক সুপারিশ আমলে নেয়া সম্ভব হয়নি।

এমপিও কমিটির প্রধান  ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব  জাবেদ আহমেদ বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে বিশেষ বিবেচনায় তালিকার বাইরে দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলো মূলত দুর্গম ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় অবস্থিত। এমপিওভুক্তির তালিকার বাইরে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গত বছরের ১২ জুন জারি করা ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮’ অনুযায়ী যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে এমপিওভুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর আগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশের পরও অনেক এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। বিতর্কিত ব্যক্তি, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের নামে প্রতিষ্ঠিত এবং এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করেনি এমন প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির তালিকায় ছিল। এমনকি ভাড়া বাড়িতে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। অপরদিকে সব শর্ত পূরণ করলেও অনেক প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে যায়।

এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্তির তালিকা ‘রিভিউ’ (যাচাই বাছাই) করতে তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দীন আহমেদকে দায়িত্ব দেন।

এবার এমপিওভুক্তিতে সেই পরিস্থিতি দেখতে চান না শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি এই কার্যক্রমকে পুরোপুরি বিতর্কের বাইরে রাখতে চান। এমপিওভুক্তির তালিকা প্রণয়নে কোনো স্বজনপ্রীতির আশ্রয় না নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন মন্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য গত আগস্টে বিজ্ঞপ্তি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে এমপিও সুবিধা পেতে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। এ সময় মোট ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্যে ভুঁইফোড় ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ৯ হাজার ৬১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমপিও নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করে ২ হাজার ৭৬২টি। কিন্তু অর্থের অভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারছিল না।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। এতে মোট ১হাজার ২৪৭ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়।

অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে তাঁর পরিবর্তে দেওয়া বাজেট বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি সুসংবাদ দিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আমি প্রথমে আলোকপাত করতে চাই। দীর্ঘদিন আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানাবিধ কারণে এমপিওভুক্তি কার্যক্রমটি বন্ধ ছিল। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তি কার্যক্রমের জন্য এ বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখা হয়েছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ৯ হাজার ৬১৪টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করতে লাগবে ৪ হাজার ৩৯০ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা। তবে এই তালিকা কাটছাঁট করে যদি যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তি করা হয়, তাহলে লাগবে ১ হাজার ২০৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর স্বীকৃতির মেয়াদ বিবেচনা না করে এমপিও দেয়া হলে প্রয়োজন হবে ১ হাজার ২১০ কোটি ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এছাড়া শর্ত শিথিল করে আরও প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মোট ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।

বর্তমানে দেশে ২৬ হাজার ৮১টি সাধারণ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা, ৭৭৫টি কারিগরি কলেজ এবং কারিগরি স্কুলসহ প্রায় ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। 

২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আন্দোলনে নামেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তারা এমপিওভুক্তির (বেতনের সরকারি অংশ) দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আবার অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানও এমপিও সুবিধা পেতে আবেদন করেছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো সরকার থেকে সাহায্য (এমপিও) পায় না। তবে এগুলোর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আরোপিত শর্ত অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জন করেছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039939880371094