উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

শরীফুল আলম সুমন |

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের ঘুষ বাণিজ্য ছাড়াও উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকতার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক পদে থাকা ও ভাতা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা, শিক্ষকদের দায়িত্ব বণ্টনে অনিয়ম এবং উপাচার্য ভবনে না থাকার অভিযোগ আছে। অবশ্য উপাচার্য অধ্যাপক আলাউদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি  বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই অসত্য। আসলে যারা বঞ্চিত হয় তারাই নানা ধরনের কথা বলে থাকে।’

জানা গেছে, উপাচার্যের বিরুদ্ধে এক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়।

জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাসে নিয়মিত থাকেন না—এমন অভিযোগ আমার কাছে নেই।’ অন্য অভিযোগের বিষয়েও তাঁর জানা নেই বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক মান্নান বলেন, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক না থাকলে উপাচার্য অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যকে বলা হয়। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকপ্রতি ১০-১২ লাখ টাকা, কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮-৯ লাখ টাকা এবং কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ছয়-সাত লাখ টাকার লেনদেন হয়। আর এই লেনদেনে হাত রয়েছে একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও উপাচার্যের দুজন একান্ত সচিবের (পিএস) বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের আপন ভাইয়ের ছেলে, শ্বশুরকুলের আত্মীয়, ছেলের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় এবং আঞ্চলিকতা বিবেচনা করে সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেশি নিয়োগ পেয়েছেন।

স্বজনপ্রীতি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন দায়িত্ব বণ্টনেও। বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার সায়েন্সের সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া একজন প্রভাষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী প্রক্টরের। অথচ তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-

জামায়াতপন্থী একজন শিক্ষক নেতার ছোট ভাই। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের চেয়ারম্যান এবং রিজেন্ট বোর্ডের একজন সদস্য, বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রধান, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্টসহ অনেক বিএনপিপন্থী শিক্ষককে বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শহীদ জননী জাহানারা হলের প্রভোস্টও বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত, অথচ এখন তাঁকে আবার নতুন করে প্রক্টর করার চেষ্টা চলছে।

বর্তমান উপাচার্য তাঁর নিজের দায়িত্বের পাশাপাশি একাধিক অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি বিজেনস স্টাডিজ অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন। এসব পদ থেকে তিনি ভাতাও নিচ্ছেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার সম্মানী বাবদ তিনি ভিসি হিসেবে ৬১ হাজার ৯৯০ টাকা এবং বিজনেস স্টাডিজ ও সামাজিক অনুষদের ডিন হিসেবে একই কাজের জন্য ৪৫ হাজার ৫৯০ টাকা সম্মানী নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় চার বছর ধরে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ খালি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, উপাচার্যের উদাসীনতায় গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে নিয়োগের যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হচ্ছে না। কারণ তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় একক নেতৃত্বে চালাতে চান।

এসব অভিযোগ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীও আমার কাছে কোনো নিয়োগের সুপারিশ করেনি। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছাড়া ডিনের দায়িত্ব দেওয়া যায় না। দুই অনুষদে ডিনের যোগ্য শিক্ষক নেই। তাই আমি দায়িত্ব পালন করছি। আর প্রোভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগের ব্যাপারে আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। সরকার যখন মনে করবে তখনই এই দুই পদে নিয়োগ দেবে।’

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে একাডেমিক কাউন্সিলের নির্বাচনের মাধ্যমে তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি রিজেন্ট বোর্ডে নির্বাচিত হওয়ার কথা, যা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৮(ঞ) পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে। কিন্তু উপাচার্য তা ভঙ্গ করে তাঁর অনুগত তিনজন শিক্ষককে নির্বাচন ছাড়াই মনোনয়নের মাধ্যমে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য করেছেন। এ ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তিনি পক্ষপাতিত্ব করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের জন্য বাংলো তৈরি করা হয়েছে। অথচ উপাচার্য প্রায় এক বছর যাবৎ সেখানে না উঠে উপাচার্যদের জন্য আগে করা বাসায় নাম মাত্র এক হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অন্যতম আইনগত প্রক্রিয়া হচ্ছে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য তা মানছেন না। কিছুদিন আগে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (ইএসআরএম) বিভাগের একজন শিক্ষককে প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছাড়াই অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। উপাচার্য তাঁর পছন্দের একক ব্যক্তিকে একাধিক দায়িত্বে বহাল রেখেছে। একজন শিক্ষক একই সঙ্গে ডিন, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘সরকারের নানা কাজে ঢাকায় আসতে হয়। তবে কাজ শেষ হয়ে গেলেই আমি ক্যাম্পাসে ফিরে যাই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত রেখে আসি কোন কাজে কোথায় যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি যেই দায়িত্বের উপযোগী তাঁকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে যাঁরা দায়িত্ব পাচ্ছেন না তাঁরাই নানা রকম কথা বলছেন। আর ভিসির বাংলোতে সিকিউরিটি ব্যবস্থা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হযনি। আর আমি যেহেতু একা থাকি, তাই এত বড় বাড়িতে থাকছি না। তবে এই বাংলো ভিআইপি গেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044820308685303