এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণে ঝুঁকিই বেশি - দৈনিকশিক্ষা

এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণে ঝুঁকিই বেশি

আমিরুল আলম খান |

করোনায় থমকে গেছে সারা বিশ্ব। শিক্ষা পড়েছে মহাসংকটে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। শিশুরা ঘরে বন্দি। চিন্তিত দুনিয়ার মানুষ। কী ঘটবে এই প্রজন্মের? অনেকের আশংকা এরা অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। অনেকের মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় হতে পারে স্থায়ী। বাংলাদেশে করোনা হানা দেয় মার্চের মধ্যভাগে। সেই থেকে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি। ছুটি অন্য সব খাতেও ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপরও অনেক কিছুই চালু রাখতে হয়েছিল; অনেক কিছুই আবার চালু করতে হয়েছিল। সে সব নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। কিন্তু জীবন ও জীবিকার মামলায় মানুষ জীবিকার তাড়নায় হার মানে। না মেনে উপায় ছিল না।

করোনার বলি হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। সারা দুনিয়ায় করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ১০ লাখের উপর। আক্রান্ত সাড়ে তিন কোটির বেশি। এ হিসেব সরকারি। তবে, মহামারি বিষয়ক একটি ভারতীয় গবেষণা সংস্থার দাবি, শুধু ভারতেই করোনায় আক্রান্ত ছয় কোটি মানুষ। কাজেই সরকারি হিসেব নিয়ে সারা দুনিয়ায় মানুষের মনে সংশয় প্রচুর। বাংলাদেশেই মৃত্যু সংখ্যা ৫ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত তিন লাখ ৬৩ হাজার। 

সে যাই হোক, অন্যান্য দেশের মতই আমাদের দেশের শিক্ষাও গভীর সংকটে পড়েছে। তবে, উন্নত দুনিয়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আমরাও করছি না, তা নয়। তবে, নানা কারণে আমাদের সামর্থ্য অনেক কম। প্রথমত আমরা অস্বচ্ছল। দেশে অতি স্বল্প সংখ্যক মানুষকে অনলাইন শিক্ষার সংস্পর্শে আনা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস পরিচালনায় পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। প্রযুক্তিগত সুবিধার সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতার অভাব, মানসিক প্রস্তুতির অভাব এ সবই ছিল এবং আছে। তবু, সীমিত পরিসরে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে। কিন্তু তার মান নিয়ে হাজারও প্রশ্ন। তারচেয়ে বড় প্রশ্ন কতভাগ শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষার আওতায় আনা গেছে। 

এ কথা ঠিক, দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রায় সব জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু ইন্টারনেট পরিসেবা তত নয়। তারপর স্মার্টফোন ছাড়া শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই দূর শিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যায় না। তাছাড়া আমাদের মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট চার্জ অনেক বেশি। মড়ার উপর ঘাড়ার ঘা হয়ে আছে ভ্যাট আর নানা শুল্ক। ফলে দেশে এ খাতে ব্যয় সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। প্রথম দিকে এক গিগাবাইট কিনতে ভ্যাটসহ খরচ হত মাত্র ৩৪৫ টাকা। কিন্তু এখন তথাকথিত ফাইভ-জির নামে ১০ জিবিতেও সপ্তাহ চলে না। ইন্টারনেটের গতি বাড়ে নি। কিন্তু খরচ বেড়েছে বহু গুণ।
 
এ হল একটা দিক। দুনিয়া জুড়ে শিক্ষার ধরন বদলে যাচ্ছে। অনেক দেশেই এখন দ্বাদশ শ্রেণির আগে পরীক্ষাই তুলে দেয়া হয়েছে। পরিবর্তে চালু করা হয়েছে ফরমেটিভ অ্যাসেসমেন্ট। এদেশে স্কুল বেইজড অ্যাসেমেন্টের নামে তা চালু করতে গিয়ে সফল হওয়া যায়নি। তার বড় কারণ রাজনৈতিক মাস্তানি। শিক্ষকদের উপর মাতব্বর শ্রেণির খরবদারি। পরিবর্তে চেপে বসেছে আরও দুটো পাবলিক পরীক্ষার দৈত্য। দুনিয়ায় এখন পাবলিক পরীক্ষার ধারাই বাতিল করা হচ্ছে; আমরা নতুন করে চাপাচ্ছি।

কিন্তু ঘাঁড়ের উপর বসে আছে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বোঝা। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে এই পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই পরীক্ষা আটকে যায়। সে পরীক্ষা আজ পর্যন্ত নেয়া যায় নি। করোনার কারণে সে ঝুঁকি নেয়া সমীচীন ছিল না। 

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি নিজে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সুতরাং অন্য অনেকের চেয়ে তার উপর মানুষের এ বিষয়ে আস্থা অনেক বেশি। গণমাধ্যমে তার দেয়া সবশেষ বক্তব্য থেকে মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেবার মত পরিবেশ এখনও হয় নি। তিনি আরও জানিয়েছেন, পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের অন্তত এক মাস সময় দিতে হবে। সে হিসেবে আগামী নভেম্বরের আগে এ পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয়। কিন্তু ততদিনে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন আশা করা বোধহয় ঠিক নয়। কেননা, শীতের সাথে এ রোগের বাড়বাড়ন্ত সম্পর্ক। করোনা মূলত সর্দি-জ্বর-কাঁশির সাথে শ্বাসকষ্টের। এখনও পর্যন্ত করোনার কোন ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা ওষুধের চেয়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারের দিকে বেশি নজর তাদের। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষার শেষ ধাপে পৌঁছিয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োগের জন্য আগামি শীত মৌসুম পার হয়ে যাবে। শীতের দেশগুলোয় শরৎ শেষের পথে। ইতিমধ্যে ইউরোপে নতুন করে করোনা ছড়াচ্ছে। তাই উদ্বেগ বাড়ছে। 

তাহলে বিকল্প কি? শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তাদের কাছে অনেক বিকল্প প্রস্তাব আছে। সেগুলো কী কী আমরা জানি না। তবে কয়েকটি বিকল্পের কথা বাজারে চাউর আছে। বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা, নম্বর কমিয়ে পরীক্ষা, স্বল্প সময়ে পরীক্ষা, সকাল-বিকেলে পরীক্ষা ইত্যাদি। এসব আয়োজনের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়াতে হবে। ব্যবস্থাপনায় লোকবল বাড়াতে হবে। অনেক ঝামেলা আছে। শেষ বিকল্প অটো প্রমোশন। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। 

যদি অক্টোবরের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষ করা যেত তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু দেশে করোনায় সংক্রমণ হার পাঁচ ভাগের নীচে নেমে আসা পর্যন্ত পরিস্থিতি তেমন অনুকূলে ভাবার কারণ নেই। কিন্তু সবশেষ খবর অনুযায়ী এ মৌসুমে সেটা সম্ভব বলে মনে হয় না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট বলছেন, স্কুল কলেজ খোলার মত পরিবেশ দূর পরাহত। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণে ঝুঁকিই বেশি। মানুষের জীবন নিয়ে তেমন ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। কাজেই, বকেয়া এই পরীক্ষা গ্রহণের সম্ভবনা নেই বলাই ভাল। 

করোনা সারা দুনিয়াকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। উন্নত দেশগুলোও তা সামাল দিতে পারে নি। এমন কি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স বা রাশিয়ার মত উন্নত দেশও পরাভূত হয়েছে। এ বাস্তবতা স্বীকার না করে উপায় নেই। কয়েকটি উন্নত দেশ স্কুল খুলে দিতে গিয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। সে কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ার খুব বেশি সুযোগ বা সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। 

লেখক : আমিরুল আলম খান, শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান যশোর শিক্ষা বোর্ড।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063750743865967