একজনের সাটিফিকেট তুলে নেয় আরেকজন, শিক্ষাবোর্ডে জালিয়াত চক্র বেপরোয়া - দৈনিকশিক্ষা

একজনের সাটিফিকেট তুলে নেয় আরেকজন, শিক্ষাবোর্ডে জালিয়াত চক্র বেপরোয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক |

টাকার বিনিময়ে জিপিএ ফাইভ, ক্যমরিয়ান, কুইন্স, ট্রাস্টসহ বিতর্কিত কলেজগুলোকে টাকার বিনিময়ে একাদশে ভর্তিতে বেশি আসন বরাদ্দ দেয়া এবং ম্যানুয়াল ভর্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর এবার ধরা পড়েছে সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনা। জিপিএ ফাইভ বিক্রির হোতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অদ্বৈত কুমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি শিক্ষাবোর্ড। বরং প্রতিবেদন লেখার জন্য দৈনিক শিক্ষা ও মাছরাঙ্গ টিভির সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করেছেন। শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ দিয়েছে। এতে অদ্বৈতরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়ম, ঢাকা কলেজ থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতক (সম্মান) পাস করা মো. আবু সুফিয়ান দিন কয়েক আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করতে গেলেন, কিন্তু পারছিলেন না। কারণ, অনলাইন আবেদনে এসএসসি, এইচএসসির রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিলে মা–বাবার ভিন্ন নাম দেখাচ্ছিল। আগেও একবার বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সময় ঢাকার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে একই সমস্যায় পড়েন সুফিয়ান। তখন একজন পরামর্শ দেন কেন্দ্র পরিবর্তন করে দিতে। পরে রাজশাহীতে কেন্দ্র দিয়ে পরীক্ষা দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবার প্রাথমিকের শিক্ষক পদে ঠিকমতো আবেদনই করতে পারেননি সুফিয়ান।

 
আসল মো. আবু সুফিয়ান (বাঁয়ে ) ও নকল মো. আবু সুফিয়ান (ডানে)

 

পরে আবেদনকাজের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পরামর্শে ঢাকা বোর্ডে যান আবু সুফিয়ান। সেখানে গিয়ে যা জানলেন দুই বছর আগেই কেউ একজন তাঁর নিজের নাম আংশিক এবং বাবা ও মায়ের নাম পুরোটাই পাল্টে ফেলেন। এখানে-সেখানে কথা বলে সমাধান না পেয়ে হতবাক আবু সুফিয়ান যান নিজের বিদ্যালয় মানিকগঞ্জের শিবালয় সরকারি হাইস্কুলে, যেখান থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন। শিক্ষকেরা জানালেন, তিনিই ‘আসল’ সুফিয়ান। প্রতিকার চেয়ে লিখিতভাবে আবেদন করেন ঢাকা বোর্ডে। 

 গত মঙ্গলবার দৈনিক শিক্ষাকে বিস্তারিত জানান ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কামার ভাকলা গ্রামের আবু সুফিয়ান ২০০৮ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন শিবালয় সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকা কলেজ থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) পাস করেন। তাঁর ইংরেজি নামের বানান (Md. Abu suphian)।

আর তাঁর বাবার নাম মো. সোনামুদ্দিন ও মায়ের নাম রাজিয়া বেগম। কিন্তু ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকা বোর্ডের নাম সংশোধন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবু সুফিয়ানের ইংরেজি নাম সামান্য পরিবর্তন করে করা হয় (Md. Abu sufian)। একই সঙ্গে তাঁর বাবার নাম পুরোটাই পরিবর্তন করে করা হয় মো. শহীদুল ইসলাম (ইংরেজিতে)। একই বছরের ৪ ডিসেম্বরের আরেক সভায় তাঁর মায়ের নামও পুরোপুরি পাল্টে করা হয় মোছা. জিন্নাতুন বেগম। এ কাজে বোর্ডের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা আসল সুফিয়ানের।

গত রোববার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়ে খোঁজ নিলে ওই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসচিব (বৃত্তি) মীর আশরাফ আলী মূল নিবন্ধন বই বের করে দেখেন, ওই দুই তারিখেই পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে। ওই সময়ে তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন না। ৩০ অক্টোবরের সভায় যে পরিবর্তনটি হয়েছে, তাতে ‘আবেদনকারী’ প্রামাণ্য কাগজ হিসেবে নিজের ও বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং বোনের সনদ জমা দেন। আর ৪ ডিসেম্বরের সভায় যে পরিবর্তন করা হয়েছে, তাতে ‘আবেদনকারী’ পাসপোর্ট, বাবার এনআইডি ও বোনের সনদ প্রামাণ্য কাগজ হিসেবে জমা দেন।

কিন্তু এই সুফিয়ানই যে আসল, তা কতটা সত্য। জানার জন্য শিবালয় সরকারি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হজরত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই সুফিয়ানকে তিনি ভালো করেই চেনেন। তাঁর এলাকার ছেলে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঢাকা বোর্ডের সচিব তপন কুমার সরকারসহ বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে। তাঁরাও বিষয়টি শুনে অবাক হন।  দন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেন ঢাকা বোর্ডের সচিব। তদন্তের কাজে অংশ নিতে শিবালয় সরকারি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও আবু সুফিয়ানকে গত সোমবার বোর্ডে ডাকা হয়।

তদন্তে আরও জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসে। ‘নকল’ সুফিয়ান সনদ হারিয়ে যাওয়ার কথা লিখে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেন। এভাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে আবেদন করে সংশোধন করা দ্বি-নকল সনদও তুলে নেন। আর এই সনদ তোলায় আবেদন করা হয় স্কুল ও কলেজের মাধ্যমে। ‘নকল’ সুফিয়ান জিডিতে যে মুঠোফোন নম্বরটি দিয়েছেন, সেটিতে বুধবার বিকেলে ফোন করলে রিং হলেও কেউ রিসিভ করেনি। পরে রাতে আবার ফোন করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঢাকা বোর্ডের সচিব তপন কুমার সরকার বুধবার বলেন, তাঁরা তদন্ত করে জানতে পেরেছেন, যিনি নাম সংশোধন করিয়েছেন, তিনি জালিয়াতি করে তা করেছেন। এ জন্য তাঁর দ্বি-নকল সনদসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে জালিয়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। আর আসল সুফিয়ান যাতে সমস্যায় না পড়েন, সেটিও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আসল সুফিয়ানকে জানেন, এমন কেউই এই জালিয়াতি করেছেন। আর দ্বি-নকল সনদ তোলার ক্ষেত্রে স্কুল–কলেজেরও সংশ্লিষ্টতা আছে।

আসল সুফিয়ান বলেন, এই সমস্যার কারণে তিনি চাকরির আবেদন করতে পারছেন না। অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁর। তবে ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার তাঁকে জানিয়েছে, তিনিই আসল সুফিয়ান। এখন তাঁর চাওয়া, তিনি যেন চাকরির আবেদন ঠিকঠাক করতে পারেন। একই সঙ্গে তিনি ওই প্রতারকের শাস্তি চান।

 

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052380561828613