একদিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের গাছ রোপণ - দৈনিকশিক্ষা

একদিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের গাছ রোপণ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে শিক্ষার্থীরা এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে।তারা তাদের এক দিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে প্রায় ১ হাজারটি গাছের চারা কিনেছে। এসব চারা তারা নিজেদের বাড়ির আঙিনায় রোপণ করবে, নিজেরাই করবে পরিচর্যাও। সোমবার (১ অক্টোবর) নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে এসব গাছের চারা বিতরণ করা হয়।

এক দিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গাছ লাগানোর ‘থিম’ নিয়ে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই সবুজায়ন আন্দোলন করছেন ‘আলোর মিছিল’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে তিনি গত বছর রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট, নাটোরের বড়াইগ্রাম ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রায় ৬০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার চারা রোপণ করেছিলেন। এ বছর তাঁর লক্ষ্য সারাদেশে ২ লাখ চারা রোপণ করা।

এরই অংশ হিসেবে গত বছরের মতো এবারও  বনপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে এই সবুজায়ন আন্দোলনে। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা গত বছর রোপণ করেছিল প্রায় ১২শ চারা। আর এবার গত রোপণ করেছে বিভিন্ন প্রজাতির ৯৮০টি চারা।

সোমবারের এই বৃক্ষরোপণ উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম জাকির হোসেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.ওয়াছেক আলী সোনার।

এর আগে শিক্ষার্থীরা একদিনের টিফিনের টাকা সমপরিমাণ ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে প্রধান শিক্ষকের হাতে জমা দেয়। পরে প্রধান শিক্ষক স্থানীয় নার্সারি থেকে গাছের চারা কিনে সেগুলো   উৎসব মুখর পরিবেশে বিতরণ করেন।

টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গাছের চারা কেনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘বছরে এক দিনের টিফিনের টাকা বাঁচানো কোনো ব্যাপারই না। তবে এভাবে টাকা বাঁচিয়ে একটা গাছ কেনার চিন্তাটা আগে মাথায় ছিল না। আজ আমরা টিফিনে না খেয়ে গাছের চারা কিনেছি, এটা আমাদের ভাল লাগছে। কারণ এটা আমরা শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং পুরো দেশের জন্য কিছু করছি।’

বৃক্ষরোপণ উৎসব কেমন হলো জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ওয়াছেক আলী সোনার বলেন, ‘ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমাদের স্কুলে বৃক্ষরোপণ উৎসব হয়েছে। আগামীতেও আমরা বৃক্ষরোপণের এই স্বেচ্ছাসেবী কাজ চালিয়ে যাবো। ধন্যবাদ জানায় এই আন্দোলনের পথিকৃত জুবায়ের আল মাহমুদকে, যিনি আমাদের উপজেলায় শিক্ষক সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের বুঝিয়েছে এই সবুজায়ন আন্দোলনে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি করেছেন।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় এমন একটি সবুজ বাংলাদেশ গড়ার বিপ্লব চলছে তা আমি জানতামই না। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের টাকায় গাছের চারা কিনে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছে-এই চিত্র দেখে আমি মুগ্ধ। এই কার্যক্রম বড়াইগ্রামের সকল বিদ্যাপীঠে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

এ বিষয়ে এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের আল মাহমুদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন,’জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশ তথা পৃথিবীকে বাঁচাতে বৃক্ষরোপণের কোন বিকল্প নাই, তাই আমি এমন এক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি যেখানে গাছ রোপণের সাথে শিক্ষার্থীদের ছোট্ট মনে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। আমাদের এবছরের লক্ষ্য সারা দেশের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২ লাখ গাছের চারা রোপণ করা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও জানান, ‘বিভিন্ন উপজেলার ইউএনও মহোদয়গণ যদি শিক্ষক সম্মেলন আয়োজন না করতো, তাহলে এই সবুজায়ন আন্দোলনটি ছড়িয়ে দেয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়তো। ইউএনওগণ আমার এই আন্দোলনের একেকজন সহযোদ্ধা। এছাড়া সম্প্রতি দেশের নানা প্রান্ত থেকে বেশ কয়েকজন আমার এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে আন্দোলনটি ‘আমাদের আন্দোলনে’ পরিণত করেছে। এরমধ্যে খুলনার সাংবাদিক কবির মুন্সি এবং নাহিদ আঞ্জুমান নয়নেরর উদ্যোগে জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় আমাদের এই সবুজায়ন আন্দোলন চলছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন আরও ৩ উপজেলাতেও শুরু হচ্ছে সবার প্রিয় এই বৃক্ষরোপণ উৎসব।’

সবুজায়ন আন্দোলন ‘আলোর মিছিল’-এর প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল বর্তমানে চব্বিশ ঘন্টা সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরে সাংবাদিকতা করছেন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে তিনি বৃক্ষরোপণের এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে অবিরত ছুটে চলেছেন দেশের নানা প্রান্তে।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050520896911621