এক বছর আগে ভর্তি হলেও ক্লাসে যেতে পারেনি প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

এক বছর আগে ভর্তি হলেও ক্লাসে যেতে পারেনি প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

স্কুল পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী মূলত অভিভাবকের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পড়ালেখা করে। ফলে সব শিক্ষার্থীরই কলেজজীবন নিয়ে নানা স্বপ্ন থাকে। কলেজে এসে নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে চায় তারা। আর এখান থেকেই তৈরি হয় উচ্চশিক্ষার ভিত। কিন্তু গত বছর যেসব শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি) পাস করেছে তারা কলেজে না গিয়েও কলেজজীবন শেষ করার পথে রয়েছে। এক বছর আগে ভর্তি হলেও এখনো ক্লাসে যেতে পারেনি উচ্চ মাধ্যমিকের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। অথচ আগামী বছরের মাঝামাঝিতেই তাদের শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে হবে। মঙ্গলবার  (১৩ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন  ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা দুই বছরের। বাংলাদেশে এটাকেই মূলত কলেজজীবন বলা হয়। আর একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় কোন বিষয়ে পড়বে তার পরিকল্পনা এখানেই করে থাকে। উচ্চ মাধ্যমিকের দুই বছর ভালো করতে পারলে তার একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থাকে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা। সামান্য দেরিতে হলেও ৩১ মে ফল প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষায় পাস করে এসএসসি ও সমমানের ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। করোনার কারণে একাদশে অনলাইন ভর্তিতেও দেরি হয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে অক্টোবর থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। যদিও অন্য বছরগুলোতে ১ জুলাই থেকে একাদশের ক্লাস শুরু হয়।

রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে সরকারি বাঙলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে সিয়াম। সে জানায়, ‘অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে কিন্তু কলেজে তো যেতে পারছি না। কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধানেরও উপায় নেই। শিক্ষকদের সেভাবে চিনি না। নতুন কোনো বন্ধুও তৈরি হয়নি। কলেজ ঘিরে যে স্বপ্ন ছিল, তা পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেল।’

আরও পড়ুন :  দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা

করোনাকালে শহরের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারলেও মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে তাও জোটেনি। গ্রামের কলেজগুলোতে অনলাইন ক্লাস হয় না। আবার কোনো কোনো কলেজ কিছু ক্লাস আপলোড করলেও তা শিক্ষার্থীরা দেখতে পারছে না। কারণ বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই ক্লাস করার উপযোগী ডিভাইস নেই। ইন্টারনেটের উচ্চ দাম ও ধীরগতির কারণেও অনেকে ক্লাস করতে পারছে না। ফলে এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে গ্রামের শিক্ষার্থীরা মূলত পড়ালেখা ছাড়াই দিন পার করছে। এমনকি অনেকে নানা ধরনের কাজের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে। আবার কেউ কেউ পড়ালেখায় নাও ফিরতে পারে।

এ ছাড়া রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের বড় কলেজগুলোতে দূর-দূরান্তের ও গ্রামের শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হয়। কিন্তু এখনো সরাসরি ক্লাস না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এখনো তার কলেজ ক্যাম্পাসই দেখার সৌভাগ্য হয়নি। ফলে ভালো কলেজে ভর্তি হয়েও অনেক শিক্ষার্থী কলেজে পড়ার আনন্দই উপভোগ করতে পারছে না।

যেসব শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা টেকনিক্যাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে (ভোকেশনাল) ভর্তি হয়েছে তারা রয়েছে আরো সমস্যায়। তাদের শিক্ষা ব্যাবহারিকনির্ভর হওয়ায় তারা অনলাইনেও সেভাবে ক্লাস করতে পারছে না।

রাজধানীর মহানগর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সলিমুল্লাহ সেলিম বলেন, ‘অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে, যারা গত বছর ভর্তি হয়েছে তারা কলেজই চিনতে পারবে না। এখন তো করোনার ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব নয়। তবে যখন কম ছিল তখন আমরা বারবার বলেছিলাম, অন্তত টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে। কারণ আমাদের শিক্ষার্থী কম, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করানো সম্ভব। আমরা এখন অনলাইনে থিউরি পড়াচ্ছি, কিন্তু ব্যাবহারিক কিভাবে করাব? যদি অনলাইনে ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট পায় তাহলে কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাবে, তারা কিসের ভিত্তিতে সার্টিফিকেট পেল। এ জন্যই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে শিক্ষার্থীদের দ্রুততার সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনতে হবে।’

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সর্বশেষ আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ পরিস্থতি যে রকম তাতে আগস্টেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। এভাবে যদি চলতি বছরটাও পার হয়ে যায়, তাহলে উচ্চ মাধ্যমিকের এই শিক্ষার্থীদের পুরো শিক্ষাবর্ষই শেষ হয়ে যাবে। শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে, ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষা আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও রয়েছে মহাবিপাকে। গত ১ এপ্রিল তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা হয়নি। তাদের জন্য ৮৪ কর্মদিবসের সিলেবাস প্রকাশ করা হলেও সে অনুযায়ী ক্লাস করানোও সম্ভব হয়নি। এসব শিক্ষার্থী ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিল। তারা আট মাস ক্লাস করার পরই করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এরপর তারা আর ক্লাসে যেতে পারেনি। ফলে এখন তাদের জন্য বিকল্প মূল্যায়নের ব্যাপারেও চিন্তা করা হচ্ছে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘জীবন বাঁচানোই যেখানে কষ্টকর হয়ে পড়েছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলছি না। তবে গত বছর যারা কলেজে ভর্তি হয়েছিল তাদের শিখন ঘাটতি তো থাকবেই, সারা জীবনই একটা অতৃপ্তিও থেকে যাবে। কলেজে আমাদের যে আনন্দময় জীবন ছিল, সেটা আমাদের সন্তানরা পেল না। বর্তমানে শহরের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস হলেও বেশির ভাগেই হচ্ছে না। অথচ পুরো টিউশন ফি দিতে হচ্ছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, যত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয়, তত দিন ৫০ শতাংশ টিউশন ফি নেওয়া হোক।’

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘বর্তমানে করোনার যে পরিস্থিতি তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকেই আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি আমরা অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছি। ক্লাসের বিকল্প হিসেবে আমরা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই পদ্ধতি গ্রহণও করেছে।’

সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043859481811523