এক শিক্ষার্থী, তিন শিক্ষক! - দৈনিকশিক্ষা

এক শিক্ষার্থী, তিন শিক্ষক!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি |

শিক্ষার্থী মাত্র একজন। আর  তার জন্য শিক্ষক রয়েছে তিনজন। এই তিনজন শিক্ষকই আবার সরকারি বেতনভুক্ত।লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোস্তফি ভুড়িধোয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ইবতেদায়ি শাখার চিত্র এটি।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, অবহেলিত এ গ্রামের কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে স্থানীয়দের উদ্যোগে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে মোস্তফি ভুড়িধোয়া দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমদিকে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি পেলেও পরে দাখিল পর্যন্ত অনুমোদন দেয় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। 

এরপর ২০০০ সালের ২৪ এপ্রিল ইবতেদায়ি শাখায় তিন শিক্ষক ও দাখিল শাখায় ১৪ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়ে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে মাদরাসাটি। সেই থেকে প্রথম শ্রেণি থেকে দাখিল পর্যন্ত ১০টি শ্রেণির পাঠদান চলে নিভৃত পল্লী গ্রামের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষকরা নিয়মিত বেতনভুক্ত হন। আর এর পর থেকে শুরু হয় পাঠদানে অবহেলা। ফলে শিক্ষার্থীরাও মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। সরকারি বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে সরকারের খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত হলে তা আর কোনোভাবেই মুছে যায় না। এ ধারণায় শিক্ষকরাও ইচ্ছেমত মাদরাসায় আসেন স্বাক্ষর করেন আবার চলে যান। বেতন ভোগ করলে শ্রম দিতে হয় বা দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেটাও হয়তো তাদের অজানা। 

এছাড়া ভুলেও সরকারি দফতরের কেউ খোঁজ নেন না সরকারি বেতনভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটির। ফলে শিক্ষার পরিবেশ হারিয়ে ফেলেছে মাদ্রাসাটি। ফলশ্রুতিতে মাদ্রাসা ছেড়ে চলে গেছে শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, কাগজ কলমে ১০টি শ্রেণিতে ২২৮ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে ৪০ জনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী বা শ্রেণিকক্ষ নেই। পুরো ইবতেদায়ি শাখা মিলে পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে একমাত্র শিক্ষার্থী নাঈম মিয়া। পড়াশোনার কোনো পরিবেশ নেই। পাশের বেঞ্চে খেলা করছে দু‘টি মুরগি। ওই কক্ষে নাঈমকে পাঠদান করছেন জুনিয়ার মৌলভী আক্কাস আলী। তার নিজেরও কোনো প্রস্তুতি নেই। সংবাদকর্মীরা এসেছেন শুনে ভোঁ দৌড়ে ছুটে গিয়ে একমাত্র শিক্ষার্থী নাঈম মিয়াকে নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেন শিক্ষক আক্কাস আলী। পাশে যে মুরগি চরছে, সেটাও ভুলে গেছেন তিনি। 

শিক্ষক আক্কাস আলী বলেন, প্রতিদিন পাঁচ/সাতজন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। তবে অজ্ঞাত কারণে আজ শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত। 

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে পাঁচ থেকে আটজন করে শিক্ষার্থী বসে রয়েছেন শিক্ষকের আগমনের অপেক্ষায়। কোনো ক্লাসে শিক্ষক গেলেও প্রস্তুতিহীন। সংবাদকর্মীদের আগমনে পুরো প্রতিষ্ঠান আতঙ্কিত। সব শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে অপরাধ- আতঙ্কের ছাপ। শিক্ষক হাজিরা খাতায় ছুটি নেই, স্বাক্ষর দেয়ার ঘরটিও ফাঁকা। তবুও প্রতি মাসে বেতন আসে তাদের। এটা দেখে যে কেউ মনে করবেন প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্ন থেকে কোনোদিন সরকারি দফতরের কেউ পরিদর্শন করেনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, কয়েকমাস পরেই জেডিসি পরীক্ষা অথচ তাদের ইংরেজি বিষয়ে দুই অধ্যায়ও পড়ানো হয়নি। সংবাদকর্মীরা এসেছেন শুনে শরীর চর্চার শিক্ষক নুর ইসলাম মিয়া এসেছেন ইংরেজি ক্লাসে। তাদের কোনো ক্লাস রুটিন নেই। যেদিন যখন ইচ্ছে শিক্ষকরা ক্লাসে আসেন। প্রতিদিন দুপুরেই মাদরাসা ছুটি হয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

মাদরাসার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১০টি শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ২২৮ জন। শিক্ষক কর্মচারী মিলে ১৭ জনের বেতন বাবদ প্রতি মাসে সরকারি বরাদ্দ দুই লাখ ৮৫ হাজার ২২২ টাকা। গত দাখিল পরীক্ষায় ২৮ জন অংশ নিলেও পাস করেছে সাতজন। যার মধ্যে বিগত বছরের দুইজন রয়েছে। জেডিসি পরীক্ষায় ৩৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিগত বছরের তিনজনসহ পাস করে মাত্র ১৬ জন। মাত্র সাত/আটজন শিক্ষার্থীকে পাস করাতে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বাবদ সরকারি খরচ বছরে ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা ও দুইটি উৎসব ভাতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার দুইজন স্কুল শিক্ষক জানান, পাঠদান না করায় মাদরাসাটির ইবতেদায়ি শাখায় কোনো শিক্ষার্থী নেই। উচ্চ মহলের তদন্ত এলে পাশেই ভুড়িধোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ডেকে নিয়ে দেখানো হয়। ইবতেদায়ি শাখাটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তারা। 

মোস্তফি ভুড়িধোয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আবুল বাশার নাঈমী জানান, অজ্ঞাত কারণে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক'দিন ধরে মাদ্রাসায় আসছে না। তাই পাঠদান হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা না এলে শিক্ষকদের কী করার আছে? তবে ইবতেদায়ি শাখার শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। 

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036499500274658