সরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা এনজিওর হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটা করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে সরকারি ডাক্তার ও সরকারি বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবৈজ্ঞানিক ও অজ্ঞতাপ্রসূত। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যয় আরও বাড়বে, যা সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাবে। সেবা তো বাড়বেই না বরং সরকারি স্বাস্থ্য খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। স্বাস্থ্য খাতের সেবার মান বাড়াতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব কাজী নাহিদ রসুল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্প আকারে কতিপয় সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা যথাপদ্ধতিতে সক্ষম ও অভিজ্ঞ বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে।’ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন সেক্টর প্রোগ্রাম (এইচএনপিএসপি) বাস্তবায়ন সংক্রান্ত স্ট্যাটাস রিপোর্ট সিদ্ধান্তে এ কথা বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, এটা কোনোক্রমেই ভালো সিদ্ধান্ত নয়। আমাদের নব্বইয়ের আন্দোলনটাই ছিল এর বিরুদ্ধে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতার অভাব রাষ্ট্রীয়ভাবে। বাজেটের ঘাটতি এবং লোকবলের অভাব রয়েছে।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
সরকারি ডাক্তাররা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এর আগেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে সেবার মান তো বাড়েনি বরং সেবা পেতে মানুষকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। মূলত সংসদে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বেড়ে যাওয়ায় এবং স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পদে প্রশাসন কর্মকর্তাদের পদায়নের প্রচ্ছন্ন মনোবাসনা থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটি ভয়ংকর খারাপ সিদ্ধান্ত হবে। নন গভর্নমেন্ট অরগানাইজেশন (এনজিও) সরকারি ব্যবস্থাপনার কী বুঝবে? তাছাড়া কয়টা এনজিও এ ধরনের সক্ষমতা রাখে।
এটা সঠিক সিদ্ধান্ত হলে পৃথিবীর সব দেশে এনজিওগুলো সরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করত। তিনি বলেন, এটি মূলত আমলাতন্ত্রের একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তা। প্রথমে তারা এনজিওর হাতে ব্যবস্থাপনা দেবে, এতে এনজিওগুলো চূড়ান্তভাবে অকৃতকার্য হবে। তারপর তারা সব হাসপাতালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা নিয়োগ করবে। ঠিক যেভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠান সিএমএসডি (সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো) দখল করেছে।