এবার আরেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে - দৈনিকশিক্ষা

এবার আরেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি  : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর পর এবার যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক নারী শিক্ষার্থী, যেখানে তিনি অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বরাবর একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের একজনের কাছ থেকে অধ্যাপক ড. নাদির জুনায়েদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। এই সংক্রান্ত অভিযোগগুলো মূলত উপাচার্য বরাবর দেয়া হয় এবং প্রক্টরের কাছেও অনুলিপি পাঠানো হয়। আমি সেই অনুলিপিটা পেয়েছি।

 

অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছি, সেখানে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ একটি কোর্স পড়াতে গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে আমাদের বিভাগে এসেছিলেন। আমি ক্লাসের সিআর হওয়ার সুবাদে আমাকে তার সঙ্গে এক ধরনের যোগাযোগ রাখতে হতো। প্রথমত উনি নিয়মিত আমাকে ফোন দিতেন। বাসায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিতেন। কিন্তু সমস্যা হলো, উনি ব্যক্তিগত অনেক তথ্য জিজ্ঞেস করতেন। আমাকে এমনও জিজ্ঞেস করেছেন, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কি না- এ রকম। ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল, ওনার পড়াশোনার কাজের থেকে বেশি আগ্রহ ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। এসব নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে চাইতেন। সাধারণত উনি রাত ১০টা বা ১২টার দিকে ফোন দিতেন। উনি আমাকে যখন এইভাবে ফোন বা ভিডিও কল দিতেন, আমি খুবই বিব্রত হতাম। আমি প্রায় ওনার ফোন না ধরার চেষ্টা করতাম, কিন্তু সেটার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরবর্তী ক্লাসে দেখা যেত। ফোন না ধরায় আমাকে ক্লাসে নানাভাবে হেনস্তা করতে চাইতেন। ক্লাসে এভাবে হেনস্তার শিকার হওয়ার পরও উনি আবারও আমার সাথে যোগাযোগ করতেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরে ওনার মুখ ও মুখোশ ছিল আলাদা। উনি ক্লাসে হেনস্তা করার পরে আবার দুঃখপ্রকাশ করে আমাকে মেসেজ দিতেন, ফোন দিতেন। পরে অনেকটা বাধ্য হয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে ওনার ফোন এবং ভিডিও কল রিসিভ করতাম। তখন ভিডিও কলে বলতেন, একটু তোমার চেহারাটা দেখি, তোমার চুলটা একটু দেখি, তোমার জুম পিক দেখি। আমার কয়েকবার মনে হইছে তখন উনি হস্তমৈথুন করেন। উনি সবসময় চাইতেন, তাকে সব আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখি। ‘উনি অনেক হ্যান্ডসাম’- এটা উনি বারবার শুনতে চাইতেন। উনি এত সুদর্শন, এত তরুণ, ওনাকে দেখে আমরা কেন আকর্ষিত বোধ কেন করছি না- এরকম বিষয় নিয়ে প্রায়ই খোঁচা দিতেন। প্রায়ই মেসেঞ্জারে/ওয়াটসআপে ওনার ভিডিও বা ছবি পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, ‘আমি দেখতে কেমন’। পরে বুঝেছি, এর সবই ছিল ওনার ফাঁদপাতার কৌশল। 

অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে অশ্লীল কথোপকথন চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলে এই শিক্ষার্থী বলেন, উনি আমাকে শারীরিক স্পর্শ বা সেরকম কিছু করেননি। কিন্তু বিয়ের কথা বলে আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন কথোপকথন চালিয়ে গেছেন। উনি প্রায় অশ্লীল কথাবার্তা বলতেন। নানা রকম যৌন উত্তেজনামূলক কথা আমার সঙ্গে বলতে চাইতেন। সবসময় অন্তরঙ্গ কথা বলার প্রতি ওনার বিশেষ আগ্রহ থাকত। আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে তিনি আমাকে প্রশ্ন করতেন। আমার পোশাক নিয়েও অযাচিত মন্তব্য করতেন। বলতেন, আমি কেন ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরি না। কেন বাংলাদেশের মেয়েদের পোশাক এত বাজে? নানারকম অশ্লীল কথাবার্তা তিনি গল্প আকারে বলতেন। যেমন কোন সিনেমায় নায়ক নায়িকা কীভাবে অন্তরঙ্গ হলো, নায়ক নায়িকার সঙ্গে কী কী করল, এসব উনি খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে শোনাতেন এবং নানাভাবে বোঝাতেন যে উনি এইসব করতে চান। আমাকে বলতেন, মনে করো আমরাও এমন করছি।

অধ্যাপক নাদির জুনাইদ অন্য নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন উল্লেখ করে অভিযোগকারী বলেন, আমার ক্লাসের আরেকটা মেয়ের সঙ্গেও এমন করেছেন উনি। ওই মেয়েকেও উনি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েছেন। ছয় মাসের জন্য পড়াতে গিয়ে একই ক্লাসের দুজন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন, এটাকে স্বাভাবিক মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাকে ‘গোয়েন্দা’র মতো ব্যবহার করে অন্য মেয়েদের খোঁজ নিতেন উনি। উনি প্রায়ই ফোন করে জিজ্ঞেস করতেন, ক্লাসের কোন মেয়ের কার সঙ্গে প্রেম চলতেছে। ক্লাসের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ওনার অস্বাভাবিক রকমের আগ্রহ ছিল।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি নম্বর কম দেয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ১২তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগের পর ১০ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে প্রক্টরের কাছে লিখিত দেন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। যদিও তিনি (নাদির জুনাইদ) এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখছেন বলে দাবি করেন।

অপরদিকে, অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেন বিভাগের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তার বিভাগীয় অফিস কক্ষে তালা দেয়ার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের তালায় সিলগালা করে দেন শিক্ষার্থীরা এবং দরজায় ‘যৌন নিপীড়ক অধ্যাপক নাদির জুনাইদ ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত’ সংবলিত পোস্টার ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দেন।

পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছুটির চিঠিতে বলা হয়, অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্ত করার জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরপর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের জন্য তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না এমন লিখিত নিরাপত্তার আশ্বাস চাইলে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিভাগের একাডেমিক কমিটির বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক নিরাপত্তা দেয়া হবে এমন একটি বিবৃতি প্রদান করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমাদ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে রুটিন অনুযায়ী ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন এবং ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হলে আবারও ক্লাস বর্জন করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সর্বশেষ, এই নারী যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির অভিযোগ করলেন। যদিও অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলাকালে সামাজিকমাধ্যমে আরও কিছু নারী শিক্ষার্থীদের মুখ খুলতে দেখা গেছে।

ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড - dainik shiksha ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি - dainik shiksha ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট - dainik shiksha মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা - dainik shiksha অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল - dainik shiksha ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036439895629883