শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচি চলাকালে ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান অনশনস্থলে এসে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী এমপিওভুক্তির কাজ শুরু করতে শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন।
পরিতাপের বিষয়, এরপর দীর্ঘ ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এমপিওভুক্তির কাজ দৃশ্যমান হয় না এবং বাজেটেও এ খাতে সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ থাকে না। অগত্যা শিক্ষক-কর্মচারীরা রোজার ভিতর আবার ঢাকার রাজপথে অবস্থান নেন। ঈদের দিন ফুটপাতে নামাজ আদায় শেষে ভুখা মিছিল করেন। এরপর আবারো অনশনে যান।
এই কর্মসূচির প্রেক্ষিতে ১২ জুন স্কুল ও কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারী করা হয়। এর মাসাধিককাল পর ১৯ জুলাই মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নীতিমালা প্রকাশিত হয়। নীতিমালায় এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে কঠিন সব শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যা অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। নীতিমালা অনুসারে জুলাই মাসেই অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদন চাওয়ার কথা ছিল। এখন আবেদন শুরুর তারিখ পিছিয়ে ৫ আগস্ট করা হয়েছে।
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি শাখায় বিভক্ত। স্কুল ও কলেজ শাখা এবং মাদরাসা ও কারিগরি শাখা। মাদরাসা ও কারিগরি শাখা থেকে প্রকাশিত নীতিমালা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। কারণ এই নীতিমালায় এইচএসসি (বিএম) শিক্ষাক্রম অর্ন্তভুক্ত হয়নি। পহেলা আগস্ট শিক্ষক নেতারা এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি আগামী সপ্তাহে সচিব ও ডিজি দেশে ফিরলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। এতে করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন যথাসময়ে শুরু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এমপিওর আবেদনের জন্য ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর ঈদের ছুটি। কাজেই নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চললে এ মাস আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়েই শেষ হবে। এরপর আবেদন বাছাই ও গ্রেডিং প্রক্রিয়া। এ সময় টেকনিক্যাল কোন সমস্য দেখা দিলে সময়ক্ষেপণ হবে। যেভাবে ধীরলয়ে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া এগোচ্ছে তাতে করে সেপ্টেম্বর মাসে পার হয়ে যেতে পারে। এরপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ। শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির প্রসঙ্গ আলোচনায় আসছে। শর্ত শিথিল করা হলে কোন ক্ষেত্রে কী নিয়মে তা হবে, সেও এক হিসাব-নিকাশের বিষয়।
অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হবে। গঠিত হবে নির্বাচনকালীন ছোট সরকার। সেই সরকার কেবল রুটিন ওয়ার্ক করবে, কোন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিবে না। কাজেই এমপিওভুক্তির বিষয়টি সুরাহা করতে হলে যাবতীয় প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এমপিওভুক্তির আবেদনের ফরমে চার ধরনের তথ্য দিতে হবে। তা হল- স্বীকৃতির সময়কাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, পাবলিক পরীক্ষার পরীক্ষার্থী এবং পাসের হার। এসব তথ্য সংখ্যা মাত্র। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই সকল তথ্য প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। অনলাইনের তা সাবমিট করতে ১০ মিনিট সময় যথেষ্ট। কাজেই এমপিওর আবেদনের জন্য ৩-৪দিন সময় রাখলেই চলে।
সারকথা হল, দ্রুততার সাথে স্বল্প সময়ের ভিতর আবেদন গ্রহণ, যাচাই বাছাই ও গ্রেডিং করে এমপিওভুক্তির সুরাহা করা জরুরি। নইলে এই সরকারের মেয়াদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
লেখক : সহ সভাপতি, নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন