এমপিওভুক্তির জটিলতায় বেসরকারি ডিগ্রির শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্তির জটিলতায় বেসরকারি ডিগ্রির শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের সব ডিগ্রি কলেজে বিষয়ভিত্তিক তৃতীয় পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের এমপিও সুবিধাবঞ্চিত এসব শিক্ষক বেসরকারি কলেজে চাকরি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নীতি আর এর বিপরীত নীতিতে চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের। এমন দ্বৈতনীতির জালে বন্দি প্রায় ৪ হাজার কলেজশিক্ষক।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি কমিটির ৫৯তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিগ্রি পর্যায়ে পাঠদান করা প্রতিটি বিষয়ে তিনজন করে শিক্ষকের নিয়োগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর পর বেসরকারি কলেজ তিন বছরের জন্য অধিভুক্তি নবায়ন করা হয়। এর পর থেকে বেসরকারি কলেজগুলো তাদের ডিগ্রি কোর্স পরিচালনার জন্য প্রতি বিষয়ে দুটি পদ থেকে তৃতীয় পদেও নিয়োগ নেয়। এমন নিয়োগে যাদের চাকরি হয়েছে তারা এখন সরকারের এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন না। এর কারণ, সরকারের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী এই স্তরে প্রতি বিষয়ে দুজন করে এমপিওভুক্তি হবে। সুতরাং তৃতীয় পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বছরের পর বছর নামে মাত্র সম্মানী নিয়ে চাকরি করছেন। প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি কলেজ ব্যতীত অন্যসব কলেজের শিক্ষকরা অনেকটা বিনা বেতনে চাকরি করছেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা কলেজ ফান্ড থেকে নামে মাত্র সম্মানী ভাতা পেলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকার অজুহাতে এসব শিক্ষকের কোনো প্রকার সম্মানীভাতাও প্রদান করা হয় না। এরা সরকারের এমপিওভুক্তির জন্য অপেক্ষা করছেন। নতুন চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে কলেজের চাকরিতে পড়ে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রভাষক প্রদীপ ম-ল জানান, সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলো বিভিন্ন বিষয়ে চার সহস্রাধিক শিক্ষক বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, শিক্ষকদের বিষয়ে বর্তমান সরকার আন্তরিক হলেও প্রশাসনের কোনো জটিলতায় তাদের ভাগ্যের বদল হয়নি। ডিগ্রির তৃতীয় পদে নিয়োগকৃত সব শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

কচুয়া ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি শিক্ষক জয় বলেন, ২০১৫ সালে চাকরিতে যোগদান করি। প্রশাসনের কাছ থেকে শুনে আসছি আমাদেরও এমপিওভুক্তি হবে। এখনো আশায় আছি। কবে আমাদের ভাগ্যে পরিবর্তন আসবে জানি না।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, শিক্ষাজীবনের সর্র্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে ও শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বছরের পর বছর বিনা বেতনে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কোনো শিক্ষক ভালো বিষয়Ñ যেগুলো প্রাইভেট-কোচিং চাহিদা আছে সে বিষয়ে শিক্ষকরা কলেজের বাহিরে পড়িয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলছেন। যারা অন্য বিষয়ে শিক্ষক তারা কী করবে? চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার বাধ্যতামূলক নামকাওয়াস্তে বেতনের চাকরি করছে।

ঝিনাইদহ ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নির্দেশনার পর বেসরকারি কলেজের গভর্নিং বডি ডিগ্রির প্রতি বিষয়ে দুজনের পর তৃতীয় শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করেছেন। এ নিয়োগ নীতিমালায় বলা হয় ডিগ্রি পর্যায়ে প্যাটার্নবহির্ভূত নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ বেতন প্রদান করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। নিয়োগপ্রাপ্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোনো প্রকার সম্মানীভাতা দেওয়া হয় না।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ জানান, ডিগ্রি কোর্স পরিচালনাকারী বেসরকারি কলেজগুলোকে আমরা প্রতিটি বিষয়ে তিনজন করে শিক্ষক রাখার শর্ত দিয়েছি। এটা না হলে ঠিকমতো পাঠদান নিশ্চিত হবে না। এমপিওভুক্তির বিষয়টি সরকারের, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। এমপিও দেবে কিনা? সেটা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)।

মাউশির কলেজ ও প্রশাসনের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ শামছুল হুদা বলেন, সরকার ডিগ্রি কলেজগুলোর প্রতি বিষয়ে দুজন শিক্ষককে এমপিও সুবিধা দিচ্ছে। তৃতীয় পদে যারা নিয়োগ নিয়েছেন তারা এমপিও পাবে, পাবে নাÑ এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়লে তাদের বিষয়টিও সরকারের দৃষ্টিতে থাকবে। শিক্ষার বাজেটের অধিকাংশ অর্থই ব্যয় হয় শিক্ষকদের এমপিও খাতে। এ ছাড়া এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনে সারা দেশে উপজেলা পর্যায় কলেজ জাতীয়করণ করা হচ্ছে। এভাবেও অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষকরা সরকারি সুবিধার আওতায় চলে আসবে।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031869411468506