এমপিওভুক্তির নামে চলছে ফ্রি স্টাইলে ঘুষ বাণিজ্য - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্তির নামে চলছে ফ্রি স্টাইলে ঘুষ বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রংপুরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে শিক্ষক-কর্র্মচারীদের এমপিওভুক্তির নামে ফ্রি স্টাইলে ঘুষ বাণিজ্য চলছে। টাকা ছাড়া এ অফিসে কোন কাজ হয় না। টাকা না দিলে দফায় দফায় নানান ছলছুতায় আপত্তি দিয়ে আবেদন বাতিল করে দেয়া হচ্ছে। আবার টাকা দিলেই সব ঠিক হয়ে যায়। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার শত শত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। এই অফিসে এমপিওভুক্তি ছাড়াও নাম বয়স, ও নানান বিষয় সংশোধন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেতেও কমপক্ষে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় কর্মকর্তাদের।

সরেজমিন রংপুরে অবস্থিত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে বেশ কয়েকদিন ঘুরে ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই অফিসের প্রধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোস্তাক হাবিব, বিদ্যালয় পরিদর্শক আজাহার আলী অফিস করেন ঘর বন্ধ করে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা দেখা করতে চাইলে সিরিয়াল মেইনটেন করতে হয়। একজনের সাথে ঘুষের টাকা রফাদফা হওয়ার পর আরেকজনের সাথে কথা বলেন ওই দুই কর্মকর্তা। যারা টাকা দেন না তাদের ফাইল দিনের পর দিন বছরের পর বছর আটকে রেখে ঠুনকো অভিযোগ তুলে আবেদন বাতিল করে দেন তারা। উপ-পরিচালক মোস্তাক হাবিব আবার এমপিওভুক্তির কাজ করেন অফিসে নয় অফিসের বাইরে।

প্রতি এক মাস অন্তর অন্তর এমপিওভুক্তির আবেদন অনলাইনে অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও যারা টাকা দিতে পারেন শুধু তাদের কাজ হয়। আর বিশেষ করে ওই সময়টা ঢাকায় অফিসের কাজের কথা বলে অথবা অন্য কোন অজুহাত দেখিয়ে অফিসের বাইরে প্রয়োজনীয় সুবিধা নিয়ে কাজ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষক-কর্মচারীদের। অন্যদিকে আজাহার আলী নামে স্কুল পরিদর্শক পুরো অফিস সময়টা দরজা বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকেন। সেখানে তিনি প্রকাশ্যই ঘুষের টাকা রফাদফা করেন। টাকা দিলেই কাজ হবে না হলে ফাইল বাতিল হয়ে যাবে যা তিনি প্রকাশ্যই বলেন। শুধু তাই নয়, ওই কর্মকর্তা যদি আবেদনকারী তার সাথে দেখা না করেন তা হলে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ফোন করে অফিসে ডেকে আনেন। এভাবে ফ্রি স্টাইলে চলছে ঘুষ বাণিজ্য।

পঞ্চগড়ের দুজন শিক্ষক অভিযোগ করেন তারা প্রায় এক বছর ধরে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন অনলাইনে করে ঘুরছেন। প্রতিবারই নানান অজুহাত দেখিয়ে আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়। এতে করে প্রতিবারই আবারও নতুন করে আবেদন করতে উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে ফাইল অনলাইনে পাঠাতে হয়। সে ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসারকে ঘুষ দিয়ে ফাইল পার করিয়ে উপ-পরিচালকের কাছে পাঠাতে হয়। ফলে একটি এমপিওভুক্ত করতে কমপক্ষে ৬০ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। টাকা না দিলে কোন কাজই হয় না। এভাবে চরমভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে উপ-পরিচালকের দফতর থেকে। লালমনিরহাটের এক শিক্ষক অভিযোগ করেন এ পর্যন্ত ৫ বার তার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একেক বার একেক অভিযোগ জুড়ে দিয়ে বাতিল করা হচ্ছে। তিনি জানান, যেহেতু কর্মকর্তাদের দাবি করা অর্থ তিনি দিতে পারছেন না সে কারণে তার কাজ হচ্ছে না।

রংপুরের এক শিক্ষক অভিযোগ করেন, এমনিতেই টাকা দিতে হয় কিন্তু কাগজপত্রে সামান্য ঘাটতি থাকলেই ঘুষের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিন্তু এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে কাজ হবেই না। ফলে অনেকে হয়রানির ভয়ে জমিজমা বন্ধক রেখে কিংবা ধারদেনা করে ঘুষের টাকা প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক কর্মকর্তা জানান, এমপিওভুক্তিসহ যাবতীয় কার্যক্রম আগে ঢাকায় হতো। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পাইলট প্রকল্প হিসেবে কর্মকা-কে আরও সহজ করার জন্য মাউশি পাইলট প্রকল্প হিসেবে রংপুর অঞ্চলের বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা রংপুর বিভাগের ৮ জেলার এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম ২০১৫ সালের ৬ জুন থেকে রংপুরে উপ-পরিচালকের দফতর থেকে সম্পন্ন করার দায়িত্ব প্রদান করে। এই পাইলট প্রকল্প ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের সুবিধার বদলে দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বেড়েছে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে স্কুল পরিদর্শক আজাহার আলীর সাথে কথা বলতে তার কক্ষে যেতে চাইলে এক কর্মচারী জানান, কক্ষটি ভেতর থেকে বন্ধ রয়েছে। পরে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল তিনি বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সাথে এমপিওভুক্তি করিয়ে দেয়ার জন্য তাদের নিয়ে গোপন সভা করছেন। এমপিওভুক্তির নামে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।

অপরদিকে উপ-পরিচালক মোস্তাক হাবিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানে টাকা নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যাদের কাগজপত্র ঠিক নেই তারাই এমন অভিযোগ করতে পারে বলে জানান তিনি।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034468173980713