এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ফলপ্রসু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১১ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সচিবালয়ে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর এ বৈঠক হয়। অনশনরত শিক্ষকদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ না করলেও সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে জানিয়েছেন তিনি। সবাই পহেলা জুলাই থেকে বেতন-ভাতা পাবেন। এমপিও নীতিমালার বিষয়ে শিক্ষক নেতাদের আপত্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমপিও নীতিমালা কোনো ধর্ম গ্রন্থ নয়, যে এটি সংশোধন করা যাবে না।
বৈঠক শেষে ফেডারেশনের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে একথা জানান।
ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়ের নেতৃত্বে পাঁচ শিক্ষক নেতা বুধবার (১১ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। অন্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি মো: শফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি মাওলানা তোহিরুল ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন।
সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দুপুর তিনটার দিকে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারবো
রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে এমপিওভুক্তির দাবিতে ননএমপিও শিক্ষকরা গত ১০ জুন থেকে প্রেসক্লাবের সামনে উত্তর পাশের সড়কে এমপিওভুক্তির দাবিতে লাগাতার অবস্থান নেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ২৫ জুন থেকে তাঁরা আমরণ অনশন করছেন। এমনকি পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজও তারা রাজপথে আদায় করেন। মঙ্গলবার অনশনের ১৬ দিন অতিবাহিত করছেন শিক্ষকরা।
অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা বলেন, সারা দেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর ৮০ হাজার শিক্ষক কর্মচারী বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন। তারা পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ, চিকিৎসা দিতে না পেরে নিজেরাই বোঝা হয়ে গেছেন। অপরদিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও নেই। একটি স্বাধীন দেশে জাতি গড়ার কারিগররা সরকারের অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র নীরব, মনে হচ্ছে এ শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই।
বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে আছে ২ হাজারেরও বেশি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড়শ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।