এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ - দৈনিকশিক্ষা

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ, এনডিসি, পিএসসি |

পরীক্ষা নিয়ে ছাত্র-অভিভাবক অনেকেরই অনেক ভয় বা আতঙ্ক থাকে। তাদের জন্যই এ লেখা। পরীক্ষার্থীরা যেহেতু অনেকদিন পর পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, তাই একটু ভীতি থাকা স্বাভাবিক। সঠিক প্রস্তুতি ও মনোবল এ শঙ্কা দূর করবে। নিজের ওপর শতভাগ বিশ্বাস রাখ, তুমি পারবে। এর আগে নির্বাচনি, প্রাক-নির্বাচনি, অনেক পরীক্ষায় সফল হয়ে এসেছো। তাই এ চূড়ান্ত পরীক্ষায় তোমাকে পারতে হবে, তুমিই পারবে।

শিক্ষার্থীরা, এখন নিশ্চয়ই রিভিশন প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেটুকু সময় আছে, তাতে নতুন করে কোনো কিছু না পড়াই ভালো বরং পুরোনো যা পরীক্ষার জন্য পড়া হয়েছে, তাই অনুশীলন করা উচিত। রুটিন যেহেতু সবাই পেয়ে গেছ, এবার তাই সুবিধামতো ছক করে নিয়ে কেবল পড়া বিষয়গুলো চর্চা কর। ঘরে বসে মডেল টেস্ট দাও, নমুনা উত্তর লেখার চেষ্টা কর। সঠিক নিয়মে উত্তর লিখতে সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি মিলে নব্বই শতাংশ বা এরও বেশি নম্বর তোলা সম্ভব, যেহেতু প্রতিটি প্রশ্ন পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ব্যাবহারিকসহ প্রায় দেড় মাস পরীক্ষা হবে। এ সময় শারীরিক দিক থেকে সুস্থ থাকাটা জরুরি। পড়াশোনার পাশাপাশি খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম-এগুলোও নিয়মমতো করতে হবে। বেশি রাত জাগবে না, অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শরীর সুস্থ না থাকলে ভালো প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষায় তা প্রয়োগের সুযোগ পাবে না। টানা পড়াশোনা অনেক সময় বিরক্তির জন্ম দেয়। তাই কিছু সময় বিনোদনের জন্য রাখা যেতে পারে। পরীক্ষার আগের রাতে এবং পরীক্ষা চলাকালীন দিনগুলোয় খাবারদাবারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে আছে যে, বিরিয়ানি বা এ ধরনের ভারী অথবা ফাস্টফুডজাতীয় খাবার পছন্দ করে, যা মোটেই পরীক্ষার সময় স্বাস্থ্যকর নয়। 

শুধু পরীক্ষার আগের রাতে পড়েই ভালো পরীক্ষা দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হবে বলে আমি মনে করি না। দুবছর ধরে একই বই পড়েছ, তাই পরীক্ষার আগের রাতে কম পড়লেও সমস্যা হবে না। পরীক্ষার আগের রাতে শুধু পৃষ্ঠা উলটিয়ে পড়াগুলো রিভিশন দেবে। যাতে কী কী পড়েছ, সেগুলো মস্তিষ্ককে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। প্রবেশপত্র, প্রয়োজনীয় কলম-পেনসিল, স্কেল, রাবার-এছাড়া আনুষঙ্গিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো আগের রাতে ঠিকঠাক করে রাখতে হবে। যাতে পরীক্ষার দিন সকালবেলা কোনো ধরনের তাড়াহুড়া করা না লাগে। পরীক্ষার আগের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার পরামর্শ দেব। যাতে শান্ত মনে পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পার, ঠান্ডামাথায় পরীক্ষা দিতে পার। অভিভাবকরা লক্ষ রাখবেন, পরীক্ষার্থী যেন সুস্থ শরীরে পরীক্ষার হলে যেতে পারে।

পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যারা ঢাকা বা বড় শহরে থাক, তাদের শহরের ট্রাফিক জ্যাম বিবেচনা করে হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হবে। পরীক্ষার প্রথম দিন অবশ্যই একটু আগে যাবে, সিট কোন কক্ষে পড়েছে তা জানার জন্য। প্রথম দিন কমপক্ষে ৪৫ মিনিট এবং অন্যান্য দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। আর যদি দেরি হয়েই যায়, তাহলে দুশ্চিন্তা না করে সুস্থিরভাবে পরীক্ষা দেওয়া শুরু করবে।

‘আমি উত্তর দিতে পারব’-এ আত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি কেউ হলে বসে, তাহলে যে প্রশ্নই আসুক না কেন, যেভাবেই প্রশ্ন আসুক, সে উত্তর দিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষাভীতি না রেখে পরীক্ষার হলে বসতে পারে, তাহলে আমার মনে হয় তারা ভালো নম্বর পাবে। পরীক্ষার কেন্দ্রে কী কী নেওয়া যাবে বা কী কী করা যাবে না-এসব নিয়ম প্রবেশপত্রের পেছনের অংশে লেখা আছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে যে উত্তরপত্র দেওয়া হয় তাতে কীভাবে লিখতে হবে, অতিরিক্ত উত্তরপত্র নিলে তা কোথায় উল্লেখ করতে হবে-এসব বিষয়ে বিস্তারিত লেখা আছে। খাতায় মার্জিনের জন্য স্কেল ব্যবহার করবে। খাতা হাতে পাওয়ার পর সতর্কতার সঙ্গে নাম, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাই করে দেখতে হবে, ভুল হলে যত ভালো পরীক্ষা হোক ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। তাই প্রয়োজনে প্রথমে পেনসিল দিয়ে দাগিয়ে ঠিক হয়েছে কি না মিলিয়ে নিয়ে পরে বৃত্ত ভরাট করলে ভালো হয়। মনে রাখবে, বিষয় কোড লিখবে প্রশ্ন পাওয়ার পর। বৃত্তের ওপর কোনো রকম কাটাছেঁড়া বা ঘষামাজা করা যাবে না। সেট কোডে ভুল করা যাবে না। কোনো ভুল হলে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শককে জানাতে হবে।

পরীক্ষার সময় ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। হলে বসার পর সময় ব্যবস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কতগুলো প্রশ্ন আছে, আর কতগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, সে হিসাবে সময় বণ্টন করে লিখতে হবে। একটা প্রশ্ন খুব ভালোভাবে লিখলাম, আর লিখে বেশি সময় নিয়ে ফেললাম। আর বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর ভালোভাবে দিতে না পারার চেয়ে সব প্রশ্ন সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে লিখলে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। প্রশ্নের চাহিদা অনুযায়ী সব প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে লিখে আসতে হবে।

লেখক: অধ্যক্ষ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049078464508057