কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চলমান এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কেন্দ্রসচিব ও দুই সহকারী শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটি তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন ভূরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোরশেদুল হাসান।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, ভূরুঙ্গামারী সদরের ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার ইংরেজি প্রথম পত্র এবং গতকাল মঙ্গলবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শুরুর আগেই কেন্দ্রের বাইরে প্রশ্নের অনুলিপি পাওয়া যায়। তবে ঠিক কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত তা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রশ্নফাঁসের খবরে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. কামরুল ইসলাম, সচিব প্রফেসর মো. জহির উদ্দিন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলমসহ সংশ্লিষ্টরা ভূরুঙ্গামারী যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রাসেল এবং ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক জোবায়েরকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আটক করে থানায় নেয়া হয়। রাত পৌনে বারোটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাসেল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যাচ করে কোচিং করান। প্রশ্ন ফাঁসে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত তা বের করতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। আর নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরীক্ষা শুরুর বেশ কিছু সময় আগে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা কেন্দ্রের বাইরে পাঠানো হয়। পরে সেই প্রশ্নের হাতে লেখা কপি চুক্তি করা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলি করা হয়। এ ঘটনায় কেন্দ্র সচিবসহ পরীক্ষা পরিচালনায় থাকা একাধিক শিক্ষক জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের স্থানীয় একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রশ্নের হিসাবে কোনও গড়মিল পাওয়া যায়নি। ফলে এটা নিশ্চিত, মূল প্রশ্ন না পাঠিয়ে ছবি তুলে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই প্রশ্নের অনুলিপি পাওয়া গেছে সুতরাং এ কাজে কেন্দ্রসচিব, পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক এমনকি শিক্ষা বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করলে রহস্য বের হয়ে আসবে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, থানায় কেন্দ্র সচিব ও দুই সহকারী শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব ও জেলা শিক্ষা অফিসার উপজেলা পরিষদে যান। এ সময় তারা থানার সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সাথে কোনও কথা বলেননি। তবে কেন্দ্র সচিব ও দুই সহকারী শিক্ষক তথনও থানার ভেতরে ছিলেন। পরে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, সচিব ও জেলা প্রশসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদ ত্যাগ করেন। এসময় অপেক্ষমান সাংবাদিকরা তাদের প্রশ্ন করলে তারা কোনও মন্তব্য না করেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।
সহকারী পুলিশ সুপার মোরশেদুল হাসান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আটক তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা হলে তদন্ত করে পুরো বিষয়টি উদঘাটন করা হবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।