কুড়িগ্রামের উলিপুরে পত্রিকা বিক্রেতা মোশাব্বির হোসেন মুসা ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জেএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। অত্যন্ত গরিব ঘরে জন্ম নেয়া অসহায় পরিবারের মাতৃহারা মুসার বসতবাড়ি তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর তার পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে এবং ঠাঁই নেয় মামা রাজমিস্ত্রি তৈয়ব আলীর বাড়িতে।
৪ ভাইবোনের মধ্যে বড় মুসা লেখাপড়ার পাশাপাশি পত্রিকা বিক্রি করে চলে তার জীবন। পত্রিকা পাঠকের হাতে পত্রিকা তুলে দিয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে আসছিল সে। তার এক বোন ২য় শ্রেণি,এক ভাই চতুর্থ আর অন্য একজন প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। এমনিতে তার নিজের পড়াশুনার খরচ অন্যদিকে তার ছোট ভাইবোন। অর্থাভাবে যেকোন মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ মেধাবী মুসার লেখাপড়া।
বুধবার দুপুরে জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই বাজারে পত্রিকা বিক্রির সময় কথা হয় মুসার সাথে। সে জানায়,তাদের বাড়ি উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন গ্রামে। গত ৪ বছর আগে তিস্তা নদীর কড়াল গ্রাসে একমাত্র সম্বল তার ভিটে মাটি বিলীন হয়ে যায় তিস্তা নদীগর্ভে। তাদের আশ্রয় হয় একই ইউনিয়নের ঐ গ্রামের মামা ছকমলের বাড়িতে। মামার অভাবের সংসারে তাদের ঠাঁই হলেও দু’বেলা দু’মুঠো খাবার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।তাই বেঁচে থাকা ও পড়াশুনার জন্য সে পথ হিসাবে বেছে নিয়েছে পত্রিকা বিক্রি করার কাজ। প্রতিদিন তাকে দুরদুরান্তে গিয়ে পত্রিকা নিয়ে বিক্রি করে তারপর খাওয়া ও পড়ার চিন্তা করতে হয়। এরপরও শত প্রতিকূলতা দমিয়ে রাখতে পারেনি মুসার পড়াশুনার গতিকে। সে ভর্তি হয় উপজেলার পার্শ্ববর্তী খামার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। কখনও স্কুলের আগে বা কখনও স্কুল শেষে দুপুরের পর উলিপুর শহর থেকে বিভিন্ন পত্রিকা নিয়ে থেতরাই বাজারসহ আশপাশের এলাকার পাঠকের হাতে তুলে দিতে নিরন্তন ছুটে চলে সে। উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব সংসারেরও কিছুটা চাহিদা মেটায়।
গত বছর জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ মেধাবী ছাত্র মুসা এ প্লাস পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়েছে। মুসা জানায়,স্কুলের স্যাররা আমাকে প্রচুর সাহস যুগিয়ে সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি গ্রামের অনেক মুরুব্বী তাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন বলেও সে জানায়।তবে সে ভবিষ্যতে লেখাপড়া নিয়মিতভাবে করতে পারবে কিনা তানিয়ে সে ভীষণ শংকিত। এরপর তার কি হবে তা বলতে বলতেই সে ডুকরে কেঁদে উঠে। দৈনিক ইত্তেফাকের উলিপুরের প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম জানান, পত্রিকা বিক্রি করে পড়াশুনা করে সে জেএসসিতে ভাল রেজাল্ট করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। আমরা সাংবাদিকরা যদি পারি তার জন্য এগিয়ে আসা উচিৎ।
খামার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক কুমার রায় জানান, অমি মুসাকে বেশ জানি। সে ক্লাসে নিয়মিত থাকার চেষ্টা করত। কিন্তু অভাবে লেখাপড়া করতে তাকে প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে। এরপরও সে জেএসসিতে এ প্লাস পেয়ে আমাদের সম্মান রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে তার পড়াশুনা অর্থাভাবে বন্ধ না হলে সে জীবনে ভাল করবে বলে আমি মনে করি।