ওরাই শিক্ষক,ওরাই শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

ওরাই শিক্ষক,ওরাই শিক্ষার্থী

পটুয়াখালী থেকে মিলন কর্মকার রাজু |

পটুয়াখালী জেলার শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা, প্রাক প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শিক্ষার সফলতা, ব্যর্থতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ১০ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন পটুয়াখালী থেকে মিলন কর্মকার রাজু। দৈনিকশিক্ষার পাঠকের জন্য আজ মঙ্গলবার (২৩শে জানুয়ারি) তৃতীয় পর্ব তুলে ধরা হলো। আগামীকাল বুধবার (২৪ শে জানুয়ারি) থাকবে প্রতিবেদনের চতুর্থ পর্ব।

একই বয়সের জিদনী। তাদের তত্বাবধানে চলছে ২৬ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া। এই ক্লাসে শিক্ষকও একজন আছেন। কিন্তু তিনিও অবাক ওদের পড়া শেখানোর কৌশল দেখে। কখনও রাগ করছে, কখনও বা হেসে হেসে বুঝিয়ে দিচ্ছে তাদের সহপাঠীদের পাঠ্য বইয়ের ছড়া, গল্প। যারা সবাই ওর বয়সী। এই দুই ছাত্র-ছাত্রীর বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের পশ্চিম চাপলী গ্রামে।
শীতের ঘন কুয়াশার মধ্যে ঢাকা পশ্চিম চাপলী গ্রামে প্রবেশ করতেই শোনা যায় জাতীয় সংগীতের সুর। একটু কাছে যেতেই চোখে পড়ে ধান ক্ষেতের পাশে ধুলাময় রাস্তার পাশে একটি টিনসেড ঘর। এ ঘর থেকেই ভেসে আসছে শিশু শিক্ষার্থীদের অ আ ক খ পড়ার শব্দ। বেসরকারি এ প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম চাঁদের হাসি।

একই ইউনিয়নের বেতকাটা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত আছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন মিয়া জমির দলিল করতে কলাপাড়া গেছেন। এটিও মো. রফিকুল ইসলাম তাঁকে মৌখিক ছুটি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৩শে জানুয়ারি) পর্যন্ত এই স্কুলে ১৩জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে প্রাক প্রাথমিকে। গতবার ছিলো ২১ জন।
টিনসেড এই বিদ্যালয়ে কাগজে-কলমে ছাত্র-ছাত্রী ১১৭। তিনটি রুমে ক্লাস হয়। অপরটিতে অফিস রুম। প্রাক প্রাথমিকের বই না পাওয়ায় নতুন বছরে ক্লাশ শুরু করতে পারেনি। অথচ স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায় এ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা সালমা আক্তার বিদ্যালয়ে আসেন নি। অথচ প্রাক প্রাথমিকে নয় জন, প্রথম শ্রেণিতে ১৫ জন ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ১০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত। প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন মিয়া জানালেন, সালমা ম্যাডামের ছেলের জ্বর হয়েছে। তাই তিনি স্কুলে আসতে পারেন নি। বিষয়টি তাঁকে মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে। ছুটি নেননি তিনি।

বৌলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি প্রতিটি বিদ্যালয়কে সরকার প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের হাসি-খুশি ও খেলার ছলে পড়াশোনার জন্য প্রতি বছর পাঁচ হাজার টাকা দেন। কিন্তু এ বিদ্যালয়ে এখনও প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের উপযোগী কোন রুম তৈরি করেনি। প্রতি বছরের পাঁচ হাজার টাকা শুধু নাকি খেলনা, মাদুর কিনতেই খরচ হয় জানালেন প্রধান শিক্ষক মো. আল মামুন মিয়া। এভাবে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেই পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হয় শ্রেণি কক্ষ সজ্জিত করা ও খেলার সামগ্রী কেনার জন্য। কিন্তু বাস্তবে সরকারি স্কুলে আধুনিক সুবিধা থাকা সত্বেও শিক্ষক সংকট, বরাদ্দকৃত অর্থের অপব্যবহার ও শিক্ষা অফিসের এটিওদের আন্তরিকতার অভাবে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা থেকে এ অভিযোগ অভিভাবকদের। তবে ধুলাসার ও লতাচাপলী ইউনিয়নের দায়িত্বরত এটিও মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন করেন। প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে তাঁরা প্রাক প্রাথমিক উপযোগী ক্লাস রুম তৈরির কথা বলেন। কিন্তু তারা না করলে তার কি করার আছে।

ফিরে আসি চাঁদের হাসিতে। এখানের চিত্র সরকারি স্কুলের বিপরীত। উন্নত খেলনা নেই। নেই পাকা ঘর। তবে রুমটি পরিপাটি। টিনের বেড়ায় সাটানো হয়েছে শিশু শিক্ষার ফ্লিপকার্ড। এ ফ্লিপকার্ড দেখেই ওরা পড়ছে।
সৈয়দপুর ১০৫ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্নকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এ নিয়ে অভিভাবকরা হতাশ। গত কয়েক বছর ধরে শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারনে লেখাপড়া মারাত্নকভাবে ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুল বিমুখ হয়ে পড়েছে। নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় প্রতি বছর ঝড়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ জানান, শিক্ষা অফিসে শিক্ষকের জন্য লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তারাও বলছে শিক্ষক সংকট। বাধ্য হয়ে আমি এ বিদ্যালয়ের ১১৮ জন শিক্ষার্থীকে তিনি একাই পড়াই যতোটুকু সম্ভব।

সলিমপুর গ্রামের শিশু শিক্ষা কেন্দ্র “সোনামনি”। বিপরীত চিত্র এখানে। শুধু স্কুল নয় গ্রামীণ জনপদের যাতে কোন শিশু স্কুলে বিমুখ হয়ে শ্রম পেশায় নিয়োজিত না হয় এজন্য কাজ করছে শিক্ষিকা রনজিতা। এখানে নতুন বছর প্রাক প্রাথমিকে ২৬ জন ভর্তি হলেও সরকারি স্কুলে ভর্তির হয়েছে ১০-১৫ জন। সরকারি স্কুলে বই না পাওয়ায় এখনও ক্লাস শুরু হয়নি। অথচ বছরের প্রথম দিন থেকেই ক্লাশ শুরু হয়েছে এখানে। শিক্ষিকা রনজিতা জানালেন, তাঁদের লক্ষ্য গ্রামীণ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলোর কাতারে সামিল করা।

পাঁচ বছরের প্রসেনজিত। বাবা থেকেও নেই। মা মুক্তা রানী দ্বিতীয় বিয়ে করে এখন অন্যের সংসার করছে। তাই প্রসেনজিতের আশ্রয় হয়েছে দিদিমা(নানী) সন্ধা রানীর ঘরে। যেখানে দু’মুঠো খাবার যোগাড় করতে সন্ধা রানীকে দিনরাত মানুষের বাসায় কাজ করতে হচ্ছে সেখানে প্রসেনজিতকে স্কুলে ভর্তির চিন্তাও করতেন না তিনি। কিন্তু সোনামনি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র এ শিশুকে বর্ণমালার সাথে পরিচিতির উদ্যোগ নিয়েছে।

শিক্ষকা রনজিতা জানালেন, মা-বাবা না থাকলে সন্তানের কি অবস্থা হয় তিনি কাছ থেকে দেখেছেন। তাই এই শিশুকে স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি রাতে বাসায় নিয়ে এসে পড়াচ্ছেন। আগামী বছর স্কুলে ভর্তি করবেন তাকে সব কিছু শিখিয়ে, যাতে সে অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন ও ভবিষতের স্বপ্ন দেখতে শিখে।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042409896850586