কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি মিলছে: গণভবনে বৈঠক কাল - দৈনিকশিক্ষা

কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি মিলছে: গণভবনে বৈঠক কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিতে ফের উদ্যোগী হয়েছে সরকার। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্বীকৃতির ঘোষণা দিতে পারেন। ঘোষণায় কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর দাওরা-ই হাদিসকে স্নাতকোত্তরের সমমান দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকার ও হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। সরকার স্বীকৃতি দিতে রাজি তবে শর্ত ছিল, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো মাদ্রাসাও চলবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। পাঠ্যপুস্তক ও শ্রেণিস্তর নির্ধারণ করবে সরকার। পরীক্ষ গ্রহণ ও ফল প্রকাশের দায়িত্ব থাকবে সরকার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু এসব শর্ত মানতে নারাজ আহমদ শফীসহ দেশের অধিকাংশ মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক বেফাকুল মাদ্রাসিল আরাবিয়ার (বেফাক) নেতারা। শেষ পর্যন্ত তাদের দাবি সরকার মেনে নিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’-এর সদস্য সচিব মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক ছয়টি বোর্ডের প্রতিনিধিদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আশা করছি, তিনি আগামীকালই কওমি সদনের স্বীকৃতির ঘোষণা দেবেন। তিনি জানান, দাওরা-ই হাদিসকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের স্বীকৃতি দেওয়া হবে আপাতত। অন্যান্য ধাপ এখনই স্বীকৃতি পাচ্ছে না। গণভবনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হেফাজতের আমির আহমদ শফী এরই মধ্যে ঢাকায় এসে পেঁৗছেছেন বলে জানা গেছে।

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিতে ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে ১৭ সদস্যের ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে সরকার। শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসউদকে কো-চেয়ারম্যান এবং গোপালগঞ্জের গহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা রহুল আমিনকে সদস্য সচিব করা হয়। ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেন সরকারপন্থি হিসেবে পরিচিত কমিশনের কো-চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব। তবে আহমদ শফী ও তার সমর্থক কমিশন সদস্যরা এ সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে মন্ত্রিসভায় সুপারিশটি অনুমোদনের কথা ছিল; কিন্তু হেফাজতের আন্দোলনের হুমকির মুখে তা পিছিয়ে যায়।

এরপর গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ফরীদউদ্দীন মাসউদকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির দায়িত্ব ছিল, কীভাবে কওমির সনদের স্বীকৃতি দেওয়া যায়, তা নির্ধারণ করা। আবারও হেফাজতের হুমকির মুখে পিছু হটে সরকার। ৯ অক্টোবর আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন কমিশনকে পুনরুজ্জীবিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৯ জানুয়ারির মধ্যে কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আলেমরা একমত হতে না পারায় সুপারিশ জমা দিতে পারেননি।

সরকারি হিসাবে ২০১৫ সালে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৯০২টি। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। এ হিসাবের বাইরেও কয়েক হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। প্রায় ৮০ ভাগ মাদ্রাসা বেফাকের নিয়ন্ত্রণে। আরও পাঁচটি আঞ্চলিক বোর্ড বাকি মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।

২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া প্রতিবেদনে কওমির সর্বোচ্চ শিক্ষা দাওরা-ই হাদীসকে স্নাতকোত্তর, মারহাতুল ফযিলতকে স্নাতক, সানবিয়াহ খাসসাহকে এইচএসসি ও সানবিয়াহ আম্মাহকে এসএসসির সমমান দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। সিলেবাসের বিশদ রূপরেখাও ছিল সুপারিশে। প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত, সমাজবিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তির মতো সাধারণ শিক্ষার বিষয়াবলি আবশ্যিক করার সুপারিশ করা হয়। তবে আহমদ শফী ও তার সমর্থকদের অভিযোগ ছিল, সরকার কওমির শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার নামে মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম চালু হলে মাদ্রাসার স্বকীয়তা থাকবে না।

এ বিষয়ে জানাতে চাইলে কমিশনের কো-চেয়ারম্যান ফরীদউদ্দীন মাসউদ বলেন, কওমি মাদ্রাসার বিভিন্ন ধাপকে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাবলিক পরীক্ষার মতো স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছিলাম; কিন্তু আলেমরা এ বিষয়ে একমত হতে পারিনি। কিন্তু সবাই দাওরা-ই হাদিসের বিষয়ে একমত হয়েছেন, তাই এ বিভাগের স্বীকৃতি এখন দেওয়া হবে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে হবে বলে তিনি আশাবাদী।

দাওরা-ই হাদিসকে স্বীকৃতি দিলেও মারহাতুল ফযিলত, সানবিয়াহ খাসসাহ, সানবিয়াহ আম্মাহ কিসের সমমান পাবে! কিংবা এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ের স্বীকৃতি ছাড়া সরাসরি স্নাতকোত্তরের স্বীকৃতি বাস্তবসম্মত কিনা_ এসব প্রশ্নে ফরীদউদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘সেগুলো হলে ভালো হতো। তবে আপাতত যা হচ্ছে তাই নিয়ে খুশি থাকতে হবে। ভবিষ্যতে আমরা একমত হলে, এসব ধাপও স্বীকৃতি পাবে।’

আহমদ শফী ও তার সমর্থকদের দাবি, বিদ্যমান বোর্ডগুলোর অধীনেই দাওরা-ই হাদিসকে স্নাতকোত্তরের সমমান দিতে হবে। সরকারের প্রস্তাব ছিল, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্বীকৃতি হবে। তবে সরকার এখানেও হেফাজতের দাবিই মেনে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কেউ স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের স্বীকৃতি দিতে পারে কি-না- এ প্রশ্নে ফরীদউদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘আপাতত ছয় বোর্ড থেকে সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্তর্বর্তী এ কমিটির অধীনেই আপাতত সনদ দেওয়া হবে। পরে এ কমিটি ঠিক করবে কোন কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নেবে, ফল প্রকাশ করবে ও সনদ দেবে।’

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036659240722656