করোনাভাইরাস: কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্দয় নীতি - দৈনিকশিক্ষা

করোনাভাইরাস: কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্দয় নীতি

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেশজুড়ে লকডাউন চলছে এক সপ্তাহ ধরে, আর এর মধ্যেই সরকারের নেয়া পদক্ষেপ এবং তা কার্যকর করার ধরণে আশাবাদী হচ্ছেন সেদেশের অনেকে। রোববার (৫ এপ্রিল) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ  তথ্যা জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, কারণ এই অল্প সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকার কর্তৃপক্ষ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের পরীক্ষা করেছে এবং ৬৭টি ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষা ইউনিট তৈরি করে কাজে লাগিয়েছে।

গাড়ি চালিয়ে পার হওয়ার সময়ও পরীক্ষা করা হচ্ছে অনেককে। দক্ষিণ আফ্রিকা কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিদিন ৩০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করতে পারবে। এখন পর্যন্ত ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে মাত্র পাঁচ জনের, আর এখন পর্যন্ত সংক্রমণ হয়েছে ১,৪০০ মানুষের মধ্যে।

'ভীতি উদ্রেক করা নেতৃত্ব'

বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা অপেক্ষাকৃত দ্রুত, কার্যকর এবং অনেকটা নির্দয় ভাবে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ভয়ানক একজন নেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।

নেতা হিসেবে সহানুভূতিশীল, ধীর স্থির চরিত্রের অধিকারী হলেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ও বেসরকারি খাত থেকে সাহায্যের প্রবাহ নিশ্চিত করে পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আর প্রেসিডেন্টের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রী জুয়েলি এমখিজেও তার কর্মচঞ্চল ও পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি মার্জিত ও ওয়াকিবহাল দৈনিক সংবাদ সম্মেলনের জন্য বিশ্বব্যাপী নন্দিত হয়েছেন। এই সময়ে যে কোনো ভুলত্রুটি হয়নি, তা কিন্তু নয়।

অনেক সময়ই পুলিশ এবং সেনাবাহিনী তিন সপ্তাহব্যাপী লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যবসায়িক রাজধানী জোহানেসবার্গ এবং অন্যান্য এলাকার রাস্তায় সাধারণ মানুষকে পেটানো, অসম্মানজনক আচরণ করা থেকে শুরু করে গুলিও করেছে।

কিছু নিয়ম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দোটানা ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্ট বার্তা দেয়া এবং কয়েকজন মন্ত্রীর কথা ঘুরানোর মত ঘটনাও ঘটেছে।

তবে সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে দারিদ্রপীড়িত এবং ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও তাদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা।

অনেকে মনে করেন সেসব এলাকায় এখনও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

তবে সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যেই ধরণের লকডাউনের মধ্যে এক সপ্তাহ পার করেছে, সেরকমটা বিশ্বের আর কোনো দেশেই দেখা যায়নি।

এই লকডাউনের মধ্যে ঘরের বাইরে দৌড়ানো বা কোনো ধরণের ব্যায়াম করতে যাওয়া, সিগারেট বা বিয়ার কিনতে যাওয়া, কুকুরকে নিয়ে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, যা পৃথিবীর অনেক দেশেই অনুমোদিত ছিল।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার যেই সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অকার্যকর হিসেবে সমালোচনা করা হয় এবং তাদের দেশের যেই বেসরকারি খাতকে বিচ্ছিন্ন ও লোভী হিসেবে সমালোচনা করা হয়, তারা যেভাবে এই দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে, যে বিষয়টি আসছে আলোচনায়।


দক্ষিণ আফ্রিকায় এই মুহূর্তে যেই ব্যক্তি আত্মপ্রসন্নতায় ভুগতে নিষেধ করছেন এবং আত্মতুষ্টির সম্ভাব্য ভয়াবহতা সম্পর্কেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তিনি দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার উদ্বোধন করার সময় বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাক্তার এমখিজে বলেন, "আমরা এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তা সম্ভবত প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের আগের শান্ত অবস্থা।"

"আমরা যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেই তাহলে যেকোনো সময় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারি। তখন আমরা সতর্ক হওয়ারও সুযোগ পাবো না।"

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মি. এমখিজে মন্তব্য করেছেন, "যেহেতু দেশের ভেতরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, আমরা এখনও সমস্যার সঠিক চিত্র পাই নি।"

অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলেও, দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আসল পরীক্ষা এখনও বাকি।

আর যেহেতু আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসম সমাজ ব্যবস্থাগুলোর একটি দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজ, সেই পরীক্ষার ফল নির্ধারিত হবে দেশটির দরিদ্রতম সম্প্রদায়গুলোর আচরণে।

'অযোগ্যতা ও অদক্ষতা'

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি ও বেসরকারি খাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বোধ বুদ্ধিসম্পন্ন, দক্ষ নেতৃত্ব থাকলেও বহু বছর স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অর্থনীতির স্থিরগতি বিরাজ করার কারণে প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে অর্থ নিয়ে তহবিল সংগ্রহ করা সাবেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অ্যাড্রিয়ান এথোভেন বলেন, "প্রায় এক দশক ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেয়ায় দেশ হিসেবে আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত নই।"

এই আশঙ্কাটা দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষেত্রেও খাটে। অনেক সময়ই রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্য ব্যক্তিকে বসানো হয়েছে ঐ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাদেশিক সরকারের এক সিনিয়র নেতা বলেন, "স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা যথেষ্ট কাজ করলেও শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় একসাথে অনেকে প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন, নেতৃত্ব দেয়ার কোনো ক্ষমতাই নেই। এবং তাদের অধিকাংশেরই বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার মানসিকতা নেই।"

জোহানেসবার্গের একপ্রান্তে থাকা শহরতলী আলেক্সান্দ্রার রাস্তা দিয়ে এক বিকেলে হাঁটলেই ধারণা পাওয়া যায় যে দক্ষিন আফ্রিকার জন্য এই ভাইরাস আটকে রাখা কতটা কঠিন হতে পারে।

সেনাবাহিনীর উপস্থিতি, গণমাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে ক্রমাগত বার্তা দেয়া, পিক আপ ট্রাকে করে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করায় পরীক্ষা করার ইউনিটগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ থাকলেও দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাটির রাস্তায় শিশুদের ফুটবল খেলতে অথবা তরুণদের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখা যায়।

আলেকজান্দ্রায় ভাইরাস ছড়ানো নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আপাতত সেখানকার মানুষের মধ্যে তার চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় চাকরি হারানো, খাদ্যের দাম নাগাল ছাড়ানো এবং দূরত্ব বজায় রাখার মত 'প্রায় অসম্ভব' লক্ষ্য পূরণ করা।

কারণ সেখানকার অধিকাংশ মানুষেরই বাড়ি বলতে রয়েছে একটি ঘর, যেখানে কোনো রান্নাঘর বা বাথরুম নেই।

কিন্তু হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া যুদ্ধ বা কোনো দুর্যোগে পরিস্থিতিতে অনেক সময়ই সমাজে আমূল পরিবর্তন হয় থাকে।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও চলমান ধারার পতন, দুর্বল নেতৃত্বের মুখোশ উন্মোচনের পাশাপাশি সমাজের সমকালীন সময়ের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও প্রগতিশীল মানুষগুলোর উত্থান - সমাজে এ ধরণের পরিবর্তন সাধারণত দুর্যোগ পরিস্থিতিতেই ঘটে থাকে।

যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037679672241211