করোনায় শিক্ষার্থীদের দৈনিক পড়াশোনা ৪ ঘণ্টা কমেছে - করোনা - দৈনিকশিক্ষা

করোনায় শিক্ষার্থীদের দৈনিক পড়াশোনা ৪ ঘণ্টা কমেছে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

করোনা মহামারীর আগে একজন শিক্ষার্থীর দৈনিক গড় পড়াশোনা ছিল ৬ ঘণ্টা। করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকায় একজন শিক্ষার্থীর এই পড়ার হার গড়ে ৪ ঘণ্টা কমেছে। অর্থাৎ স্কুল বন্ধ থাকায় একজন শিক্ষার্থী গড়ে ২ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে। তবে এ সময় ঝরে পড়াদের হার বেশি দেখা গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে। এ সময় প্রাথমিকের ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ৫ শতাংশ ঝরে পড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ভবনের অডিটোরিয়ামে শিশু শিক্ষা জরিপ-২০২১ এর রিপোর্ট প্রকাশে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্পিয়ার শাখার প্রধান স্টানলি গোয়াভুয়ার। জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম।

মাসুদ আলম বলেন, আন্তর্জাতিক মানের জরিপ পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র অনুসরণ করে সারা দেশে মোট ৯ হাজার খানায় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি সময়ে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপ অনুযায়ী, করোনার প্রভাবে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় পরিচালিত বিভিন্ন দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন, টেলিভিশন ও বেতারে মোট ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ নিয়েছে।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, কভিডকালে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় উপস্থিতি যথাক্রমে ৮০ দশমিক ৫, ৫৯ দশমিক ৬ ও ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২০১৯ এর তুলনায় প্রাথমিকে কিছুটা কমলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুটা বেড়েছে।

এ সময় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনায় মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার হার বেশি। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিকের ৪ শতাংশ ছাত্র পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। মেয়েরা ছেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রাথমিকে ঝরে পড়া মোট শিক্ষার্থীর হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ। তাছাড়া মাধ্যমিকেও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার বেড়েছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এটি ছিল ৫ শতাংশ। অথচ কভিডের আগে এ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এ মাধ্যমেও মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার বেশি। কভিডে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, আর মেয়েদের মধ্যে এ হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

জরিপে আরও দেখা গেছে, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে একজন শিক্ষার্থী যেখানে বাসা, স্কুল ও কোচিং মিলিয়ে দৈনিক গড়ে ৬ ঘণ্টা পড়াশুনা করত, সেখানে স্কুল বন্ধ থাকায় দৈনিক পড়াশোনা করেছে ২ ঘণ্টা। কভিডকালীন শিক্ষার্থীদের পড়া ও গাণিতিক দক্ষতা যথাক্রমে ৪৯ দশমিক ৮ ও ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ যা ২০১৯ এর তুলনায় গণিতে কিছুটা কমলেও পড়ার দক্ষতার ক্ষেত্রে বেড়েছে।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়, কভিড-১৯ এর প্রভাবে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় পরিচালিত বিভিন্ন দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন, টেলিভিশন ও বেতারে মোট ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ নিয়েছে। দেখা গেছে, করোনাকালে প্রাথমিকে ৮০ দশমিক ৫, মাধ্যমিকে ৫৯ দশমিক ৬ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ উপস্থিত ছিল। অর্থাৎ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় প্রাথমিকে কিছুটা কমলেও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুটা বেড়েছে।

তাছাড়া কভিডকালে স্কুল বন্ধ থাকার সময় ২০ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষক ফোনে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিয়েছেন, ২০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দিয়েছেন। ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও অ্যাসাইনমেন্ট শিট দিয়েছেন। আর ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কোনো খোঁজই নেননি।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের পড়া ও গাণিতিক দক্ষতা যথাক্রমে ৪৯ দশমিক ৮ ও ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় গণিতে কিছুটা কমলেও পড়ার দক্ষতার ক্ষেত্রে বেড়েছে।

এ সময় ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে কভিডের প্রভাব বিষয়ে আগে নির্ভরযোগ্য তেমন কোনো সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে এনেছে। এ জরিপের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এখন শিক্ষাক্ষেত্রে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে সরকারের প্রয়োজনে এ ধরনের জরিপ পরিচালনায় বিবিএস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, বিবিএস সবসময় জাতির প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখে সময়ানুগ ও নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যান প্রস্তুতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম বিবিএসের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। নিয়মিত বিভিন্ন শুমারির পাশাপাশি এ ধরনের চাহিদাভিত্তিক জরিপ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিবিএস সবসময় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগ্রহী। তিনি বিবিএসকে আন্তর্জাতিক মানের একটি জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে ইউনিসেফসহ সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপংকর রায়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন অংশীজন ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

বিদেশিদের কাছে নালিশ করে লাভ হবে না : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিদেশিদের কাছে নালিশ করে লাভ হবে না : প্রধানমন্ত্রী ভাই বলায় ক্ষেপে গেলেন শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha ভাই বলায় ক্ষেপে গেলেন শিক্ষা কর্মকর্তা জিপিএ-৫ পেয়েও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারেন না - dainik shiksha জিপিএ-৫ পেয়েও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারেন না ভাই বলায় ক্ষেপে গেলেন শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha ভাই বলায় ক্ষেপে গেলেন শিক্ষা কর্মকর্তা ঢাবি ছাত্রকে মার*ধর : প্রলয় গ্যাংয়ের দুই সদস্য কারাগারে - dainik shiksha ঢাবি ছাত্রকে মার*ধর : প্রলয় গ্যাংয়ের দুই সদস্য কারাগারে এমপিও আপিল কমিটির সভা বুধবার - dainik shiksha এমপিও আপিল কমিটির সভা বুধবার ভুলে ভরা ইংরেজি বই নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা, নির্বিকার এনসিটিবি - dainik shiksha ভুলে ভরা ইংরেজি বই নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা, নির্বিকার এনসিটিবি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037939548492432