করোনায় সিনিয়র পেনশনভোগীদের সুরক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

করোনায় সিনিয়র পেনশনভোগীদের সুরক্ষা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

করোনা ভাইরাসে প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করে যাচ্ছেন। সাধারণত তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকে। একদিকে বয়স, অপরদিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার ও যথাযথ চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারায় তাদের শরীরে রোগ এসে বাসা বাঁধে। বৃদ্ধ বয়সে তাদের স্বাভাবিক খাবারের চাহিদাও কমে যায়। এ ঘাটতি পূরণে তাদের বেশি বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজন। পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক নিয়মিত ঔষধপত্র খাবারের বিষয়টি প্রতি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমান সরকার বয়স্ক ভাতা দিয়ে অনেকটা প্রবীণদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনতে সক্ষম হয়েছেন। অথচ সরকারি কর্মচারী যারা বর্তমানে বেতন স্কেলের পূর্বে অবসর গ্রহণ করেছেন তাদের পেনশন ভাতা নতুন পেনশনভোগীদের চেয়ে অতি নগণ্য। বর্তমান পেনশনভোগী ৩য়, ৪র্থ কর্মচারীরা এককালীন ৫০ শতাংশ হস্তান্তর করেও কমপক্ষে ২০-৩০ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। কারণ বর্তমান সরকার সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা ২ গুণ বৃদ্ধি করেছেন। সিনিয়র পেনশনভোগীদের কর্মকালীন বেতন স্কেল ছিল দুঃখ কষ্টের মাঝে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ প্রবাদের মতো। না হতো সঞ্চয়। কিছু জমি জমা, ঘর দরজা করার তাদের মাঝে ছিল। দুঃস্বপ্ন অস্বচ্ছল অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হতো। চাকরির সময়ে সিনিয়ররা জুনিয়রদের চেয়ে বেতন বেশি পেয়ে থাকে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে চলে আসছে। অথচ পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে উল্টা নিয়ম। 

এ প্রসঙ্গে গীতিকার হাছন রাজার গানের দু’টি লাইন একজন সিনিয়র পেনশনভোগী হিসাবে জীবন চলার পথে প্রায়ই মনে পড়ে। গানটি হলো ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে’- সংশ্লিষ্টদের ভাবখানা প্রবীণ পেনশনভোগীদের শিগগিরই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে প্রেক্ষাপটে তাদের স্বাভাবিকভাবে স্স্থু জীবন যাপনের তাই প্রয়োজন তেমন নেই। ছেলে, মেয়ে, জামাই, নাতি, নাতনি আত্বীয়স্বজনসহ অনেকের ভাবনা সরকারি পেনশনধারী সরকার তাদের বর্তমান চাকুরিজীবিদের মত ভাল অবস্থানে রেখেছেন। পেনশনভোগী প্রবীণদের আর্থিক দুরববস্থা নিয়ে সরকার ও পরিবারের সদস্যদের অনেকটা দায়হীন। সরকারি কর্মচারীরা পেনশনে গেলে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মৃত্যু পর্যন্ত চিকিৎসা ভাতা ২ হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন। যারা ১০০ শতাংশ পেনশন নিয়ে গেছেন, তাদের অনেকে আজ সব হারিয়ে আজ পথে বসেছেন। তাদের একমাত্র ভরসা, প্রতি মাসে চিকিৎসা ভাতা ২ হাজার ৫০০ টাকা।


 
বর্তমান জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার তাদের ১৫ বছর পর পেনশন পুনঃস্থাপনের এক মহতি যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তাতে কিছু সংখ্যক কর্মচারী হলেও নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছেন। কারণ ৫৯-৬১ বছরের পর আরও ১৫ বছর খুব নগণ্যসংখ্যক মানুষ বেঁচে থাকেন। যার ফলে সরকারের এ প্রশংসনীয় উদ্যোগ অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকির মতো হয়ে পড়েছে। প্রতি বছরই ঔষধের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তো পাচ্ছে। আমার পরিবারের ২ জনই হার্ট, ডায়াবেটিস, প্রেসারসহ একাধিক অপারেশনের রোগী। মাসিক চিকিৎসা ওষুধসহ মোট খরচ লাগে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

বর্তমানে প্রত্যেক ঔষধ কোম্পানী প্রতি পাতা ১০ টাকা ২০ টাকা বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব বিষয়টি। যৌক্তিকতা ভেবে দেখা জরুরি। প্রবীণ পেনশনভোগী শেষ জীবন স্বচ্ছল আনন্দমুখর থাকুক এ বাসনা রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রত্যাশা করার বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব সহকারে ভাববেন বলে আশা করি। জাতির বীরসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে চাকরির বয়স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পিআরএল এ গমনকারীদের সময়কে কর্মকালীন সময় হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অথচ অনান্য কর্মচারীদের চাকরির বয়স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ সুযোগ দেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে কর্মচারীরা উচ্চ আদালতে আইনের দারস্থ হয়। উচ্চ আদালত অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ কর্মচারীদের বীরমুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীর মতো পিআরএলয়ের সময়কে কর্মকালীন সময় গণ্য করার নির্দেশ দেন। এ সুবিধা পিআরএল শুরু ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে। সরকার পক্ষ এ বিষয়ে আপিল করা হয়নি। যথাসময়ে আপিল না করায় স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া যায় সরকারের এ রায়ে কোন আপত্তি নেই। অথচ বর্তমান দীর্ঘ সময় গড়িয়ে গেলেও মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে দীর্ঘসময়ক্ষেপণ করে চলেছে। এমতাবস্থায় রায় বাস্তবায়ন না করার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রবীণ অসহায়দের জন্য অন্য কোন পথ খোলা থাকবেনা। 

সিনিয়র পেনশনভোগীদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে কতিপয় সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
 
* ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের পিআরএল গমনকারীদের সাধারণ কর্মচারীদের আদেশ বীরমুক্তিযোদ্ধাদের মতো কর্মদিন হিসেবে মহামান্য হাইকোর্টের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

* শতভাগ পেনশন গ্রহণকারীদের পেনশন পুনঃস্থাপন ১৫ বছরের স্থলে ১০ বছর করা।

* সিনিয়র পেনশনভোগীদের ভাতা জুনিয়র পেনশনভোগীদের সাথে সমন্বয় করা। চাকরিজীবিদের মতো আর্থিকপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা।

* পেনশন গ্রহণকারীদের চিকিৎসা ভাতা ২ হাজর ৫০০ টাকা ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা।
 
* পেনশন গ্রহণকারীদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে গণ্য করে সরকারি হাসপাতালের কেবিনে অগ্রাধিকার হিসাবে ভাড়া মুক্ত রাখা। বেসরকারি হাসপাতালে ৫০ শতাংশ আর্থিক সুবিধা দেয়া।
 
* রেল, লঞ্চ, বাসসহ বিমানে ৫০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের সুবিধা দেয়া। 

* প্রতি বছর চিত্ত বিনোদনের জন্য ১ মাসের মূলবেতন প্রদান করা । 

সিনিয়র পেনশনভোগী কর্মচারীরা তাদের চাকরিরত অবস্থায় দেশ ও জাতির সেবায় জীবনের শ্রেষ্ঠ অংশ বিনিয়োগ করেছেন। আজ তারা অসহায় অবস্থায় পরিবার বা সমাজের বোঝা হয়ে জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করবেন। এ দৃশ্য কারো কাম্য হতে পারেনা। তারা জীবনের শেষলগ্নে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেঁচে থেকে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবেন, এ কামনায় । 

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030410289764404