করোনা : ঝরেপড়া ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে যুক্ত করতে হবে - দৈনিকশিক্ষা

করোনা : ঝরেপড়া ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে যুক্ত করতে হবে

আবুল বাশার হাওলাদার |

করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে ঝরে পড়তে পারে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী। বিশ্বব্যাপী মহাসংকটময় পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে ১৭ মার্চ থেকে। তখন সবার ধারণা ছিল হয়তোবা কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। দুই মাসেরও বেশি বন্ধ থাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখন খুলবে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে শিক্ষার্থীরা এখন হতাশাগ্রস্ত। অনেক শিক্ষার্থী এই ছুটিকালীন শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে অবকাশযাপন করছে। অনেকে অলস হয়ে পড়েছে, আদৌ পড়াশোনা করছে না। তাদের শৃঙ্খলিত জীবন ভেঙে পড়েছে। বেঁচে থাকার অভিপ্রায়ে নীরবে নিভৃতে অবস্থান করছে সবাই।

যদিও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান করছেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কোনো ডিভাইস নেই এবং নেটওয়ার্কিং সক্ষমতা নেই। তাছাড়া এই অনলাইন পদ্ধতির সাথে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অভ্যস্ত নয়। শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি দিচ্ছে না কয়েক মাস ধরে। যদি বন্ধের এই ঘোষণা আরও দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে টিউশন ফি আরও বকেয়া হবে যা পরিশোধ করা শ্রমজীবী অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব হবে না। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকলে অনেকে চাকরি হারাতে পারেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।সাথে সাথে এসব পরিবারের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

বিশেষ করে শহর এলাকায় ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত অধিকাংশ  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্থসংকটের মুখে একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি কোনো আর্থিক সহায়তা পায় না। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি আছে। তাছাড়া ইংলিশ ভার্শন, ইংলিশ মিডিয়াম,কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন ধরনের ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রফেশনাল কোর্স পাঠদানকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

বৈশ্বিক এ মহাদুর্যোগে অর্থসংকটের জন্য ঝরে পড়তে পারেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। অনেক শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন চাকরি করে পড়াশোনার খরচ নির্বাহ করতেন। তাছাড়া অনেক সচ্ছল পরিবারও অসচ্ছল হয়ে পড়তে পারে। এ প্রতিকুল পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে তাদের পড়ালেখা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। কখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হবে এ অনিশ্চয়তাও ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঝরে পড়ার আশঙ্কা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের। কারণ, এ বয়সের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা সবচেয়ে বেশি থাকে। দীর্ঘদিন পড়ালেখা বন্ধ থাকলে অনভ্যাসে পুনরায় শুরু করা কঠিন হয়ে পড়ে।

চলমান অচলাবস্থা এক নতুন অভিজ্ঞতা। এমন পরিস্থিতি হতে পারে কেউ কখনো কল্পনা করতেও পারেননি। তবে বাংলাদেশের কিছুটা হলেও এমন অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল সারা বছর। আমি যতদূর জানি, তখনও ঝরে পড়েছিল অনেক শিক্ষার্থী। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, ঝরে পড়ার মূল কারণ অর্থনৈতিক সংকট এবং আমরা এগোচ্ছি সেই সংকটের দিকে। এভাবে কতদিন কাটাতে হবে তা জানা নেই কারও। এ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ যাত্রা থামিয়ে দেয়ার প্রয়াসে সুষ্ঠু পরিকল্পনাই হতে পারে একমাত্র সমাধান।

কেন ঝরে পড়বে তার কিছু কারণ ওপরে তুলে ধরেছি। এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিই যে মূল কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঝরেপড়া রোধকল্পে এ মুহূর্তে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। ছুটি দীর্ঘমেয়াদী হলে শতভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন 
টিচিং-লার্নিংয়ের আওতায় আনতে হবে। অনলাইনে সকল পরীক্ষা নিতে হবে। অসচ্ছল শিক্ষক -শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তার আওতায় আনতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল প্রতিষ্ঠানকে সরকারি সহায়তা প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও ইন্টারনেট অ্যাকসেস নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ঝরেপড়া ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

লেখক : আবুল বাশার হাওলাদার, সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন।

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00862717628479