করোনাকালে শিক্ষকদের ভূমিকা - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে শিক্ষকদের ভূমিকা

মো. মাকসুদুর রহমান |

মনে কষ্ট নিয়ে বলতে হচ্ছে গত ১৭ মার্চ শেষবার বিদ্যালয়ে গিয়েছি। এরপর একমাসেরও বেশি ঘরে বন্দি। ব্যাপারটি আসলেই খুব কষ্টদায়ক। যুদ্ধ হলে তা দেখা যায়, চোখের সামনে শত্রু সেনার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জয় বা পরাজয়য়ের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু আমরা এমন এক অবস্থানে আছি এখানে শত্রু পক্ষকে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিরবে ঘরে বসে। প্রতি নিয়ত চিন্তা করছি কখন ভাইরাস আক্রমণ করবে। নিজেকে নিয়ে ততটা চিন্তা না হলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে খুব চিন্তা করতে হয়।

এমন ক্রান্তিকালে মনে আশার আলো জাগে যখন দেখি দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়ে চিন্তা করে কাজ করছেন। বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নিজের ঘুম হারাম করে সব সময় চিন্তা করছেন আমাদের মঙ্গলের কথা। সব সময় আমাদের সতর্ক করছেন। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন দেশের মঙ্গল কামনায়। আমাদের হৃদয়ে আশার আলো জ্বালাচ্ছেন। তাই অসংখ্য ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা গর্বিত শেখ হাসিনার মতো একজন অভিভাবক পাওয়ার জন্য।

এবার আসি যাঁরা মাঠে থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন আমাদের জন্য। হ্যাঁ, আমরা মানুষ জাতি। মহান আল্লাহ আমাদের বুদ্ধি দিয়েছেন ভালো, মন্দ বুঝতে শিখিয়েছেন তাই আমরা মাঝে মাঝে এমন হয়ে যাই যেন আমি সব জানি। আমার থেকে বুদ্ধিমান মানুষ হয়তো আর কেউ নাই। তাই এত আদেশ-নিষেধ, অনুরোধ, লকডাউন সব অমান্য করেই আমাদের বাইরে বের হতে হয়। যে মানুষটির প্রয়োজন সে বের হচ্ছে আবার যার প্রয়োজন নেই তাকেও বের হতে হচ্ছে। আর আমাদের এ ধরনের ভ্রান্ত বুদ্ধিমত্তার কারণে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ অনেক বাহিনীকে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে শুধু আমাদের থামানোর জন্য। তাই কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁদের কথা মনে করছি।

পরম শ্রদ্ধার সাথে হৃদয়স্থল হতে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দেশের অগণিত ডাক্তার, নার্স, সংবাদকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী-কর্মকর্তাদের। যাঁরা কি না মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে আমাদের সেবা করে যাচ্ছেন এবং মুহূর্তের সংবাদ আমাদের জানাচ্ছেন।

এতক্ষণ পর্যন্ত যাঁরা আমার লেখাটি পড়ছেন তাঁরা হয়তো চিন্তা করছেন টেলিভিশন, খবরের কাগজে এই মহান ব্যক্তিদের কথা আমরা শুনছি এবং তাঁদের ধন্যবাদও জানিয়ে আসছি। তাহলে আবার তাঁদের কথা মনে করানো কেন? আসলেই তাই আমরা সামনে থাকা মানুষদের ভীড়ে নেপথ্যে থাকা মানুষগুলোকে ভুলে যাই।

দেশের এই কঠিন অবস্থায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের সকল শিক্ষক। আমারা প্রতিদিন সংসদ টিভিতে দেখছি শিক্ষকর জীবনের নিরাপত্তা ছাড়াই তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যাচ্ছেন ক্লাস নেয়ার জন্য। শুধু সংসদ টিভিতে ক্লাস নিয়েও তাঁরা শান্ত হচ্ছেন না তাঁরা বাসায় বসেও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করে যাচ্ছেন বিভিন্ন ফরম্যাটে ক্লাস। আমার পরিচিত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আমি দেখেছি, তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের জন্য মান উপযোগী ক্লাস তৈরি করছেন। আর এই পুরো কাজটি হচ্ছে শিক্ষকদের নিজ উদ্যোগে।

আমার জানা মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো মাধ্যম হতে এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি যে, যে কোনো উপায়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্লাস তৈরি করতে হবে। তারমানে ব্যাপারটা এই দাঁড়ালো যে, শিক্ষকরাও সাধারণ ছুটিতে থাকবেন। কিন্তু শিক্ষক এমন একজন মহান কারিগর যিনি কি না কোনো নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করেন না। স্থান, কাল, পাত্র চিন্তা না করে যে কোনো জায়গা থেকেই তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। তাঁর কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দেয়া আর তিনি সব প্রতিকূল অবস্থাতেই নিজ কাজে অটল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর আমি এবং আমার সহকর্মীরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ক্লাস তৈরি করি। এই কাজগুলো আমরা শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগেই করছি। আমার শ্রদ্ধাভাজন প্রধান শিক্ষক ব্যাপারটি লক্ষ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি সকল শিক্ষককে উৎসাহ দানের পাশাপাশি নিজেও আমাদের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ক্লাস আপলোড করছেন। চমৎকারভাবে তৈরি করছেন এক এক ভিডিও। আমরা সকল শ্রেণিশিক্ষক প্রতিটি শিক্ষার্থীকে এক এক করে ফোন করে ক্লাসের ব্যাপারে পরামর্শ দিই। যেসব শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নেই তাদের মোবাইল ফোনে পড়া বুঝানোর চেষ্টা করি। মোট কথা আমরা ঘরে বসেও প্রায় ৯০-৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে পাঠদান করছি।

শুধু যে পাঠদান করছি তা নয়। অনুপ্রেরণামূলক কথা বলে তাদের মন ভালো রাখছি। প্রতিনিয়ত তাদের মনোবল বাড়াচ্ছি। এটা শুধু আমাদের বিদ্যালয় নয় দেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকই কোনো না কোনো মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তারপরও কোনো শিক্ষক একটি ধন্যবাদের জন্য বসে নেই। বসে নেই কোনো সিদ্ধান্ত, নির্দেশনা বা আদেশের জন্য। 
টেলিভিশনে যখন সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, ডাক্তার, নার্স, সংবাদকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দেয়া হয় তখন এই কারণে মনে কষ্ট হয় না যে শিক্ষক কথাটি উল্লেখ নাই কেন।

তাহলে বলতে পারেন লেখার প্রথমে মনে কষ্টের কথা বললাম কেন? হ্যাঁ, মনে কষ্ট, কারণ আজকের শিক্ষার্থীরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তারাই একদিন এই দেশ চালাবে। তারা শিক্ষা দিবে অন্য শিক্ষার্থীদের, তাদের মধ্য থেকে কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী হবে। তারা আজ এই ক্রান্তিকালে ঘরে বসেই পড়া সংগ্রহ করছে। তাদের কথা মনে করেই মনে কষ্ট লাগছে। কত কষ্টই না হচ্ছে আমার সোনামনিদের। আর তাদের কল্যাণের কথা ভেবেই আমরা শিক্ষকরা করোনা বা অন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে শুধু ঘরে বসে থাকতে পারি না। আর শুধু ঘরে কেনো যে কোনো জায়গায় থেকেই আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলছি। কোনো স্বার্থ বা অন্য কোনো সুবিধার জন্য নয়। শুধু তাদের দক্ষ করে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায়।
 
আমাদের এই খারাপ সময় চিরকাল থাকবে না। ইনশাল্লাহ আবার আগের মতো সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সকলের কাছে শুধু চাওয়া আমাদের জন্য শুধু দোয়া করবেন। আমরা যেনো এভাবেই নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে পারি। 

লেখক : মো. মাকসুদুর রহমান, সহকারী শিক্ষক, লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কলাবাগান, ঢাকা।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064868927001953