কর্দমাক্ত সড়কে আটকে যাচ্ছে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন - দৈনিকশিক্ষা

কর্দমাক্ত সড়কে আটকে যাচ্ছে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন

বরগুনা প্রতিনিধি |

উপকূলীয় বরগুনা জেলার সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের শত শত শিক্ষার্থীদের জন্য একটিও পাকা সড়ক নেই। এর ফলে কর্দমাক্ত পিচ্ছিল সড়কে কাদায় আটকা পড়ে গেছে তাদের শিক্ষাজীবন। বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় বর্ষা বাড়লেই বেশির ভাগ শিক্ষার্থী থাকছে অনুপস্থিত। লেখাপড়ায় সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে ছয় গ্রামের শত শত শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমনকি সংসদ সদস্যর কাছে ধরনা দিয়েও মেলেনি কোনো প্রতিকার। এসব বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেশ কিছুদিন ধরে ভুক্তভোগী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদের ছবি দিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করে আসছেন সংশ্লিষ্ট এক ইউপি সদস্য। এতেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে বিস্তারিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি লেখা লিখেছেন ওই ইউপি সদস্য মো. হেমায়েত উদ্দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর এ লেখা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই সমালোচনা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকল জনপ্রতিনিধির দায়-দায়িত্ব নিয়েও।

গতকাল মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) এই ছয়টি গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত চাড়াভাঙ্গা, ঝিনাইবাড়িয়া, জেলখানা, হেউলিবুনিয়া, দক্ষিণ জেলখানা ও পশ্চিম জেলখানা গ্রামে প্রায় সাত হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার দুইশত। এসব গ্রামে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা মিলিয়ে আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জেলখানা ফজলুল হক দাখিল মাদ্রাসা, ঝিনাইবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেলখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাড়াভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লিটল স্টার কিন্ডারগার্টেন এবং জেলখানা হাশেম গাজী শিশু সদন। এ ছাড়া হেউলিবুনিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক নামের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও অপর একটি টিকাকেন্দ্র রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখাও রয়েছে। অপরদিকে জেলখানা চৌমুহুনী এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একাধিক বাণিজ্যিক ভবনও।

জেলখানা গ্রামের চৌমুহুনী এলাকার লিটল স্টার কিন্ডারগার্টেনের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহেনী জানায়, প্রায় দুই কিলোমিটার কাদামাটিযুক্ত পিচ্ছিল সড়ক পেরিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে আসতে হয়। অনেক সময়ই তাদের দুই সেট জামাকাপড় নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। কারণ কর্দমাক্ত পথে আসার সময় কাদা পানিতে মেখে যাওয়ায় তাদের জামাকাপড় পাল্টে শ্রেণিকক্ষে বসতে হয়। একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান জানায়, ঘন বর্ষার সময় কাদামাটির রাস্তা ভয়ংকর পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। প্রায়ই পা পিছলে পড়ে গিয়ে তাদের জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।

শত শত শিক্ষার্থী ও কয়েক হাজার গ্রামবাসীর চরম দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে দুঃখ, ক্ষোভ এবং হতাশা নিয়ে জেলখানা গ্রামের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন বলেন, নির্বাচন যখন আসে তখন এমপি, জেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সবাই এসে বলেন, এ এলাকা আমাদের। কিন্তু নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে এখানকার কথা আর কেউ মনে রাখে না। রাস্তাঘাট উন্নয়নের কোনো খবর থাকে না। বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে যেতে হয় দুই সেট জামাকাপড় নিয়ে। কারণ যাওয়ার পথে কাদাপানিতে মেখে যায়। রোগী পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। রোগী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় মাথায় করে। মরে গেলেও তাকে নিয়ে আসতে হয় কাঁধে করেই।

জেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও স্থানীয় লিটল স্টার কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এখানকার গ্রামীণ সড়কগুলো বর্ষায় এতটাই কর্দমাক্ত থাকে যে শিক্ষক শিক্ষার্থী তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষও হেঁটে যেতে পারে না। বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে অনেক শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। দরিদ্র পরিবারের অনেক শিশুরা বিদ্যালয় থেকেই ঝরে পড়ে।

 বালিয়াতলী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হেমায়েত উদ্দিন বলেন, দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইলেও স্থানীয় উন্নয়ন বণ্টন ব্যবস্থায় বৈষম্যের কারণে এ এলাকা চিরবঞ্চিত। এ এলাকা সড়কের দিক দিয়ে বঞ্চিত, বিদ্যুতের দিক দিয়ে বঞ্চিত। বর্ষার সময়ে ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। হঠাৎ কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি না। আমরা খুবই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে আছি। আসলে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে সামান্য যে বরাদ্দ হয়, তা নয়টি ওয়ার্ডে সমানভাবে ভাগ হওয়ায় আমরা যে সামান্য অংশটা পাই তা দিয়ে এই বিশাল এলাকার মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচানো সম্ভব নয় বলে আমি আমাদের এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যনের কাছে গিয়েছি এবং দুঃখ-কষ্টের কথা বলেছি। কিন্তু আজ অবধি কোনো প্রতিকার পাইনি। কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেছি।

বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহনেওয়াজ সেলিম বলেন, ছয়টি গ্রামে একেবারেই যে কোনো পাকা সড়ক নেই, তা ঠিক নয়। এসব গ্রামের বেশ কিছু এলাকায় ইটের হেরিংবন্ড রাস্তা রয়েছে। তবে ১ নং ওয়ার্ডের অবস্থা তুলনামূলকভাবে একটু খারাপ। এ বিষয়ে এরই মধ্যে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন বলেন, সম্প্রতি ওই এলাকায় আমার যাওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে যে খোলা চিঠি লেখা হয়েছে, তাও আমার চোখে পড়েনি। বিশেষ করে বড় ধরনের কোনো প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে জানবেন বলে জানান।
বরগুনার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. দেলোয়ার হেসেন বলেন, তিনি যখন এমপি ছিলেন, তখন বরগুনা চালতাতলী সড়কটি তিনি পাকা করেছেন। ওই এলাকার বেশ কিছু ছোট ছোট সড়কও করেছেন। এখন তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। জেলা পরিষদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার পরও তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন, যাতে ওই এলাকায় পাকা সড়ক করা যায়। 

এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

 

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041558742523193