কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে, শিক্ষকরাও মানুষ - দৈনিকশিক্ষা

কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে, শিক্ষকরাও মানুষ

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রাথমিক শিক্ষকেরা জন্ম থেকে প্রায়-মরি হয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন। শুধু ১৯৮১ সালের আন্দোলনে প্রাথমিক শিক্ষকেরা প্রায়-মরি অবস্থান থেকে সরে এসে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে প্রায়মারি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মহাপরিচালক, ডিডি, ডিপিইও, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ প্রাইমারি শিক্ষক সকলে বিভিন্নভাবে শিশুদের পরিচর্যায় রত। অথচ এ ভাবনা তাদের ও অন্যদের মাঝে দৃশ্যমান নহে। অনেকে মনে করেন তারাও শিশু। প্রাথমিকের মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অফিস যে, সম গুরুত্ব পাওয়ার কথা এ চিন্তা স্বাধীনতা ৫০ বছর পরও দেখা যায় না। আজও দেশের অনেক বড় শিক্ষিতদের বদ্ধমুল ধারণা প্রাথমিকের মন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রী।

 আমার শিশুকালের একটা স্মৃতি আজও মনের দৃশ্যপটে ভেসে বেড়ায়। আমার মরহুম বাবা পরিবারের দাদা,দাদি,চাচা-চাচিসহ বৃহৎ পরিবারের ভরণপোষণ করতেন। আমার বড় চাচা ছিলেন অদ্ভুত বোকা ধরণের। তিনি  আমার বাবাকে সম্মান ও ভয় করতেন। আমার দাদাকে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। একদিন এক প্রতিবেশী চাচাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার বাবা বড় না ভাই বড়? সে উত্তর দিলো আমার ভাই বড়। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। স্বাধীনতার পূর্বে সংগঠনের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান নাম পরিবর্তনের বাংলাদেশ নামকরণ করা হয়। তখন খুব বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, মাধ্যমিকের শিক্ষকদের সংগঠন মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি না লিখে শুধু বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি লিখতেন। যার ফলে অনেক শিক্ষিত লোকজনও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বললে প্রাথমিক শিক্ষকদেরও অন্তর্ভূক্ত বুঝতেন। তখনকার সময়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি আন্দোলন করে বহু আর্থিক সুবিধা আদায় করেছেন। তখন উক্ত অর্থ শিক্ষকরা গ্রহণ করার সময় তাদের মুখে শোনা যেতো অফিসের বড় বাবু টাকা দিয়েছেন। সংগঠনের নেতৃত্বে অবদান, নিজদের সংগ্রাম বা সরকারের আন্তরিকতা সবকিছু যেন বেমালুম ভুলে যেতেন। আজকে প্রাথমিকের বহু সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। তারা যে, ১৯৮০-৮১ সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের ঐতিহাসিক আন্দোলনের ফসল এ বিষয়টি অনেকেরই জানা নেই। তখন গুটিকয়েক থানায় একজন করে এ্যাসিটেন্ট সাব-ইন্সপেক্টর অব স্কুল (এ এস, আই) পদে থানা শিক্ষা অফিসারের অধীনে কর্মকর্তা ছিল। 

৮১ আন্দোলনে বিএনপি সরকার তখন প্রাথমিক শিক্ষকদের ধর্মঘটের কাছে নতি স্বীকার করলেন, তখন সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভাবনা হলো গ্রাম সরকারের পরিবর্তে তৃণমুলে প্রাথমিক শিক্ষা কারা দেখভাল করবেন। সে প্রেক্ষপটে উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্লাষ্টার ভিত্তিক সৃষ্টি করে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অথচ অনেক শিক্ষকও পদোন্নতি পায়। সংশ্লিষ্টরা প্রাইমারিকে শিশুদের তত্ত্বাবধায়ক না ভেবে শিশু ভাবা মোটেই কাম্য নয়।

আজকের শিশুরাও আগামীর কর্ণধার। আরেকদিকে একটু গভীরভাবে উপলব্ধি করলে একটি চিরন্তন সত্য বেরিয়ে আসবে। প্রাথমিক শিক্ষকেরা শিক্ষিত নাগরিকের জনক। ঢাকা শহরের প্রায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা কর্মকর্তাদের ভয়ে অস্থির। মন্ত্রী এলেন, সচিব এলেন এবং ডিজি এলেন এ ভয় দেখিয়ে শিক্ষাঙ্গনে ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। 

প্রাথমিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মনে রাখা প্রয়োজন, সকল সরকারি কর্মচারীর মতো শিক্ষকেরাও সরকারি কর্মচারী। প্রাথমিক শিক্ষকেরাও মানুষ। মানুষের মত বিপদ আপদ সমস্যা তাঁদের মধ্যে বিদ্যমান। প্রাথমিক শিক্ষকেরাও বিধি মোতাবেক শাস্তি পাবে। আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়া কোন শাস্তি বিধিসম্মত না। এমনকি বিচারকরাও আত্মপক্ষ সমর্থন না করতে না দিয়ে শাস্তি দেন না। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত বা ক্ষতি করা শিক্ষকসহ শিক্ষার সকল কর্মকর্তার অপরাধের সমতুল্য। মাসের পর মাস বছরের পর বছর শিক্ষার্থীকে শিক্ষক শূন্য রাখা, আমার উপলব্ধিতে হাজার হাজার টাকা দুর্নীতির চেয়েও মহা অপরাধ। শিক্ষকতা মহান পেশা। শিক্ষকের যেমন শিশুদের প্রতি আচার আচরণ সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। তেমনি কর্মকর্তাদের ভাবনা থাকা উচিত শিক্ষকেরাও মানুষ। সর্বোপরি সকলের সম্মানিত ও পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। কর্মকর্তাদের শিক্ষকদের গাইডার ও বন্ধু হিসেবে সহযোগিতা করা উচিত। পুলিশ হিসেবে নয়। অথচ বর্তমান সময়ে প্রাথমিকের কর্মকর্তাদের সম্পর্কে একটি গল্প মনে পড়ছে।

একদিন একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষককে দেখা করতে বললেন। তার পর পরই আজরাইল এসে শিক্ষকের জান কবজ করতে চাইলেন। শিক্ষক আজরাইলের কাছে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দেখা করার জন্য কিছু সময় প্রার্থনা করলেন। চট্টগ্রামের হাটাজারী উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের মাহলুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিচিৎ বড়ুয়া করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। পরে তারও করোনা পজেটিভ আসে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদা আলমকে অবহিত করলে তিনি দুই দিন পর পর বিদ্যালয়ে আসতে বললেন। এ আদেশের বিষয়ে শিক্ষক মন্তব্য করতে পারবেন না বলে প্রতিনিধিকে জানান। এ মন্তব্য না করার বিষয়ে প্রাথমিকের কর্মকর্তা করোনার চেয়ে বড়। বিষয়টি স্পষ্ট হয়। শিক্ষকের নানা অসুবিধা সত্ত্বেও কর্মকর্তার হুকুম মানার দৃষ্টান্ত বহু নজির দৃশ্যমান। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে ষ্টেডিয়ামসহ নানা স্থানে শিক্ষকের হাজির থেকে কর্তব্য পালন করতে দেখা গেছে। প্রাথমিক শিক্ষকরা সরকারি কর্মচারী, অপরদিকে সকলের শিক্ষাগুরু। এ বোধটুকু সকলের হৃদয়ে জাগ্রত হোক। 

লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ। 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0096259117126465