শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। শিক্ষা জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। শিক্ষাই আলো। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। কাজেই জাতির উন্নতি সাধন করতে হলে শিক্ষার উন্নতি সাধন করতে হবে।
বিষয়টি অনুধাবন করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত দেশের সকল বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করেছেন।
যাতে জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষকবৃন্দ সরকারী চাকুরী পেয়ে নিবেদিত প্রাণ হয়ে শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখতে পারেন। শতভাগ শিশু যাতে স্কুলে যেতে পারে সেজন্য যেসব গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নাই সরকার সেসব গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। ঝড়ে পড়া রোধের জন্য উপবৃত্তি চালু সহ দুপুরে স্কুলেই খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নহে ডিগ্রী পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু করেছেন যাতে সবাই শিক্ষিত হতে পারে। এর সাথে ভাল ফলাফলের জন্য বোর্ড/বিশ্ববিদ্যলয়ের বৃত্তি তো আছেই।
সরকার এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতি উপজেলায় একটি করে হাইস্কুল ও একটি করে কলেজ জাতীয় করণ করার। যা খুবই ভাল উদ্যোগ। যে সব উপজেলায় সরকারী হাইস্কুল ও কলেজ নাই সে সব উপজেলায় একটি করে হাইস্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কলেজ জাতীয়করণের আত্মীকরণ বিধিমালা ২০০০ নিয়ে। সেই সাথে নতুন করে সমস্যা তৈরী করা হয়েছে কলেজ জাতীয়করণের জন্য আত্মীকরণ বিধিমালা ২০১৩ নামে যে খসড়া তৈরী করা হয়েছে যা ২৬/১১/২০১৪ তারিখে একবার এবং ১৫/০১/২০১৫ তারিখে আরেকবার সংশোধন করে অনেক শর্ত জুড়ে দিয়ে। যা মূলত সরকারের ভাল উদ্যোগকে বাধা গ্রস্থ করবে। প্রধান প্রধান শর্ত হচ্ছে১. তিন একর অখন্ড জমি থাকতে হবে কলেজে।
২. সকল পরীক্ষায় পাশের হার ৯০% হতে হবে। ৩. কলেজের রিজার্ভ ফান্ডে ৫০০০০০০/- (পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা থাকতে হবে। ৪. কলেজের শিক্ষকদের চাকুরী হবে নন ক্যডার এবং বদলী অযোগ্য। প্রমোশনের সুযোগ নেই। সেই সাথে আত্মীকরণ হতে হবে ২০০০ বিধি অনুসারে। অর্থাৎ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপক সবাই প্রভাষক হয়ে যাবেন।
দেশের চাষ যোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে বিভিন্ন অকৃষি কাজে ব্যবহার ও নদী ভাঙ্গনের কারনে। সেজন্য কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার এক একর জমি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এক একর জমি থাকলেই বোর্ডের একাডেমীক স্বীকৃতি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্তি পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে জাতীয়করণ করতে হলে কেন তিন একর জমি লাগবে? সকল পরীক্ষায় পাশের হার ৯০% হতে হবে যা সরকারী করণকে কঠিন করে তুলবে। বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের হারকে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হলে সমস্যা কোথায়? তাছাড়া শতকরা ১% কলেজেও পাশের হার ৯০% আছে কিনা সন্দেহ। অধিকাংশ সরকারী কলেজেতো নাইই। কলেজের রিজার্ভ ফান্ডে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা থাকতে হবে।
বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে যদি ২/৩ লক্ষ টাকা থাকলেই হয় সেখানে সরকারীকরণের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা নির্ধারণ কি সরকারীকরণ আটকে দেয়া নয় ? কলেজ সরকারী হলে সব শিক্ষক প্রভাষক তো হবেনই সেই সাথে তারা হবেন নন ক্যাডার। ক্যাডার হলে সমস্যা কোথায়? যাতে জাতীয়করণ কৃত কলেজের শিক্ষকরা বড় পদে যেতে না পারেন সে জন্যই এ ব্যবস্থা। যা সরকারের ভাল উদ্যোগকে বাধাগ্রস্থ করে তুলবে। কলেজ সরকারী হলে শিক্ষকদের চাকুরী বদলী অযোগ্য হবে।
যা তাদের চোখ, হাত, পা বেঁধে পেটানোর শামিল হবে। কলেজ সরকারী করা হলে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ,সহকারী অধ্যাপক সকলকেই প্রভাষক হতে হবে কেন? এটা অমানবিক, অন্যায্য, মানহানিকর, ও সংবিধান পরীপন্থী। এটা কালো আইন। ডিজিটাল যুগে এ কালো আইন চলতে পারে না। কারো অর্জিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা তো কোন আইন হতে পারে না। সরকার দেশের মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করবে।কখনোই অর্জিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না। কিন্তু কলেজ জাতীয়করণে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপকদের অর্জিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন?
লেখক : মো. আব্দুল লতিফ, অধ্যক্ষ, ডাঃ জহুরুল কামাল ডিগ্রী (অনার্স) কলেজ, দুলাই,পাবনা।